নিষেধাজ্ঞা দিলে যুদ্ধ অনিবার্য, ইরানের চূড়ান্ত বার্তা ইউরোপকে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৬:৫৮:৫৭
 নিষেধাজ্ঞা দিলে যুদ্ধ অনিবার্য, ইরানের চূড়ান্ত বার্তা ইউরোপকে

ইরান ও ইউরোপের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে একটি পুরনো এবং বিতর্কিত চুক্তিকে কেন্দ্র করে। তেহরান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, ইউরোপ যদি আবারও ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামক নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নেয়, তবে সম্পর্ক নয়, শুরু হবে প্রতিরোধের নতুন পর্ব।

সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে কড়া বার্তা দেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই হামাদানি। তার ভাষায়, "স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থার কোনো আইনি ভিত্তি নেই, নেই রাজনৈতিক নৈতিকতাও। আর এটি প্রয়োগ করা হলে আমরা আর বসে থাকব না।"

স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থা মূলত ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি—‘জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বা জেসিপিওএর অংশ। এই চুক্তিতে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার শর্তে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিল। তবে চুক্তিতে এমন একটি ধারা রাখা হয়েছিল, যার মাধ্যমে যে কোনো দেশ অভিযোগ তুললে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায়—এটিই স্ন্যাপব্যাক।

তেহরানের অভিযোগ, ইউরোপ এখন এই ধারাটি অপব্যবহার করতে চাইছে। ফরাসি কূটনৈতিক সূত্রমতে, ইউরোপীয় দেশগুলো পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ায় নিরাপত্তার প্রশ্নে জাতিসংঘে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। আর এই হুমকিই ইরানের পক্ষ থেকে দেখা হচ্ছে চুক্তির চূড়ান্ত অপব্যবহার হিসেবে।

বাঘাই বলেন, “এই ধরনের চাপ কূটনৈতিক সম্পর্কের বদলে আমাদের ঠেলে দেবে প্রতিরোধের রাজনীতিতে। এটা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।” তিনি আরও বলেন, ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির অধিকার ছাড়বে না এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলবে এমন কোনো সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে না।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে জেসিপিওএ চুক্তি থেকে সরে আসেন। এরপর থেকেই চুক্তির ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ইউরোপ যদিও চুক্তি টিকিয়ে রাখার কথা বলেছিল, কিন্তু ইরানের মতে, তারা নিজেদের দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলায় ইরানের কিছু পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির পর, দেশটি এখন আরও বেশি সংবেদনশীল ও কড়া অবস্থানে চলে গেছে। এর মাঝেই যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় ফেরার ইঙ্গিত দিলেও, তেহরান জানিয়েছে, তারা আলোচনায় আসবে—তবে নিজেদের শর্তে।

বর্তমানে ইউরোপ ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক এক অস্থির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ইরান বলছে—সংলাপ চলবে সম্মানের ভিত্তিতে, না হলে শুরু হবে ভিন্ন ধাঁচের কূটনীতি। তেহরান এটিকে কেবল নীতির প্রশ্ন নয়, বরং জাতীয় মর্যাদার প্রশ্ন বলে দেখছে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, স্ন্যাপব্যাক কার্যকর হলে তার প্রভাব কেবল পারমাণবিক কর্মসূচিতে নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ https://youtu.be/_7VO8bzqa1s?si=fAjwGBX_I7DFjDfh

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ