ঢাবিতে নতুন দুই দিবস ঘোষণা

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১১:৩২:২১
ঢাবিতে নতুন দুই দিবস ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। জুলাই অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের অনন্য সাহসিকতা ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে তাদের সম্মিলিত ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান দুইটি বিশেষ দিবস ঘোষণা করেছেন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক আবেগঘন অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দেন, প্রতি বছর ১৪ জুলাই ‘নারী শিক্ষার্থী দিবস’ এবং ১৭ জুলাই ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দুইটি দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হবে।

উপাচার্য বলেন, “নারীরা সেদিন যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, সেটি কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ ছিল না তা ছিল এক ঐতিহাসিক নৈতিক অবস্থান। এই ঘোষণা সেই সাহসিকতার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখন সামরিক ও আধা-সামরিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, তখন তাদের এই আত্মত্যাগ ও দায়িত্ববোধকে অস্বীকার করা চলে না। এটি কেবল ইতিহাস নয়, আমাদের মূল্যবোধের মাপকাঠিও বটে।”

অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস এক ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক ও প্রামাণ্য আয়োজনের চিত্র হয়ে ওঠে। রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি চত্বর ও শামসুন্নাহার হলের সামনে স্থাপন করা হয় বড় পর্দার অডিও-ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, নারীদের অংশগ্রহণ, পুলিশ-সেনা যৌথ দমননীতির চিত্র এবং শহীদদের স্মৃতি নিয়ে নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আয়োজন করা হয় স্মরণীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, গান, নাট্যাংশ এবং ড্রোন শো, যা হাজারো দর্শক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই আয়োজনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যাতে সবাই নিঃসংশয়ে ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অংশ নিতে পারেন। নারী শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল আত্মমর্যাদার দীপ্তি, আর উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ছিল সম্মিলিত গর্ব।

বিশ্লেষকদের মতে, এই দুই দিবসের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কেবল স্মরণ নয়, বরং শিক্ষা ও প্রেরণার এক নতুন ভিত্তি নির্মাণ করবে। নারী নেতৃত্ব, নৈতিক প্রতিবাদ ও গণতান্ত্রিক চেতনা এই তিনটি স্তম্ভকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী প্রজন্মকে সত্য ও সাহসের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞানচর্চার নয়, বরং ন্যায়, প্রতিবাদ ও নৈতিক দৃঢ়তার কেন্দ্রও হতে পারে। ‘নারী শিক্ষার্থী দিবস’ এবং ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ কেবল স্মরণ দিবস নয়, বরং এগুলো হয়ে উঠবে ছাত্র রাজনীতির মানবিক ও মূল্যবোধনির্ভর নতুন ধারা প্রতিষ্ঠার সূচনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘোষণাকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনের গবেষকরা দেখছেন একটি সময়োপযোগী এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে গঠিত দৃষ্টান্ত হিসেবে, যা দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে নারী নেতৃত্ব ও গণতন্ত্রের চেতনাকে এগিয়ে নিতে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ