মেয়ের কাছে হার মেনে আলোচনায় ফিরতে চান মা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৮:৫১:৪৯
মেয়ের কাছে হার মেনে আলোচনায় ফিরতে চান মা

ঢাকার সিএমএম আদালতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই মামলা করে দেশজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তরুণী মেহরিন আহমেদ। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনে করা এই মামলাটি শুধু সামাজিকভাবে আলোড়ন তুলেছে তা-ই নয়, এটি আঘাত করেছে দীর্ঘদিন ধরে লালিত বাঙালি পারিবারিক বন্ধনের মূল্যবোধেও।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে ঘটনার গতিপথ। মামলার এক মাস পর মেহরিনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তার মা এখন আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে আগ্রহী। আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই এক কাউন্সেলিং চিঠি পেয়েছেন এবং মেহরিনের মা মেয়েকে একজন প্রতিভাবান শিক্ষার্থী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মেনে নিয়েছেন যে, বাবা-মা দুজনই কর্মজীবী হওয়ায় দীর্ঘদিন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

তিনি জানান, যদিও তারা এখন একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন, বাস্তবতা হলো গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রায় কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। এ ব্যবধান ধীরে ধীরে ভেঙে পড়া এক ধরনের মানসিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা একটি বিরল অথচ গভীর বার্তা বহন করে। সমাজবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সামাজিক বন্ধন এবং পারিবারিক মানবিকতার জায়গায় বড় প্রশ্ন তোলে। যদিও প্রতিটি পরিবারে এমন কিছু ঘটে না, তবুও এটি একমাত্র উদাহরণ নয়। এরকম আরও অনেক ঘটনা সমাজে ঘটে চলেছে নীরবে, ভিন্ন আকারে, ভিন্ন রূপে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে অভিভাবকদের আত্মসমালোচনা করার। সন্তানকে শুধু ডিগ্রিধারী করে তোলাই যথেষ্ট নয়—তাকে গড়ে তুলতে হবে নৈতিক মূল্যবোধ, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সামাজিক শিষ্টাচারের মধ্য দিয়ে।”

সন্তানের পক্ষে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা উপমহাদেশে খুবই বিরল। তবে এমন ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। ২০১৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে রাফায়েল স্যামুয়েল নামে এক যুবক “অনুমতি না নিয়েই জন্ম দেওয়ার” অভিযোগে তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যা বিশ্বজুড়েই আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আদালতে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে এমন মামলা দৃষ্টান্ত হিসেবে গৃহীত হয়নি। তবে মেহরিনের মামলার পর যদি পারস্পরিক বোঝাপড়া, মানবিক সংলাপ ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়, তাহলে তা হতে পারে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। যেখানে টানাপোড়েন, বিচ্ছিন্নতা কিংবা দূরত্ব—সবকিছুর শেষে জায়গা করে নেয় ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং পরিবার ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ