সিরিয়া-ইসরাইলের গোপন বৈঠক

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৪:৩৯:২৬
সিরিয়া-ইসরাইলের গোপন বৈঠক

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভূরাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা ও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের মধ্যে আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত একটি গোপন বৈঠককে কেন্দ্র করে। যদিও সিরীয় সরকার এই বৈঠকের খবর সরাসরি অস্বীকার করেছে, প্রেসিডেন্সির ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, অন্তত একটি বৈঠকে আল-শারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।

রোববার (১৩ জুলাই) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় ঘরানার সামা টিভির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে বহুমাত্রিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল— ইরানি প্রভাব হ্রাস, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার, লেবাননভিত্তিক ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ এবং গাজা থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন।

এই আলোচনায় সিরিয়ার পক্ষে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানী ও নিরাপত্তা সংলাপ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ আল-দালাতি। অপরদিকে, ইসরাইলের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের একজন বিশেষ দূত এবং উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বৈঠকের স্থান হিসেবে আজারবাইজানকে বেছে নেওয়ার পেছনে কৌশলগত ও রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যৌথভাবে এই ভেন্যু নির্ধারণ করেছে, যাতে ইরান ও এর মিত্রদের প্রতি একটি নিরপেক্ষ অথচ শক্ত বার্তা দেওয়া যায়। জানা গেছে, আল-শারা তার আজারবাইজান সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আড়ালেই ইসরাইলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা গোপন বৈঠকে অংশ নেন।

তবে সিরিয়ার সরকারি সূত্র এখনো দাবি করছে, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আল-শারা আলোচনায় সরাসরি অংশ নেননি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগে কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আবুধাবিতে আল-শারার সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু পরে প্রকাশিত তথ্য বলছে, সেই সময় আল-শারা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, ফলে সেই প্রতিবেদন বিতর্কিত হয়ে পড়ে।

এই বৈঠকগুলোর আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, দামাস্কাসে ইসরাইল একটি সমন্বয় অফিস খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও এটি কোনো কূটনৈতিক স্বীকৃতির ঘোষণা নয়, কিন্তু দীর্ঘদিন বৈরী সম্পর্কের মধ্যেও এ ধরনের আলোচনা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার রাজনৈতিক কাঠামোতে যেভাবে পরিবর্তন এসেছে, তাতে আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়া আন্তর্জাতিক কৌশল পুনঃবিন্যাস করতে চাইছে। বিশেষ করে ইরানের প্রভাব কমিয়ে সৌদি-ইসরাইল-কেন্দ্রিক একটি নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঢুকতে সিরিয়া আগ্রহ দেখাচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও এখনো বৈঠকের সব তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি, এবং কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করতে রাজি হয়নি, তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বৈঠকগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান শত্রু-মিত্র সম্পর্কের মধ্যে একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইল আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তখন সিরিয়ার এই ‘নীরব সংলাপ’ ভবিষ্যতের এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিতবাহী।

ইরান-পন্থী জোটের একাংশ ইতিমধ্যেই এই খবরের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যদিও সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো এখনো নিশ্চুপ।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ