এক যুগেও হয়নি বিচার: বিশ্বজিৎ হত্যায় হতাশ পরিবার

২০২৫ জুলাই ১৫ ১৪:৪৮:১৮
এক যুগেও হয়নি বিচার: বিশ্বজিৎ হত্যায় হতাশ পরিবার

এক যুগ আগে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে broad daylight-এ খুন হয়েছিলেন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস। জনসমক্ষে কুপিয়ে হত্যার ওই বিভীষিকাময় ঘটনায় জড়িত ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১২ বছর পার হলেও আজও বিচারের আশায় দিন গুনছে তার পরিবার। তাদের আক্ষেপ, ন্যায়বিচার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন শুধু রাজনৈতিক রঙের কারণে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে শাঁখারীবাজারে নিজ দর্জির দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে পথ আটকে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নিরীহ বিশ্বজিৎ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

তবু এই নির্মম হত্যার দীর্ঘসূত্রতা ও খণ্ডিত বিচারের জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করছেন তার পরিবার। বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম দাস বলেন, “ভাইকে খুন করার আলামত, ভিডিও, ছবি—সব ছিল। অথচ বিচার পাইনি। আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালেই মামলা চলেছে, জজ কোর্টে সাজা হয়েছে, কিন্তু হাইকোর্টে গিয়ে তা গলে গেছে। খুনিরা আজ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়।”

সম্প্রতি মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যা করার প্রসঙ্গ টেনে উত্তম বলেন, “যেভাবে সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে, ১২ বছর আগে ভাইকেও তেমনি কুপিয়ে মারা হয়েছিল। বিশ্বজিতের বিচার যদি আগে হতো, তবে আজ অন্য কেউ প্রকাশ্যে খুন করতে সাহস পেত না।”

তিনি বলেন, “শুধু বিচারটাই চেয়েছিলাম, আর কিছু না। কিন্তু সেটাই তো পাইনি। শেখ হাসিনার পতনের পর আশা করেছিলাম বিচার হবে। কিন্তু আজও কোনো অগ্রগতি দেখি না।”

৭৩ বছর বয়সী বাবা অনন্ত দাসও সেই একই কষ্ট বয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, “মামলার বাদী তো সরকার, রায়ের কী হলো আমরা জানি না। হাইকোর্টে অনেককে ছেড়ে দিয়েছে। এখন তো শেখ হাসিনাও নেই, তাহলে এখন বিচার করতে সমস্যা কোথায়?”

হত্যাকাণ্ডের পর সূত্রাপুর থানার এসআই জালাল আহমেদ মামলা করেন ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে। এরপর ২০১৩ সালের মার্চে তদন্ত শেষ করে ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। একই বছর জুনে বিচার শুরু হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন দেন। কিন্তু ২০১৭ সালে হাইকোর্ট রায় পুনর্বিবেচনা করে শুধু দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে, চারজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করে এবং দুজনকে খালাস দেয়। যাবজ্জীবন পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আরও দুজন আপিলে খালাস পান।

যারা হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা (যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত)। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদার। বর্তমানে মামলাটি আপিলে বিচারাধীন।

বিশ্বজিতের পরিবারের মতে, এই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই বহু আসামি রেহাই পেয়ে গেছেন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। “অন্য কোনো দলের কেউ খুন করলে কি এভাবে ছুটি পেত?”—উত্তম দাসের এই প্রশ্নেই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আজকের বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে দেশের বহু সাধারণ মানুষের আশঙ্কা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ