উইম্বলডনে ইতালির ইতিহাস: আলকারাজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন জানিক সিনার

খেলা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১১:১৮:১৮
উইম্বলডনে ইতালির ইতিহাস: আলকারাজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন জানিক সিনার

অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঘাসে গড়া কোর্টে ২৩ বছর বয়সী জানিক সিনার লিখলেন নতুন ইতিহাস। ফরাসি ওপেনে হৃদয়বিদারক পরাজয়ের এক মাসের মধ্যেই তিনি মধুর প্রতিশোধ নিলেন স্প্যানিশ প্রতিপক্ষ কার্লোস আলকারাজের বিরুদ্ধে। রোববার উইম্বলডনের পুরুষ একক ফাইনালে ৪–৬, ৬–৪, ৬–৪, ৬–৪ গেমে জিতে ক্যারিয়ারের প্রথম উইম্বলডন ট্রফি জিতে নেন ইতালিয়ান এই তরুণ, যিনি এর মধ্যেই চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপার মালিক।

প্রথম সেট হারার পরও ধীরস্থির মেজাজে খেলে পরের তিন সেটে একবারও সার্ভিস হারাননি সিনার। বিগত মাসে রোলাঁ গারোর ফাইনালে চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট হাতে পেয়েও হার মানতে হয়েছিল যেখানেই, এবার সেই ভুল তিনি করেননি। সেন্টার কোর্টে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টেই নিশ্চিত করেন স্বপ্নের শিরোপা। ম্যাচ শেষে তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “এ যেন স্বপ্নপূরণ। এটা আমি আমার জীবনের বাকি সময়টাও ধরে রাখতে চাই।”

জানিক সিনার হলেন ইতিহাসে প্রথম ইতালিয়ান খেলোয়াড়, যিনি অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সিংহাসন জিতলেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ২১ বছর বয়সী কার্লোস আলকারাজ, যিনি ২০২2 ও ২০২৩ সালে টানা দুইবার উইম্বলডন জিতে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এসেছিলেন।

তবে এদিন সিনার একেবারে ভিন্ন রূপে হাজির হন। প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়লেও দ্বিতীয় সেটের শুরুতেই ব্রেক করে আত্মবিশ্বাসের বার্তা দেন। ম্যাচের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ও চতুর্থ সেটেও আলকারাজের সার্ভিস ভেঙে দেন সময় মতো। বিশেষ করে, তৃতীয় সেটে আলকারাজ বেসলাইনে পিছলে গেলে সিনার সুযোগ কাজে লাগান নিখুঁতভাবে।

ম্যাচে নাটকীয়তার কোনো কমতি ছিল না। আলকারাজ দ্বিতীয় সেটে দারুণ এক ব্যাকহ্যান্ড শটে পয়েন্ট জেতেন, তখন গ্যালারির গর্জন যেন মুখর করে তোলে সেন্টার কোর্ট। উপস্থিত ছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস ক্যাথরিনসহ রাজপরিবারের সদস্যরাও।

সিনার এই টুর্নামেন্টে প্রথম তিন রাউন্ডে মাত্র ১৭ গেম হারিয়েছেন, যা ১৯৭২ সালের ওপেন এরা-রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে। চতুর্থ রাউন্ডে দুর্দান্ত খেলতে থাকা গ্রিগর দিমিত্রভ যখন দুই সেটে এগিয়ে ছিলেন, তখন চোট পেয়ে ম্যাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সেখান থেকে চেনা ছন্দে ফিরেই কোয়ার্টার ফাইনালে বেন শেলটনকে হারিয়ে, সেমিফাইনালে সাতবারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন নোভাক জোকোভিচকে বিদায় করে পৌঁছে যান চূড়ান্ত লড়াইয়ে।

আলকারাজ এ ম্যাচে জয়ী হলে ওপেন এরা-তে পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন উইম্বলডন জয়ের কীর্তি গড়তে পারতেন। কিন্তু সিনার যেন সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন—কৌশলে, মানসিক দৃঢ়তায় ও শারীরিক ধারাবাহিকতায়।

তাঁদের এই দ্বৈরথকে বলা হচ্ছে 'বিগ থ্রি'–র (ফেদেরার–নাদাল–জোকোভিচ) পরবর্তী যুগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সর্বশেষ সাতটি গ্র্যান্ডস্ল্যামের চারটি জিতেছেন সিনার, বাকি তিনটি আলকারাজ।

সিনারের ভাষায়, “তোমার (আলকারাজের) দুটি ট্রফি আছে, এটা আমি নিজের কাছে রেখে দিচ্ছি!” এক নির্ভার অথচ বর্ণাঢ্য হাসিতে ভরে উঠেছিল উইম্বলডনের সন্ধ্যা—যেখানে ভবিষ্যতের রাজা যেন আজই মুকুট মাথায় তুললেন।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ