তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিএনপির বিকল্প রূপরেখা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৯:৫৫:৪৪
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিএনপির বিকল্প রূপরেখা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন নতুন কিছু বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে সামনে এসেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব প্রস্তাব গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। বিএনপি মনে করছে, বিচার বিভাগের বাইরে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো গঠনের সুযোগ রয়েছে এবং সেটি হলে রাজনৈতিক বিতর্ক অনেকটাই প্রশমিত হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আগের মতো বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরতা না রেখে, নতুন কিছু বাস্তবসম্মত বিকল্প ভাবনা সামনে আনা যেতে পারে। তিনি জানান, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত না করাই ভালো হবে। তবে যদি কোনোভাবেই সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায়, তাহলে সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির ওপর দায়িত্ব অর্পণের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে সেই ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, সংসদ মেয়াদপূর্তির ৩০ দিনের আগে রাষ্ট্রপতি যদি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন প্রধান উপদেষ্টাকে মনোনীত করেন, তাহলে তা কার্যকর হতে পারে। তাতে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ সুগম হবে।

বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, বিকল্প পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যার নেতৃত্ব দেবেন স্পিকার অথবা রাষ্ট্রপতি। যদি তৃতীয় কোনো বড় দল সংসদে থাকে, তাহলে তাদের একজন প্রতিনিধিও ওই কমিটিতে যুক্ত থাকবেন। তবে রাষ্ট্রপতি যদি সভাপতিত্ব করেন, তাহলে তিনি কেবল শুনবেন, কোনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন না। স্পিকার সভাপতিত্ব করলে তার ভোটাধিকার থাকবে।

এই প্রস্তাবনাগুলোর মধ্য দিয়ে বিএনপি মূলত চায়, বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রেখে একটি গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো তৈরি হোক, যাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হয়। বিএনপির মতে, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিগত অভিজ্ঞতা নানা প্রশ্ন তুলেছে, তাই বিকল্প পদ্ধতি নিয়েই ভাবনার সময় এসেছে।

জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়েও আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি। সালাহউদ্দিন জানান, সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে থাকা ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দগুচ্ছের অপব্যবহারের সুযোগ থেকে সরে এসে সেখানে আরও স্পষ্টভাবে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা’, ‘সার্বভৌমত্ব’, ‘অখণ্ডতার প্রতি হুমকি’ কিংবা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ ও ‘মহামারি’র মতো শব্দ ব্যবহার করা উচিত। এতে করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অজুহাত বানিয়ে অনৈতিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি করার সুযোগ কমে যাবে।

এছাড়া, জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নয়, বরং পুরো মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কথা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলেও মত দিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা উপনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

সব মিলিয়ে, বিএনপির পক্ষ থেকে বিচার বিভাগ ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নতুন মডেল ও জরুরি অবস্থার সংবিধানগত কাঠামোতে পরিবর্তনের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ