জানুন অতিরিক্ত ঘাম কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ০৯:৫৫:১০
জানুন অতিরিক্ত ঘাম কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়

গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম অনেকের জীবনে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই সমস্যাটি শুধু আবহাওয়ার কারণে নয়, বরং শরীরের ভেতরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক প্রক্রিয়ার ফলেও হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis) বলা হয়। ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলেও যখন তা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হতে শুরু করে, তখন তা দৈনন্দিন জীবন, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আশার কথা হলো, কিছু ঘরোয়া উপায় এবং চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

পর্যাপ্ত পানি পান: সহজ কিন্তু উপেক্ষিত সমাধান

ঘাম কমানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ একটি উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান। শরীর যখন পানিশূন্য হয়, তখন ঘামগ্রন্থিগুলো আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঘাম কমে আসে।

অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট: আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়ক হাতিয়ার

অধিক ঘামপ্রবণ অংশ যেমন বগল, হাত বা পায়ের তালুতে অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করা কার্যকরী হতে পারে। এগুলোর মধ্যে এমন উপাদান থাকে যা ঘামগ্রন্থিকে সাময়িকভাবে ব্লক করে দেয়। বাজারে বিভিন্ন মেডিকেল গ্রেড অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট লোশন ও স্প্রে পাওয়া যায়, যেগুলো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো: ঘামের অদৃশ্য ট্রিগার

অনেক সময় অতিরিক্ত ঘামের মূল কারণ শারীরিক নয়, বরং মানসিক। উদ্বেগ, স্ট্রেস বা অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরের ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে, যার ফলে ঘাম বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ধ্যান, যোগব্যায়াম, শ্বাসনিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম কিংবা নিয়মিত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ঘামের উৎসেই নিয়ন্ত্রণ

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতেও রয়েছে ঘাম নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। মশলাদার খাবার, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, ও অ্যালকোহল শরীরের উত্তাপ বাড়িয়ে ঘামগ্রন্থিকে উত্তেজিত করে। এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চললে ঘাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পরিবর্তে বেশি পরিমাণে শাকসবজি, জলযুক্ত ফলমূল ও হালকা প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

ঢিলেঢালা ও হালকা পোশাক: ঘামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি

গরমের সময় টাইট ও সিনথেটিক কাপড় শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে এবং ঘামের প্রবণতা বাড়ায়। তাই ঢিলেঢালা, সুতির ও শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য পোশাক পরার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর স্বস্তিতে থাকে এবং ঘাম কম হয়।

ঠান্ডা পানিতে গোসল: তাৎক্ষণিক স্বস্তির উপায়

প্রতিদিন অন্তত একবার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ঘামগ্রন্থির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। বিশেষ করে কর্মঘণ্টার আগে এই অভ্যাস ঘাম কমানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও প্রদান করে।

চিকিৎসকের সহায়তা: যখন ঘরোয়া উপায় যথেষ্ট নয়

যদি ঘরোয়া কোনো উপায়েই অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে এটি হাইপারহাইড্রোসিস হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই ডার্মাটোলজিস্ট বা নিউরোলজিস্টরা বোটক্স (Botulinum Toxin) ইনজেকশন, অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ কিংবা আয়নোফোরেসিস নামক চিকিৎসা পদ্ধতির পরামর্শ দেন, যা ঘামগ্রন্থির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

অতিরিক্ত ঘাম শুধু শারীরিক অস্বস্তিই নয়, অনেক সময় মানসিক সংকোচ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সময়োচিত ব্যবস্থা ও সচেতনতার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঘরোয়া পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা-পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে ঘামজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া আর অসম্ভব নয়। সর্বোপরি, সুস্থ জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা এই দু’টিই হতে পারে ঘাম সমস্যার টেকসই সমাধান।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ