৭ লাখ টাকার ভিডিও ভাইরাল: ইমামুর রশিদের ব্যাখ্যায় নতুন বিতর্ক

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ০৯:৩৪:২৮
৭ লাখ টাকার ভিডিও ভাইরাল: ইমামুর রশিদের ব্যাখ্যায় নতুন বিতর্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য মো. ইমামুর রশিদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা, তহবিল ব্যবস্থাপনা ও নারী উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি স্থানে এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে তিনি সাত লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। এই ঘটনার মেটাডেটা বলছে, এটি গত ১৪ মে ২০২৫, রাত ৯টা ২১ মিনিটে ধারণ করা হয়।

ভিডিওটি প্রথম ফেসবুকে প্রকাশ করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং শিক্ষাবিদ ড. এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি ভিডিওর সঙ্গে লিখেছেন, "এনসিপি নেতা ইমামুর রশিদ একজন নারীর কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকা নিচ্ছেন। কথোপকথনে ইঙ্গিত রয়েছে, আরও ১০ লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু ওই নারী দিয়েছেন ৭ লাখ।"

ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা দাবি করেছেন, তিনি এনসিপির বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ পাওয়ার আশায় সময় ধরে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো কাজ বা প্রতিদান তিনি পাননি। তিনি ভিডিওটি গোপনে ধারণ করে পরে তা ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ইমামুর রশিদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, বিষয়টি একেবারেই ‘অপপ্রচারমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তার ভাষায়, “যে নারী ভিডিওতে রয়েছেন, তিনি নিজ থেকেই আমাদের দলীয় তহবিলে ডোনেশন দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনকেও আগে অনুদান দিয়েছিলেন, যা আমরা পরবর্তীতে যাচাই করেছি।”

ইমামুর রশিদের বক্তব্য অনুযায়ী, পার্টির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তিনি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করেছেন। ডোনেশনের টাকা গ্রহণের পর তিনি তা পার্টির কোষাধ্যক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। “আমি পার্টির একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র, এর বাইরে কিছু নয়,” — বলেন তিনি।

এনসিপি নেতা ইমামুর রশিদের দাবি, ওই নারী পরবর্তীতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ‘ব্যক্তিগত অনৈতিক সুবিধা’ দাবি করেছিলেন। তা না মেটানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে পূর্বে ধারণ করা ভিডিওটি ছড়িয়ে দেন। তার ভাষায়, “এখন আমরা বুঝতে পারছি তার উদ্দেশ্য শুরু থেকেই অসৎ ছিল। কোনো গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করতেই তিনি আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, “যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন আমি কোনো অনৈতিক কাজ করেছি, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় শাস্তি মাথা পেতে নেবো। আমার সর্বোচ্চ যোগ্যতা আমার সততা।”

এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে এটি কি শুধুই একটি দলীয় ফান্ড কালেকশন, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে প্রভাব বিস্তারের প্রতিশ্রুতি, লেনদেনের অনৈতিকতা ও রাজনৈতিক প্রতারণার জটিল জাল?বিষয়টি আরও ঘনীভূত হয় যখন এনসিপি এই ঘটনার জন্য বিএনপি-সম্পর্কিত একটি প্রোফাইলকে দায়ী করে। অনেকেই বলছেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ হওয়া উচিত, যাতে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হয় এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারীরা কীভাবে অর্থনৈতিক ও মানসিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এই ঘটনাটি সেই বড় প্রশ্নটি আবার সামনে এনেছে। ভিডিওটি যদি সত্য হয়, তাহলে তা উদ্বেগজনক; আবার যদি এটি মিথ্যাচার হয়, তাহলেও নারী ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নিয়ে আরও গভীর উদ্বেগের কারণ তৈরি করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ