রোজকার শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

দ্বৈত স্রোতের বাজার: দর বাড়ল ১৯৬, পড়ল ১২৮ কোম্পানি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ০০:২৬:২৩
দ্বৈত স্রোতের বাজার: দর বাড়ল ১৯৬, পড়ল ১২৮ কোম্পানি

সপ্তাহের শেষ দিন, ১০ জুলাই একটি মিশ্র বাজার-চিত্রের সাক্ষী হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE)। যদিও বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, তবুও দরপতনের সংখ্যাও উপেক্ষণীয় নয়। এদিন ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়, যার মধ্যে ১৯৬টির দর বৃদ্ধি পেয়েছে, ১২৮টির দর হ্রাস পেয়েছে এবং ৭০টির দর অপরিবর্তিত ছিল। অর্থাৎ বাজারে এক ধরনের দ্বৈত প্রবণতা বিরাজ করলেও তারল্য ও লেনদেনের প্রবাহ ছিল শক্তিশালী, যা প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা নির্দেশ করে।

‘A’ ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব

‘A’ ক্যাটাগরির শেয়ারের মধ্যে ১০১টির দর বেড়েছে, যেখানে ৭৬টির দর কমেছে এবং ৩৭টি অপরিবর্তিত ছিল। মোট ২১৪টি ‘A’ ক্যাটাগরি শেয়ারের মধ্যে এই সংখ্যাগুলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র মনোভাব প্রতিফলিত করে। একদিকে কিছু বিনিয়োগকারী স্থিতিশীল কোম্পানিগুলোতে আস্থা রেখে লং-টার্ম ধরে রেখেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ লাভ তুলে নিচ্ছেন।

‘B’ ও ‘Z’ ক্যাটাগরিতে তীব্র প্রতিযোগিতা

‘B’ ক্যাটাগরির মধ্যে ৩৭টি কোম্পানির দর বেড়েছে এবং ৩৬টির দর কমেছে, যা প্রায় সমানুপাতিক শক্তির লড়াই প্রকাশ করে। এটি ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের দ্রুত লাভ প্রত্যাশা এবং ঘন ঘন ট্রেডিং মনোভাবের প্রতিচ্ছবি।

অন্যদিকে, ‘Z’ ক্যাটাগরিতে ৫৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে এবং মাত্র ১৬টির দর কমেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এই ক্যাটাগরিতে এমন ইতিবাচকতা স্পেকুলেটিভ ট্রেডিং এবং স্বল্পমেয়াদি মুনাফা প্রত্যাশার ফলাফল বলে ব্যাখ্যা করা যায়।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে স্থিতিশীল প্রবণতা

মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে মোট ৩৬টি সিকিউরিটি লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ১১টির দর বেড়েছে, ৮টির কমেছে এবং ১৭টি অপরিবর্তিত ছিল। এ খাতে এখনও অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল অবস্থান নিচ্ছেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে দরবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়েছে।

করপোরেট ও সরকারি বন্ড

করপোরেট বন্ডে আজ মাত্র ২টি সিকিউরিটির লেনদেন হয়েছে, যার একটির দর বেড়েছে এবং অপরটির কমেছে। সরকারি সিকিউরিটি বা ‘G-Sec’ মার্কেট ছিল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। এই সেগমেন্টগুলোর স্থবিরতা বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের সীমাবদ্ধতা এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার অপ্রচলনকেই তুলে ধরে।

বাজারে লেনদেনের গতি ও মূলধনের শক্ত ভিত্তি

এদিন মোট ট্রেড হয়েছে ২,০৮,৩৫৬টি এবং হাতবদল হয়েছে প্রায় ২৭.৩৩ কোটি শেয়ার। মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭৯০ কোটি ২২ লাখ টাকায়। যদিও গতকালের তুলনায় সামান্য কম, তবুও এটি একটি সুস্থ এবং প্রাণবন্ত বাজারের নিদর্শন।

মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬,৭৬,৭৩৯ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ইক্যুইটি সেগমেন্টে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৩.৯ লক্ষ কোটি টাকা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে প্রায় ২৯,৬০৪ কোটি টাকা এবং ডেট সিকিউরিটিজে ৩৩.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা।

ব্লক ট্রেডে জোরালো লেনদেন: AL-HAJTEX ও NTLTUBES শীর্ষে

এদিন ব্লক মার্কেটে মোট ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার ব্লক ট্রানজ্যাকশনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে, যার মাধ্যমে ৩৫.০৭ লাখ শেয়ার হাতবদল হয় এবং লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪৫.৫ কোটি টাকা।

শীর্ষ ৫ ব্লক ট্রেড:

  • AL-HAJTEX – ১৩টি ব্লকে ৩.৪৭ লাখ শেয়ার, মোট মূল্য ৪২.৯৬ কোটি টাকা
  • NTLTUBES – ১.৩৫ লাখ শেয়ার, মূল্য ১১.৬৪ কোটি টাকা
  • SEMLLECMF – ৮ লাখ শেয়ার, মূল্য ৯.৬ কোটি টাকা
  • FINEFOODS – ৪.৬০ হাজার শেয়ার, ১০.৭ কোটি টাকা
  • BRACBANK – ১.৩৫ লাখ শেয়ার, ৭.৮৩ কোটি টাকা

ব্লক ট্রেড সেগমেন্টের এই প্রবাহ প্রমাণ করে যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখনও নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বড় বিনিয়োগ করছেন।

মিশ্র কিন্তু স্থিতিশীল

২০২৫ সালের ১০ জুলাইয়ের বাজারচিত্র ছিল এক মিশ্র প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতার প্রতিচ্ছবি। দরবৃদ্ধি ও দরপতনের ভারসাম্য, শক্তিশালী লেনদেন প্রবাহ এবং বাজার মূলধনের ধারাবাহিক বৃদ্ধি মিলিয়ে এটি ছিল একটি সুসংহত ও পরিণত বাজার কার্যদিবস। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক বেশি সচেতন, কৌশলী এবং ধৈর্যশীল। সামনের দিনগুলোতে নির্দিষ্ট কোম্পানিভিত্তিক কৌশল ও খাতভিত্তিক পুনঃমূল্যায়ন বাজারকে আরও গতিশীল করে তুলতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ