কুয়েট সংঘর্ষে মাহবুবের উপস্থিতি: স্ত্রীর মুখে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৮:২৫:৩২
কুয়েট সংঘর্ষে মাহবুবের উপস্থিতি: স্ত্রীর মুখে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

খুলনার দৌলতপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন স্থানীয় যুবদলের সাবেক নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমান। শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন তিনি। দুর্বৃত্তরা প্রথমে তাকে গুলি করে এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

মোল্লা মাহবুবুর রহমান দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নাম আলোচনায় আসে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার রাম দা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি ভাইরাল হলে দলের পক্ষ থেকে তাকে সেদিন রাতেই বহিষ্কার করা হয়। এরপরও তিনি বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে থাকেন।

মাহবুবের স্ত্রী এরিনা সুলতানা তার স্বামীর মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের জানান, কুয়েটের ঘটনায় মাহবুব স্বেচ্ছায় যায়নি, বরং দলের নির্দেশেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, কুয়েট ছাড়াও দৌলতপুর থানা বিএনপির একটি সুধী সমাবেশকে কেন্দ্র করেও মাহবুব বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি পেয়ে আসছিলেন। এমনকি একটি মামলায় আসামি না করার জন্য তার বাড়িতে এসে পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

একই দাবি করেছেন মাহবুবের শ্বশুর আজাদ বেগ বাবু, যিনি মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক নেতা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মাহবুব দলের প্রতি নিবেদিত ছিলেন এবং সবসময় রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। কুয়েটের ঘটনার দায় নিয়ে তাকে বহিষ্কার করা হলেও পরিবার মনে করে, মাহবুব দলের সিদ্ধান্ত মেনেই সেখানে গিয়েছিলেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় যুবদল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে মাহবুবের সঙ্গে সব ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

ঘটনার দিন মাহবুব বাড়ির সামনে নিজের প্রাইভেটকার পরিষ্কার করছিলেন। ঠিক তখনই তিনজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এসে তার ওপর গুলি চালায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আতঙ্কে কাঁপছিলেন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী জানান, নিহত মাহবুব মাদক সংশ্লিষ্ট নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। এলাকার একটি প্রতিপক্ষ মাদক চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার দ্বন্দ্ব চলছিল, যা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।

মাহবুবের রাজনৈতিক অতীত, দলীয় বহিষ্কার, মাদক সংশ্লিষ্টতা ও পারিবারিক দাবি—সব মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাটি একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ