কলেজে ভর্তিতে জুলাইযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার, মেধা তালিকায় আসছে নতুন ধারা

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ২০:১৬:২৮
কলেজে ভর্তিতে জুলাইযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার, মেধা তালিকায় আসছে নতুন ধারা

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে চলতি জুলাই মাসেই। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রতিবছর যেমন নিয়ম করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, এবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। তবে এ বছরের নীতিমালায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো কোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তন।

প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে পারে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা। এই কোটার আওতায় চলতি বছর এসএসসি পাস করা জুলাইযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কলেজে ভর্তিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ধরনের কোটার প্রস্তাব এই প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যেখানে বহু তরুণ আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হন এবং অনেকে জীবন উৎসর্গ করেন।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা’ এই বছর থেকে বাদ পড়তে পারে বলেও আভাস মিলেছে। স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে আসার পর অনেকেই মনে করছেন, কলেজ পর্যায়ে এই কোটার প্রয়োজনীয়তা এখন আর নেই। বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে, তাই সন্তানের জন্য কোটা রাখারও বাস্তবতা কম। তাছাড়া, পোষ্য কোটা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তার অধীন দপ্তরসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ২ শতাংশ আসনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

২০২৪ সালের সর্বশেষ নীতিমালায় দেখা যায়, একাদশ শ্রেণির মোট আসনের ৯৩ শতাংশ মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তির জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং বাকি ৭ শতাংশ কোটা ভিত্তিক ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং ২ শতাংশ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য। এবার বোর্ড কর্মকর্তারা এই ৭ শতাংশ কোটা বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন।

তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, একাদশ শ্রেণির ভর্তির চূড়ান্ত নীতিমালা নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা হবে। তার মতে, ‘নীতিমালায় পরিবর্তন আনা সময়ের দাবি হলেও তা বাস্তবায়ন হবে সর্বোচ্চ পর্যালোচনার ভিত্তিতে।’

এদিকে, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইতিমধ্যেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বলে দাবি করেছে এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। ফলে এই কোটার বাস্তবায়ন হলে অনেক পরিবারের জন্য তা বাড়তি সুযোগ হয়ে আসবে।

শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্য ও সমতা আনতে কোটা সংস্কার দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এবারের নীতিমালায় সেটি নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে কি না, তা নির্ভর করবে মন্ত্রণালয়ের আসন্ন সিদ্ধান্তের ওপর।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ