'এটা ট্রেলার মাত্র': গুলির নির্দেশনা অডিও ঘিরে  তাজুল ইসলামের বিস্ফোরক মন্তব্য

২০২৫ জুলাই ০৯ ২০:০৩:১৭
'এটা ট্রেলার মাত্র': গুলির নির্দেশনা অডিও ঘিরে  তাজুল ইসলামের বিস্ফোরক মন্তব্য

জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ওপর গুলির নির্দেশনা সংক্রান্ত একটি অডিও কল ঘিরে চরম বিতর্ক দানা বেঁধেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ সংবেদনশীল রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আনে, যেখানে দাবি করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিবিসির প্রকাশিত অডিওটি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। বুধবার (৯ জুলাই) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নিজের চোখেই দেখে নিন। তবে এই কল রেকর্ডটি বিবিসি উদ্ধার করেনি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা। এটা ট্রেলার মাত্র। অনেক কিছু এখনো বাকি। অপেক্ষায় থাকুন।”

এই বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, রেকর্ডিংটি ইতিমধ্যেই তদন্ত সংস্থার কাছে ছিল এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তা প্রকাশের আগে থেকেই বিষয়টি সরকারের নির্ধারিত ট্রাইব্যুনালের আওতায় তদন্তাধীন ছিল। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতে পারে।

অন্যদিকে, বিবিসির অনুসন্ধান অনুসারে, কল রেকর্ডটি প্রথম রেকর্ড করে বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), যা সরকারের টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তবে এই রেকর্ডিং কে ফাঁস করেছেন, সে বিষয়ে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি।

বিবিসি নিশ্চিত করেছে যে তারা অডিও ক্লিপটি স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে। রেকর্ডিংটি পরীক্ষা করা হয় অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান Earshot-এর মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অডিও ক্লিপটিতে কোনো সম্পাদনা, বিকৃতি বা কৃত্রিমতা পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রেকর্ডিংটিতে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ENF) শনাক্ত করা গেছে, যা অডিওর সময় এবং উৎপত্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এটি নিশ্চিত করে যে রেকর্ডিংটি প্রকৃত সময়ে ধারণ করা এবং পরবর্তীতে এর সঙ্গে কোনো রকম কারসাজি করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে:

-যদি কল রেকর্ডটি সরকারের মনিটরিং সংস্থার রেকর্ড করা হয়, তবে সেটি কীভাবে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে ফাঁস হলো?

-আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে যদি এ রেকর্ড আগে থেকেই থাকত, তবে তা এতদিন গোপন রাখা হলো কেন?

-‘ট্রেলার’ হিসেবে যা প্রকাশ হলো, ‘পুরো চলচ্চিত্রে’ কী ধরনের তথ্য সামনে আসতে যাচ্ছে?

এই অডিও কলের সত্যতা নিয়ে এখন আর তেমন সন্দেহ থাকছে না, বরং রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং আইনি দায়-দায়িত্বের প্রশ্ন ক্রমেই বড় হয়ে উঠছে। বিষয়টি এখন শুধু রাজনৈতিক বিতর্কের উপাদান নয় এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাস, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি জলসীমান্তে পৌঁছে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রেকর্ড যদি আইনত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তা হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ। অন্যদিকে, যদি এটি ‘প্রসঙ্গচ্যুত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার’ হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এর পেছনের ষড়যন্ত্র এবং ফাঁসকারীর পরিচয় বের করাও হবে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ