রোজকার শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

সাবধানতা ও বিচক্ষণতা জরুরি, বাজারে ফিরে এসেছে অনিশ্চয়তা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১৫:২৯:৫২
সাবধানতা ও বিচক্ষণতা জরুরি, বাজারে ফিরে এসেছে অনিশ্চয়তা
১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন পরিস্থিতি ছিল মিশ্র।

আজ ১৭ জুলাই ২০২৫ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই)-তে লেনদেন পরিস্থিতি ছিল চিত্র-বিচিত্র, যেখানে বাজারে একদিকে মিশ্র প্রবণতা, অন্যদিকে ব্লক লেনদেনের ব্যাপকতা এবং কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তার স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। দিনের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ১৮০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে, ১৫৩টি বেড়েছে এবং ৬৩টি অপরিবর্তিত ছিল। দরপতনের সংখ্যাই বেশি থাকায় এটি স্পষ্ট হয় যে, সার্বিক বাজারে মৃদু নেতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছিল।

ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিশ্লেষণ:

‘A’ ক্যাটাগরির আওতায় থাকা ২১৮টি কোম্পানির মধ্যে ৭১টির শেয়ার দর বেড়েছে, যেখানে ১১৩টি কমেছে এবং ৩৪টি অপরিবর্তিত ছিল। এ ক্যাটাগরি মূলত ব্লু-চিপ ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানির সমাহার হওয়ায় এ খাতে নেতিবাচক গতি বাজারে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে।

‘B’ ক্যাটাগরিতে মোট ৮১টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টি দর বাড়ালেও ৩৮টি কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের দ্বিধাদ্বন্দ্বকে ইঙ্গিত করে।

‘Z’ ক্যাটাগরি, যা সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত, সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে ৫০টি কোম্পানি দর বাড়িয়েছে, যেখানে ২৯টি কমেছে এবং ১৮টি অপরিবর্তিত ছিল। এই প্রবণতা দেখে অনুমান করা যায় যে, স্বল্পমেয়াদি মুনাফা লাভের আশায় কিছু বিনিয়োগকারী উচ্চ ঝুঁকির এই ক্যাটাগরিতে সক্রিয় ছিলেন।

‘N’ ক্যাটাগরিতে কোনো লেনদেন হয়নি, যা নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনুপস্থিতি নির্দেশ করে।

লেনদেনের চিত্র ও বিশ্লেষণ:দিনভর ডিএসইতে মোট ২,২৫,৬৪৯টি ট্রেডে ২৯.৫৪ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে যার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮৯.৬৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় খানিকটা বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই লেনদেনের প্রবাহ সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তাকে প্রতিফলিত করে।বাজার মূলধন (Market Capitalisation) বিশ্লেষণে দেখা যায়,

  • ইকুইটি খাতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৪৩,৪১৫.৭৮ কোটি টাকা
  • মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ৩০,০১২.৯ কোটি টাকা
  • ডেট সিকিউরিটি/কর্পোরেট বন্ডে ৩৪১,০৮১.২২ কোটি টাকা

যার সমন্বয়ে মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬৮,৭৪৯৮.৩০ কোটি টাকা। যা দেশের পুঁজিবাজারের আকার ও বিনিয়োগের গভীরতা সম্পর্কে একটি বড় চিত্র তুলে ধরে।

ব্লক লেনদেনের বিশ্লেষণ:

ব্লক মার্কেটে ৪০টি কোম্পানির মোট ৮১টি লেনদেন হয়েছে, যেখানে ৯৫.৯ লাখ শেয়ার বিনিময় হয়েছে এবং এর মোট মূল্য ৩০৩.৪৮ কোটি টাকা। ব্লক লেনদেনগুলোতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি ছিল:

  • RENATA: ১ লাখ শেয়ারের ব্লকে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকার, যা আজকের ব্লক মার্কেটের সবচেয়ে বড় একক লেনদেন।
  • FINEFOODS: ১.২৭ লাখ শেয়ার লেনদেনে ৩১.৬ কোটি টাকা।
  • MLDYEING: ৪৮ লাখ শেয়ারে ৪৪.১৬ কোটি টাকা।
  • ASIATICLAB: ৫.৪৭ লাখ শেয়ারে ২৪ কোটি টাকার ব্লক ট্রেড হয়েছে।

এছাড়া, LOVELLO, MARICO, KBPPWBIL, TOSRIFA, PEOPLESINS, EIL, PIONEERINS-এর মতো কোম্পানিগুলোর ব্লক লেনদেনও উল্লেখযোগ্য ছিল। এসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা, প্রান্তিক ফলাফল বা ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার ইঙ্গিত দেয়।

নীতিগত বিশ্লেষণ ও বাজার মনস্তত্ত্ব:

বিনিয়োগকারীদের অনেকে এখনো স্বল্পমেয়াদি লাভের সুযোগে সক্রিয় থাকলেও সামগ্রিকভাবে বাজার এখনো অনেকের জন্য ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’-এর জায়গায় রয়েছে। ব্যাংক, বিমা ও টেক্সটাইল খাতের কিছু কোম্পানিতে আগ্রহ দেখা গেলেও বাজারের দোদুল্যমানতা স্পষ্ট। একদিকে যেমন ব্লক মার্কেটে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ খুচরা বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা দ্বিধা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নীতিগত, রাজনৈতিক বা বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির দিকগুলোও বাজারে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলছে।

সার্বিকভাবে ১৭ জুলাইয়ের ডিএসইর লেনদেন পরিস্থিতি বলে দেয়, বাজারে এখনো গভীর বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকলেও কিছুটা অনিশ্চয়তা ও সতর্কতা বিদ্যমান। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি ছিল তথ্য বিশ্লেষণ ও কৌশল নির্ধারণের দিন—যেখানে একদিকে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা, অন্যদিকে ব্লক মার্কেটের প্রবল সক্রিয়তা একটি দ্বৈত বাস্তবতা তুলে ধরে। বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে আগামী দিনের প্রান্তিক ফলাফল, নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ