এআই দিয়ে নগ্ন ছবি তৈরি করে অর্থ আদায়, বেড়েছে আত্মহত্যা

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১২:৪০:৫৪
এআই দিয়ে নগ্ন ছবি তৈরি করে অর্থ আদায়, বেড়েছে আত্মহত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকিতে এক কিশোরের আত্মহত্যার ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ভয়ংকর অপব্যবহার—বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করে পরিচালিত ‘সেক্সটর্শন’ বা ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলের নতুন ধরণ।

জানা গেছে, একটি সাইবার চক্র এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই কিশোরের নগ্ন ছবি তৈরি করে এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে ৩ হাজার ডলার আদায়ের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত মানসিক চাপে আত্মহত্যা করে কিশোরটি।

এ ঘটনার পর ‘সেক্সটর্শন’ নামক অপরাধের বিস্তার ও ভয়াবহতা আরও একবার সামনে এসেছে। সাধারণত এ অপরাধে অনলাইনে কাউকে অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে অর্থ বা সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এখন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কারো ছবি ডিজিটালি সম্পাদনা করে তৈরি করা হচ্ছে নগ্ন ছবি—যা দিয়ে ভয় দেখিয়ে চলছে ব্ল্যাকমেইল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিহত কিশোরের বাবা জন বারনেট বলেন, “যারা এসব করছে তারা অত্যন্ত সুসংগঠিত, টেকনোলজিতে দক্ষ এবং নির্মম। তারা আসল ছবি ব্যবহার করছে না, এআই দিয়ে যা খুশি বানিয়ে নিচ্ছে।”

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেরা এই ব্ল্যাকমেইলের বড় শিকার। ফলে এ বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এসব অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘নুডিফাই’ নামের কিছু সফটওয়্যার, যা যে কারো পোশাক ডিজিটালি মুছে ফেলে বাস্তবসম্মত নগ্ন ছবি বানাতে পারে।

ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (IWF)’ বলেছে, “এখন শিশুদের আসল ছবি দরকার হয় না, জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করেই বাস্তবমতো ছবি বানিয়ে শিশুদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে।” তারা এমনকি ‘পেডোফাইল গাইড’ নামের এক নির্দেশিকা শনাক্ত করেছে, যেখানে বিস্তারিত বলা আছে কীভাবে কিশোরীদের ব্ল্যাকমেইল করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিকেটর’ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ৮৫টি ‘নুডিফাই’ সাইটের বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। মাত্র ছয় মাসে এসব সাইটের কিছু ১৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করেছে। এর মধ্যে অনেক সাইট গুগল, অ্যামাজন এবং ক্লাউডফ্লেয়ারের প্রযুক্তিগত সেবা ব্যবহার করে টিকে আছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে এআই-নির্ভর নগ্ন ছবি তৈরিকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের জেল। যুক্তরাষ্ট্রেও ‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন পাস হয়েছে, যাতে অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি তৈরি বা ছড়ানো হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এছাড়া ফেসবুকের মূল কোম্পানি ‘মেটা’ হংকংভিত্তিক ‘ক্রাশ এআই’ নামের একটি নুডিফাই অ্যাপের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ প্রতিষ্ঠান মেটার নীতিমালা ভেঙে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল।

স্পেনের এক জরিপ বলছে, প্রতি পাঁচজন তরুণের একজন এআই-নির্ভর ডিপফেক ছবির শিকার হয়েছে। এমনকি দেশটির একটি স্কুলে তিন কিশোর তাদের সহপাঠীদের ছবি এআই প্রযুক্তি দিয়ে বিকৃত করে ছড়িয়ে দিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন যেমন সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি তা শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইন করে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও সমস্যা এক জায়গায় কমলে অন্যত্র আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ