আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত: সাবেক আইজিপি

২০২৫ জুলাই ১০ ১৩:৫৯:০৫
আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত: সাবেক আইজিপি

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের সামনে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় রাজসাক্ষী হতে চাই।” তাঁর এই স্বীকারোক্তি মামলার গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিয়েছে। মামুন সেই সময় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর থেকে এমন স্বীকারোক্তি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলছে।

এই ঘোষণার ঠিক আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে যে দমননীতি অনুসরণ করা হয়েছিল, তা ইতিহাসে এক ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুলিশের গুলিতে নিহত হন শত শত বিক্ষোভকারী, যাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন। এই সময় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁর সরাসরি স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় স্তর থেকে এ ধরণের দমন-পীড়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে নজর কেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা এবং বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল এই বিচারকে গণতন্ত্র ও জবাবদিহির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে বলে আইনি বিশ্লেষকদের অভিমত। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে যে, নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষপদে থেকেও কেউ অপরাধ করলে দায় এড়াতে পারবে না এটাই এই মামলার সবচেয়ে শক্তিশালী বার্তা।

এই বিচার কেবল অতীতের একটি নির্মম অধ্যায় উন্মোচনের মাধ্যম নয়, বরং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। মামুনের স্বীকারোক্তি ও বিচারপতির আদেশের মাধ্যমে ২০২৪ সালের দমনপীড়নের বিচারিক অধ্যায় নতুন এক দিকনির্দেশনার পথে এগিয়ে চলেছে। সামনে হয়তো আরও স্বীকারোক্তি, সাক্ষ্য ও প্রমাণ উঠে আসবে, যা পুরো জাতিকে অতীতের সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।

-ইসরাত, নিজস্বপ্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ