সুব্রত বাইন ও মাসুদের বিস্ফোরক পরিকল্পনা ফাঁস

২০২৫ জুলাই ১৪ ০৮:২৯:৫৯
সুব্রত বাইন ও মাসুদের বিস্ফোরক পরিকল্পনা ফাঁস

৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপরই ভারতের আশ্রয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পুনরায় রাজধানীতে আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার এই পরিকল্পনার মূল অংশ ছিল এক সময়ের কুখ্যাত ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’-এর পুনর্গঠন এবং ঢাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে আগের মতো খুন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব ফিরিয়ে আনা।

সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম গত ৭ জুলাই আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে: সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলী (৬১), তার সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৩), এম এ এস শরীফ (২৫) ও মো. আরাফাত ইবনে নাসির (৪৩)।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ভারতে পালিয়ে থাকা সুব্রত বাইন ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে গোপনে ফিরে আসেন। এরপর ঢাকায় একাধিক স্থানে তার উপস্থিতি শনাক্ত হয় এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ উঠে। বাহিনীর সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র সংগ্রহেও তৎপর হয়ে ওঠেন তিনি।

ঢাকায় আগ্নেয়াস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কৌশল হিসেবে সীমান্তঘেঁষা জেলা কুষ্টিয়ায় যান সুব্রত বাইন ও তার পুরনো সহযোগী মোল্লা মাসুদ। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, তারা সেখানেই অবস্থান নিয়ে অস্ত্র কেনাবেচার একটি নেটওয়ার্ক গড়ার চেষ্টা করেন। ২০২৫ সালের ২৭ মে ভোরে সেনাবাহিনীর এক গোপন অভিযানে কুষ্টিয়ায় অবস্থানকালে তাদের দুজনকে আটক করা হয়।

সুব্রত ও মাসুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ জানতে পারে যে তাদের আরেক সহযোগী শরীফের হাতিরঝিলের বাসায় নিয়মিত বৈঠক হতো এবং সেখানেই অস্ত্র ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার সরঞ্জাম রাখা হতো। ওইদিনই বিকেলে অভিযান চালিয়ে শরীফ ও মো. আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযানে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। মামলার অভিযোগপত্রে তাদের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে মোট ১৩ জন সাক্ষীর তালিকাও দাখিল করা হয়েছে।

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের নাম ছিল অগ্রগণ্য। তারা তখন রাজধানীজুড়ে ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’ নামে একটি কুখ্যাত চক্র পরিচালনা করতেন, যারা খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত ছিল। সেই সময়ই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা ভারতে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাদের ফের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এরপর আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করি এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র তৈরি করি।”

অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী বাদল মিয়া জানান, “আমি এখনো অভিযোগপত্র হাতে পাইনি। বিস্তারিত পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে আইনি প্রতিক্রিয়া জানাব।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ