ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে বিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১০:৫৫:৩৬
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে বিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধ নিয়ে সম্ভাব্য ১০টি কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এখনই কোনো পদক্ষেপে ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা খুবই কম।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস আলোচনার টেবিলে যে ১০টি বিকল্প রেখেছেন, তার মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতা চুক্তি পুরোপুরি স্থগিত করা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সীমিত করা, নির্দিষ্ট ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি এবং ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাতিল করা।

তবে গাজায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইইউ সদস্য দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে পারেনি। ইউরোপের ভেতরেই কেউ ইসরায়েলের পক্ষে, কেউ ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল—এই বিভক্তিই মূল বাধা।

কায়া কাল্লাস বলেন, “আমার দায়িত্ব ছিল সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা। এখন সিদ্ধান্ত নেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো—তারা কোন পথে এগোবে।”

ইসরায়েল যদি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইইউ আলোচনায় নমনীয়তা দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার-এর সঙ্গে বৈঠকে কায়া কাল্লাস গাজায় আরও প্রবেশপথ খোলা ও খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছান।

সোমবার কাল্লাস বলেন, “আমরা কিছু ভালো লক্ষণ দেখছি—আরও ট্রাক প্রবেশ করছে। তবে আমরা জানি, এটা যথেষ্ট নয়। চুক্তির বাস্তবায়নে আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে।”

একইদিন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ও আশপাশের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, “গাজা এখনো মানবিকভাবে ভয়াবহ অবস্থায় আছে।”

এদিকে বৈঠকে অংশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার বলেন, “আমি নিশ্চিত, ইইউ রাষ্ট্রগুলো এসব পদক্ষেপের কোনোটিই নেবে না। এসবের কোনো ন্যায্যতা নেই।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইইউ’র পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্তই একটি বড় রাজনৈতিক অগ্রগতি। মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার পরই ইইউ প্রথমবারের মতো বিষয়টি খোলাখুলি আলোচনা করছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২১৯ জনকে হত্যা করে—এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। সেদিন অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৪৯ জন বন্দি, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে মৃত বলে জানাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

অন্যদিকে, হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৮,৩৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই সংখ্যাগুলোকে ‘বিশ্বস্ত’ হিসেবে বিবেচনা করছে।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক


মানবিক সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক করতে রাফাহ সীমান্ত খুলে দিল ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১১:২২:৪১
মানবিক সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক করতে রাফাহ সীমান্ত খুলে দিল ইসরায়েল
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার সঙ্গে মিশরের রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে স্থগিত থাকা মানবিক সহায়তা প্রবাহও স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম কান (Kan)।

এর আগে, ইসরায়েল সরকার আজ বুধবার থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা সীমিত করা এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখাসহ নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পরিকল্পনা করেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসব সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে বলে টাইমস অফ ইসরায়েলকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রাতে হামাস আরও চারজন জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে। এই নিয়ে হামাস মোট ২৮ জন নিহত জিম্মির মধ্যে ৮ জনের মরদেহ হস্তান্তর করল। ফেরত পাওয়া মরদেহগুলো ফরেনসিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে, যেখানে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। হামাস এখন পর্যন্ত ফেরত দেওয়া এই চারজনের পরিচয় প্রকাশ করেনি।

মধ্যপ্রাচ্যের এক কূটনীতিক এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, আজকের মধ্যেই হামাস আরও চারজন জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।


যুদ্ধবিরতি ঝুঁকিতে: স্বভাব বদলায়নি ইসরায়েলের

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২২:০৪:৫২
যুদ্ধবিরতি ঝুঁকিতে: স্বভাব বদলায়নি ইসরায়েলের
গাজায় ইসরায়েলের হামলা-অবরোধ অব্যাহত/ ফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে গাজায় আবারও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে। এই অব্যাহত হামলার ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইসরায়েল আদৌ এই শান্তিচুক্তি মানবে কি না।

বাড়ি ফেরা ফিলিস্তিনিরা লক্ষ্যবস্তু

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, উত্তর গাজার গাজা সিটি এবং দক্ষিণের খান ইউনিসে নিজেদের পুরোনো বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছিলেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া খান ইউনিসে ইসরায়েলের চালানো একটি ড্রোন হামলায়ও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন।

মানবতার চরম বিপর্যয়

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৪টি মরদেহ আনা হয়েছে এবং আহত অবস্থায় এসেছেন আরও ২৯ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৩৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এবং বহু মানুষ এখনো চাপা পড়ে আছেন।

নিহতের সংখ্যা: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৯১৩ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৭০ হাজার ১৩৪ জন ফিলিস্তিনি।

ত্রাণ অবরোধ: ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েল এখনও মানবিক সহায়তা সরঞ্জাম গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। খাদ্য, ওষুধ, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও আশ্রয়সামগ্রী—সবকিছুই এখন গাজার বাইরের গুদামে পড়ে আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব হামলা ও সহায়তা অবরোধের ফলে নবঘোষিত যুদ্ধবিরতি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।


‘আমরা ছিলাম কসাইখানায়’: ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৪ ১০:২৯:০৬
‘আমরা ছিলাম কসাইখানায়’: ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ফিলিস্তিনি বন্দিরা। আব্দুল্লাহ আবু রাফে তার মুক্তিকে ‘দুর্দান্ত অনুভূতি’ হিসেবে বর্ণনা করলেও বলেন, “আমরা ছিলাম কসাইখানায়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটির নাম ছিল ওফার কারাগার। অনেক তরুণ এখনো সেখানে বন্দি।”

আরেক মুক্ত বন্দি ইয়াসিন আবু আমরা ইসরায়েলি জেলখানার পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন ‘অত্যন্ত, অত্যন্ত খারাপ’ হিসেবে।

কারাগারে দুর্ভোগ

মুক্ত হওয়া বন্দিরা কারাগারের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেন:

খাদ্য ও বঞ্চনা: ইয়াসিন আবু আমরা বলেন, “খাবার, নির্যাতন আর মারধর—সবকিছুই ছিল ভয়াবহ। সেখানে না খাবার ছিল, না পানি। আমি টানা চার দিন কিছু খাইনি। এখানে আমাকে দুটি মিষ্টি দেওয়া হয়েছে, আমি সেগুলোই খেয়েছি।”

কঠিন অবস্থা: আব্দুল্লাহ আবু রাফে বলেন, ইসরায়েলি কারাগারগুলোর অবস্থা অত্যন্ত কঠিন। সেখানে কোনো বিছানা নেই, খাবারের অবস্থাও ভয়াবহ। সবকিছুই সেখানে কষ্টকর।

সোমবার মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক বন্দি সাঈদ শুবাইর জানান, তিনি নিজের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “শিকলবিহীন সূর্যের আলো দেখা এক অবর্ণনীয় অনুভূতি। আমার হাত এখন শৃঙ্খলমুক্ত। স্বাধীনতা অমূল্য।”

মুক্তির চিত্র

ইসরায়েল সম্প্রতি প্রায় ২৫০ জন আজীবন ও দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দি এবং আরও প্রায় ১ হাজার ৭১৮ জন গাজা যুদ্ধ থেকে আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছে। এই দ্বিতীয় দলটিকে জাতিসংঘ ‘বলপূর্বক নিখোঁজ’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল।


মুক্তির পথে ফিলিস্তিনি বন্দীরা: প্রথম বাসটি পৌঁছাল গাজায়

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৩ ১৬:১৯:৩৩
মুক্তির পথে ফিলিস্তিনি বন্দীরা: প্রথম বাসটি পৌঁছাল গাজায়
রামাল্লায় ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যরাছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর এবার ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বহনকারী একটি বাস ইতোমধ্যে গাজায় পৌঁছেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বহনকারী আরও কিছু বাস গাজার দিকে যাত্রা করেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

চুক্তি ও জিম্মি মুক্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার শর্ত মেনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

মুক্তির সময়: স্থানীয় সময় সকাল ৮টার পর থেকে দুই ধাপে এই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়।

নিশ্চিতকরণ: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দুই ধাপে জিম্মি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় সবশেষ ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি অবস্থায় ছিলেন, যাদের মধ্যে ২০ জন বেঁচে ছিলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, মুক্তি পাওয়া সব জিম্মি গাজা থেকে ইসরায়েলে ফিরে এসেছেন।

ফিলিস্তিনি বন্দিদের প্রত্যাবর্তন

চুক্তি অনুযায়ী, ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত কতজন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। ফিলিস্তিনি বন্দীদের বহনকারী কিছু বাস ইতোমধ্যে গাজায় পৌঁছেছে এবং আরও কিছু বাস গাজার দিকে যাত্রা করেছে বলে আল-জাজিরা জানিয়েছে।


হামাসের বন্দি মুক্তিতে উল্লাস ইসরায়েলে, শান্তির ইঙ্গিত মধ্যপ্রাচ্যে

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৩ ১২:২৬:৪৪
হামাসের বন্দি মুক্তিতে উল্লাস ইসরায়েলে, শান্তির ইঙ্গিত মধ্যপ্রাচ্যে
ছবিঃ সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজায় শান্তির এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস সোমবার (স্থানীয় সময়) প্রথম সাতজন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-বিনিময় চুক্তির প্রথম ধাপ।

হামাস জানায়, মুক্তিপ্রাপ্তদের আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (ICRC) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিগগিরই আরও ১৩ জন জীবিত বন্দি এবং ২৮ জন ইসরায়েলির দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলও প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। সোমবার ১,৯৬৬ জন বন্দিকে বিভিন্ন কারাগার থেকে বাসে করে গাজার নাসের হাসপাতালে আনা হয়, যেখানে তাদের পরিবারকে হস্তান্তর করা হবে।

গাজায় বন্দি বিনিময়ের সময় রেডক্রস ও হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা কালো পোশাকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে উচ্ছ্বাসের জোয়ার—তেল আবিবের ‘হোস্টেজেস স্কয়ারে’ শত শত মানুষ পতাকা হাতে বন্দিদের স্বাগত জানান।

ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলগামী বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এখন মধ্যপ্রাচ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।” সোমবার তিনি ইসরায়েলের সংসদে ভাষণ দেবেন এবং পরে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ।

অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা এক বিবৃতিতে জানায়, তারা চুক্তির সব শর্ত মেনে চলবে, তবে ইসরায়েলও যেন তা মানে—তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। হামাস দাবি করে, ইসরায়েল সামরিকভাবে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আলোচনার টেবিলে এসেছে।

এই সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলের বিমান ও স্থল অভিযানে গাজা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির পরও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। সোমবার মিশরের শার্ম আল শেখে ২০টিরও বেশি দেশের নেতারা এক বৈঠকে বসছেন, যেখানে গাজার ভবিষ্যৎ, পুনর্গঠন ও হামাসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে।

তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো নির্ধারিত হয়নি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—যুদ্ধ শেষে গাজা কে শাসন করবে, এবং হামাস কি সত্যিই অস্ত্র ছেড়ে দেবে?

-আলমগীর হোসেন


পশ্চিমতীরে ইব্রাহিমি মসজিদ বন্ধ করে দিল ইসরায়েলি সেনারা

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১৪:২৯:১৫
পশ্চিমতীরে ইব্রাহিমি মসজিদ বন্ধ করে দিল ইসরায়েলি সেনারা
ছবি: সংগৃহীত

ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব সুক্কোট উপলক্ষে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের ঐতিহাসিক ইব্রাহিমি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে ইসরায়েলি সেনারা মসজিদে যাওয়ার সব প্রবেশপথ ও রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

ইব্রাহিমি মসজিদ মুসলমানদের কাছে একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই হজরত ইব্রাহিম (আ.), ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.) ও তাদের স্ত্রীরা সমাধিস্থ আছেন।

ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন ও কারফিউ

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মসজিদটি বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। হেবরনের আল-আওকাফ বিভাগের পরিচালক আমজাদ কারাজেহ এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি পবিত্র স্থান অবমাননা ও মুসল্লিদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ।

ইসরায়েলি সেনারা মসজিদে যাওয়ার সব চেকপয়েন্ট বন্ধ করে হেবরনের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না, এমনকি শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যেতে পারছে না।

আল-আকসা নিয়ে বেন-গিভিরের উসকানি

এর মধ্যেই ইসরায়েলের উগ্রপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করেন এবং বলেন, “এখন আল-আকসার মালিক ইসরায়েল।” তার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সূত্র : দ্য নিউ আরব


গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও হামলা অব্যাহত

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১২:০৩:০২
গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও হামলা অব্যাহত
ছবি: সংগৃহীত

হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার ঘোষণার পরও বৃহস্পতিবার গাজায় বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ির বলেন, "গত রাতে গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কাঠামোতে একমত হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে উত্তর গাজার বেশ কিছু এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।" এএফপি’র বরাত দিয়ে আল জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।

তিনি জানান, গাজা সিটিতে তীব্র বিমান হামলার একটি ধারাবাহিকতা চালানো হয়েছে।

পুনর্গঠনে ট্রাম্পের আশ্বাস

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমরা তাদের সফল হতে সাহায্য করব এবং শান্তিপূর্ণ থাকতে সহায়তা করব।”

এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি ঘোষণা দেন যে ইসরায়েল ও হামাস তার শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে বলে তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী।


গাজায় শান্তি ফেরায় উৎসব: হামাস-ইসরায়েল চুক্তিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১১:০১:৫৪
গাজায় শান্তি ফেরায় উৎসব: হামাস-ইসরায়েল চুক্তিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল ও হামাস। এই ঐতিহাসিক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করেছে। এর অর্থ হলো খুব শিগগিরই সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল নিজেদের সেনাদের নির্ধারিত একটি লাইনে সরিয়ে আনবে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে "ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন" বলে অভিহিত করেছেন। চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার তার সরকারের একটি বৈঠক আহ্বান করেছেন তিনি। হামাসও গাজায় যুদ্ধ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা নিশ্চিত করেছে।

গাজা ও ইসরায়েলে উচ্ছ্বাস

শান্তি চুক্তি সই হওয়ার খবরে গাজাবাসীর মধ্যে তীব্র উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ইসরায়েলেও অনেকে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সাঈদ মোহাম্মদ ইনস্টাগ্রামে রাতের একটি ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, প্রধান শহর দেইর আল বালাহতে আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে পুরুষ ও মহিলাদের ব্যাপক সমাগম। তারা সঙ্গীতের তালে তালে নেচে, শিস এবং হাততালি দিয়ে উদযাপন করছেন। একইসঙ্গে 'আল্লাহু আকবর' রব তুলতেও দেখা গেছে। আরেক সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-হাদ্দাদের ভিডিওতে গাজার অন্য একটি স্থানের রাস্তায় তরুণদের একটি ছোট দলকে নাচতে দেখা গেছে।

বিশ্বনেতাদের স্বাগত বার্তা

এই শান্তি চুক্তির জন্য বিশ্বনেতারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস সব পক্ষকে এই চুক্তির সব শর্ত মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেস বলেছেন, “এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত।”

যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এই খবরকে "একটি গভীর স্বস্তিকর মুহূর্ত" বলে উল্লেখ করেছেন এবং ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেছেন, “দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত, জিম্মি এবং বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির পর, চুক্তিটি শান্তির দিকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা সকল পক্ষকে পরিকল্পনার শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সমঝোতা আলোচনায় মিশর, কাতার ও তুরস্কের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান।


‘বোমাবর্ষণ বন্ধের’ ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা

মধ্যপ্রাচ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৭:৪৭:৫৪
‘বোমাবর্ষণ বন্ধের’ ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় ‘বোমাবর্ষণ বন্ধ’ করার কথা বলার পরও ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭ জনসহ মোট ২৬৫ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়ল

আল জাজিরার শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই আহ্বানের পরও ইসরায়েল তীব্র হামলা চালাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭,০৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১,৬৯,৪৩০ জন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজাজুড়ে বিস্ফোরিত ভবনের বিশাল ধ্বংসাবশেষের নিচে আরও হাজার হাজার মৃতদেহ চাপা পড়ে আছে।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি এই দলটি গাজার প্রশাসন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের হাতে হস্তান্তর করতে এবং সকল ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে।

তবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়ায় তাদের নিরস্ত্রীকরণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তারা বলেছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে অবিলম্বে শান্তি আলোচনায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক তারা।

পাঠকের মতামত: