ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড একদিন পিছিয়ে, ভাগ্য ঝুলছে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৭:১১:১৯
ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড একদিন পিছিয়ে, ভাগ্য ঝুলছে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরে আটক ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল বুধবার (১৬ জুলাই)। তবে ভারত সরকারের অনুরোধে দেশটির কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর একদিনের জন্য স্থগিত করেছে। ভারতীয় কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই সাময়িক এই সময়সীমা পেছানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে নিমিশা প্রিয়াকে ক্ষমা করা হয়েছে বা তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

বর্তমানে হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০০৮ সালে নার্সের চাকরি নিয়ে ইয়েমেনে পাড়ি জমান তিনি। পরে স্বামী ও কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করলেও, ২০১৪ সালে পরিবার ফিরে গেলে প্রিয়া থেকে যান নিজের ক্লিনিক খোলার আশায়। স্থানীয় নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এক জটিল সম্পর্ক—যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় একটি হত্যা মামলায়।

প্রিয়ার অভিযোগ, মাহদি তাকে জোর করে নিজের স্ত্রী পরিচয়ে ব্যবহার করতেন, তার পাসপোর্ট জব্দ করেন এবং সব প্রশাসনিক সহায়তা আটকে দেন। এমনকি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা পাননি তিনি। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই এক ভয়াবহ মোড় নেয় পরিস্থিতি। অভিযোগ অনুযায়ী, নিজের পাসপোর্ট ফেরত পেতে মাহদিকে ঘুমের ইনজেকশন দেন প্রিয়া। কিন্তু ওভারডোজে মাহদি মারা যান। এরপর মরদেহ টুকরো করে পানির ট্যাংকে ফেলে দেন তিনি। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে যান নিমিশা।

২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যা ২০২৩ সালে দেশটির সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বহাল রাখা হয়। এই সময় থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি। ভারত সরকার বিষয়টিকে ‘জটিল ও সংবেদনশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, প্রিয়াকে বাঁচাতে সব ধরনের কূটনৈতিক ও আইনি চেষ্টা চালানো হয়েছে। এখন একমাত্র আশার জায়গা হলো মাহদি পরিবারের ক্ষমা। ইসলামি আইনে প্রচলিত ‘রক্তমূল্য’ পরিশোধের মাধ্যমে প্রিয়া বাঁচতে পারেন, যদি ভুক্তভোগী পরিবার সম্মত হয়।

এই মুহূর্তে ভারত সরকার এবং প্রিয়ার পরিবার মাহদি পরিবারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, নিয়মিত যোগাযোগের কারণেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়সীমা একদিন পিছিয়ে নেওয়া গেছে। কিন্তু ইয়েমেনের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হওয়ায় কূটনৈতিক প্রভাব অনেক সীমিত।

এদিকে, ভারতের সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার সংগঠন এবং কেরালা রাজ্য প্রশাসন উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তি ও প্রাণভিক্ষার দাবি জানিয়েছে। এখন নজর শেষ মুহূর্তের আলোচনার দিকে। যদি পরিবার সম্মত হয়, তাহলে হয়তো বাঁচতে পারেন নিমিশা। অন্যথায়, বৃহস্পতিবারই হতে পারে তার জীবনের শেষ দিন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ