তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১০:৫৬:২৩
তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে

তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নকে ঘিরে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনার মাঠপর্যায়ের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরির প্রস্তুতি। আগামী ১৭ জুলাই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে পাঁচটি মূল বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী ধাপে যাওয়া হবে।”

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, এই প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশ ও চীন দুই দেশের মধ্যকার সমন্বিত একটি উদ্যোগ। এ কারণে পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপে দুই দেশের সম্মতি প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ এবং পররাষ্ট্র সংস্থার সমন্বয়ে বিষয়টি ধাপে ধাপে এগোচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই কয় মাসে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি করেছি। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পর সরকারিভাবে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এরপর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ERD)-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরিত হবে। তারা চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে একমত হলে শুরু হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।”

তিস্তা নদীর ভূমি ব্যবস্থাপনা, নদীশাসন, কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, নদীতীরবর্তী জনজীবনের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির পুনর্গঠন—এই পাঁচটি মৌলিক দিককে ঘিরেই মহাপরিকল্পনার মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন সংস্থা "পাওয়ারচায়না"-এর কারিগরি সহায়তায় প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা উত্তরাঞ্চলের জন্য এক যুগান্তকারী উন্নয়ন-পরিকল্পনায় রূপ নিতে যাচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “তিস্তা কেবল একটি নদী নয়, এটি একটি জীবনরেখা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শুধু পানি ব্যবস্থাপনাই নয়, উন্নয়ন, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনমানেও অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে।”

এরপর উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সড়কপথে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এসময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মো. নায়িরুজ্জামান, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এই সফরকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট মহলে একটি নতুন আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মাঝে থাকা তিস্তা নদী উন্নয়ন পরিকল্পনা অবশেষে বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে—এমন বার্তা স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আশার আলো ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কেবল একটি নদী পুনরুদ্ধার নয়, বরং এটি উত্তরাঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনীতি, পরিবেশ ও জলবায়ু স্থিতিশীলতার জন্য একটি নীতিনির্ধারণী বাঁকবদলের সূচনা হতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ