একুশে আগস্ট মামলায় তারেক রহমান ও বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে শুনানি বৃহস্পতিবার

২০২৫ জুলাই ১৫ ১৩:৫৪:৫৫
একুশে আগস্ট মামলায় তারেক রহমান ও বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে শুনানি বৃহস্পতিবার

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের খালাসের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ তারিখ নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ আরও অনেকে।

এর আগে গত ১ জুন হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করার অনুমতি দিয়েছিল আপিল বিভাগ। তখনই বলা হয়েছিল, মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় শিগগিরই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

হাইকোর্ট গত বছর রায়ে অধস্তন আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল করে দেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই রায়ে বলেন, মামলার দ্বিতীয় চার্জশিট গ্রহণ, বিচারিক কার্যক্রম এবং দেওয়া রায় আইনসঙ্গত ছিল না।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তিপূর্ণ জনসভায় চালানো গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন, আহত হন প্রায় ৩০০ জন। হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

ঘটনার পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠে। মামলাটি এক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে এবং ২০০৮ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। তাতে বলা হয়, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে মামলার অধিকতর তদন্ত করে, যেখানে বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় ঘোষণা করে। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়।

এই রায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পাঠানো হয়। আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন আবশ্যক। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। সব আবেদন একসঙ্গে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্ট রায়ে বলেন, দ্বিতীয় চার্জশিট গ্রহণের সময় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিবর্তে সরাসরি বিচারিক আদালত তা গ্রহণ করে, যা আইনবিরোধী। এই ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন, বিচার এবং রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়। ফলে সব আসামি খালাস পান।

খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, হরকাতুল জিহাদ নেতা তাজউদ্দিন, কাশ্মীরি নাগরিক মাজেদ ভাট, মুফতি হান্নানের ভাই মফিজুর রহমান অভি, হাফেজ আবু তাহের, মাওলানা লিটনসহ মোট ৩৮ জন।

এই মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা থেকে খালাস পান। তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও অনেকে রয়েছেন।

আলোচিত এ হামলায় ২৪ জন নিহত হলেও দায়ীদের শাস্তির পথ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এখন আপিল বিভাগে শুনানির মাধ্যমে মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে আগাচ্ছে দেশের বিচারব্যবস্থা। এই মামলার রায় রাজনৈতিক ও আইনি অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ