সূর্যের এত কাছ থেকে দেখা প্রথমবার: নাসার ক্যামেরায় আগুনের নৃত্য

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১০:২৩:৪২
সূর্যের এত কাছ থেকে দেখা প্রথমবার: নাসার ক্যামেরায় আগুনের নৃত্য

নাসা সম্প্রতি সূর্যের সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা কিছু অসাধারণ ছবি প্রকাশ করেছে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিশাল সাফল্য। এই ছবিগুলো ধারণ করেছে পার্কার সোলার প্রোব, যেটি ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়ে ছবি তোলে। এতে দেখা গেছে সূর্য থেকে বের হওয়া বিশাল প্লাজমা উদ্গিরণ, সূর্য বাতাসের স্পষ্ট প্রবাহ এবং সূর্যের চৌম্বক সীমারেখা—যা আগে এত পরিষ্কারভাবে দেখা যায়নি।

এই মহাকাশযানটি ২০১৮ সালে পাঠানো হয়েছিল এবং এটি বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইউজিন পার্কারের নামে নামকরণ করা হয়। পার্কার একসময় প্রথম সূর্য বাতাস বা সোলার উইন্ড-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। এই যানটি এখন সূর্য থেকে মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল দূর দিয়ে ঘোরে—যেটা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের তুলনায় প্রায় এক ইঞ্চির চেয়েও কম!

অত্যন্ত গরম তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য পার্কারের বিশেষ তাপ প্রতিরোধক ঢাল তৈরি করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত কাছ থেকে সূর্যের মুখোমুখি হয়েও প্রোবটি এখনো ভালোভাবে কাজ করছে এবং ভেতরের যন্ত্রপাতি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রয়েছে।

এই মিশনে থাকা একমাত্র ক্যামেরা, WISPR, সূর্যের বাইরের স্তর অর্থাৎ করোনার ছবি তুলেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একাধিক সৌর বিস্ফোরণ একসঙ্গে ঘটছে, যা মহাকাশ আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিস্ফোরণের কারণেই মাঝে মাঝে পৃথিবীতে মেরুজ্যোতির (Aurora) সৃষ্টি হয়।

ছবিতে সূর্য বাতাসের গতি-প্রবাহও স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। এটি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের একটি সীমারেখা ‘হেলিওসফেরিক কারেন্ট শিট’ অনুসরণ করে চলছে। এই সীমারেখা পুরো সৌরজগত জুড়ে ছড়িয়ে থাকে এবং সৌর ঝড় কিভাবে পৃথিবীতে পৌঁছাবে তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই গবেষণা আমাদের জন্য খুবই দরকারি কারণ মহাকাশ আবহাওয়া অনেক বড় বড় সমস্যার কারণ হতে পারে—যেমন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, স্যাটেলাইটে গোলযোগ, কিংবা মহাকাশচারীদের জীবনের ঝুঁকি। সামনে আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট মহাকাশে যাবে, সেক্ষেত্রে সৌর ঝড়ের পূর্বাভাস জানা আরও জরুরি হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্য তার ১১ বছরের চক্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপে প্রবেশ করছে। ইতিহাস বলছে, এমন সময়েই সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর ঝড় হতে পারে, যেমনটা ২০০৩ সালে হ্যালোউইন সোলার স্টর্মে হয়েছিল।

ভবিষ্যতে পার্কার প্রোব থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর জ্বালানি এখনো অনেকটাই রয়েছে, তাই প্রোবটি আরও বহু বছর কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। একসময় এর শক্তি ফুরিয়ে গেলে, এটি ধীরে ধীরে সূর্য বাতাসের সাথেই মিশে যাবে।

-আহসান হাবিব, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ