শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ: মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড 

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১১:৩০:২৮
শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ: মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড 

দুই দিনব্যাপী সংশোধনধর্মী প্রবণতার পর গতকাল ৯ জুলাই, বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আবারও তার শক্তি ও স্থিতিশীলতা প্রমাণ করেছে। এদিন বাজারে এক সুস্পষ্ট বুলিশ ধারা পরিলক্ষিত হয়, যেখানে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ২৭৩টির দর বেড়েছেযা মোট লেনদেনের ৬৮.৭৭ শতাংশ। মাত্র ৭৮টি কোম্পানির শেয়ার দরপতনের মুখ দেখেছে এবং ৪৬টি শেয়ারের দর অপরিবর্তিত ছিল। এত বেশি সংখ্যক কোম্পানির দরবৃদ্ধি বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রত্যাবর্তনের জোরালো ইঙ্গিত দেয়।

A ক্যাটাগরিতে শক্তিশালী ঘুরে দাঁড়ানো

‘A’ ক্যাটাগরির ২১৭টি কোম্পানির মধ্যে ১৪৭টির শেয়ারের দর বেড়েছে, যা এই শক্তিশালী সেগমেন্টে বিনিয়োগকারীদের উচ্চ আস্থা এবং ক্রয়চাপের প্রতিফলন। ‘A’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো সাধারণত মুনাফাবণ্টনকারী ও নিয়মিত হিসাব প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায়, বাজারের গতিপথে এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ৪৪টি কোম্পানির দর কমেছে এবং ২৬টি অপরিবর্তিত থেকেছে, যা সমগ্র বাজার প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

‘B’ ও ‘Z’ ক্যাটাগরিতে ইতিবাচক গতি

‘B’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে ৫৯টির শেয়ারের দর বেড়েছে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ার নির্দেশ করে। অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ‘Z’ ক্যাটাগরিতেও উল্লেখযোগ্যভাবে ৬৭টি কোম্পানির দর বেড়েছে। এটি হয়তো লভ্যাংশহীন ও অনিয়মিত কোম্পানিগুলোতে ক্ষণস্থায়ী ট্রেডিং চক্র বা ‘স্পেকুলেটিভ বাইং’ বেড়ে যাওয়ার প্রতিফলন।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৪টির দর বেড়েছে, ৭টির কমেছে এবং ১৫টি অপরিবর্তিত ছিল। এটি বিনিয়োগকারীদের মিশ্র মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। যদিও এই খাতটি তুলনামূলকভাবে স্থির ছিল, তবে বাজারের সামগ্রিক ইতিবাচক ধারা এ খাতকেও ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।

সরকারি ও কর্পোরেট বন্ডে স্থবিরতা

কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি সিকিউরিটিজ (G-Sec) মার্কেট ছিল আজও নিস্প্রভ। মাত্র একটি কর্পোরেট বন্ড ট্রেড হয়েছে এবং দুটি সরকারি সিকিউরিটি ট্রেডে অংশ নিয়েছে, যেখানে কোনো মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এই সেক্টর এখনো কাঙ্ক্ষিত তারল্য বা বিনিয়োগ আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারেনি।

বিপুল লেনদেন ও বাজার মূলধনে উল্লম্ফ

বুধবারের লেনদেন ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত। মোট ২০৮,০৯৩টি ট্রেডে ৩০.৯২ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬৯০৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের দিনের তুলনায় এটি একটি বড় লাফ, যা বাজারের তারল্য এবং বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তার পরিচায়ক।

বাজার মূলধনে নতুন উচ্চতা

বাজার মূলধনও যথেষ্ট হারে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭২,৬৯৬ কোটি টাকা, যেখানে ইকুইটি খাতে ৩৩.৭৫ লক্ষ কোটি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ২৯,৫০৯ কোটি এবং ডেট সিকিউরিটিজে ৩৩.২১ লক্ষ কোটি টাকার মূলধন দাঁড়িয়েছে। বাজারে এভাবে সমন্বিত মূলধন বৃদ্ধির ঘটনা অর্থনীতির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার কাঠামোর প্রতিফলন।

ব্লক ট্রেডে ১৫০ কোটির রেকর্ড, কেন্দ্রবিন্দুতে LOVELLO MIDLANDBNK

ব্লক ট্রেডিং সেগমেন্টেও আজ উল্লেখযোগ্য গতিশীলতা দেখা গেছে। ৩২টি কোম্পানির মোট ৩৬.৬ লাখ শেয়ার ব্লক ট্রেডের মাধ্যমে হাতবদল হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৫০.৬১ কোটি টাকা।

প্রধান আলোচিত কোম্পানিগুলো:

  • LOVELLO: ৭টি ব্লকে ৩.২৬ লাখ শেয়ারের লেনদেন, মূল্য: ৩০.১১ কোটি টাকা
  • MIDLANDBNK: সর্বোচ্চ ১২টি ব্লকে ১৮.৮২ লাখ শেয়ার, মোট মূল্য: ৫১.৭৭ কোটি টাকা
  • PREMIERCEM: ১০টি ট্রেডে ৪.০৪ লাখ শেয়ার, ২১.২৬ কোটি টাকার লেনদেন
  • FINEFOODS এবং BRACBANK-এও ছিল উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ

এই ব্লক লেনদেনগুলো প্রমাণ করে যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লক্ষ্যভিত্তিক পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাসে ব্যস্ত এবং নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে তারা দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।

ইতিবাচক বার্তা ও বিনিয়োগচক্রের শক্ত প্রতিচ্ছবি

আজকের বাজারচিত্র স্পষ্ট করে যে, কিছুদিনের সংশোধনের পর আবারও বিনিয়োগকারীরা দৃঢ়ভাবে বাজারে ফিরছেন। মূল্যবৃদ্ধির সংখ্যা, লেনদেনের পরিমাণ এবং ব্লক ট্রেডের গতি সবকিছুই একটি সুপরিকল্পিত ও পরিণত বাজার মনস্তত্ত্বের ইঙ্গিত দেয়। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজার ভবিষ্যতে আরও স্থিতিশীল, বিনিয়োগবান্ধব এবং আস্থাশীল হয়ে উঠবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ