ভাষান্তর

শতাব্দীর প্রভাবশালী দলিল ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র—তৃতীয় পর্বের শেষাংশ

ইতিহাস ও দর্শন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৭:২১:৩৬
শতাব্দীর প্রভাবশালী দলিল ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র—তৃতীয় পর্বের শেষাংশ

রাজনৈতিক দর্শনের ইতিহাসে এক অনন্য দলিল হলো কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। জার্মান ভাষায় এর মূল নাম “Manifesto der Kommunistischen Partei”, অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার। বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্কস এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস ১৮৪৮ সালে এই এটি লিখেন, যা প্রথম প্রকাশিত হয় লন্ডনে। ১৮৪৮ সালে যখন এটি ইউরোপে প্রকাশিত হয়, তখনকার বিপ্লবাত্মক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি ছিল এক যুগান্তকারী লেখা। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-কে আজও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলিলগুলোর অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।

এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির চারটি অধ্যায় রয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে আমরা এর ভাবানুনাদ পাঠকদের কাছে তুলে ধরছি। আজ আমরা তৃতীয় পর্বের শেষাংশে বিভিন্ন বিদ্যমান বিরোধী দলের প্রতি কমিউনিস্টদের অবস্থান, এ সম্পর্কে কার্ল মার্কসকে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের চিঠি, কমিউনিস্ট বিশ্বাস স্বীকারোক্তির খসড়া এবং একজন কমিউনিস্টের বিশ্বাস স্বীকারোক্তি (A Communist Confession of Faith) এর সরল, পরিশীলিত ও ব্যাখ্যামূলক ভাষান্তর পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করছি। আশাকরি পাঠকরা সহজভাবে এর মূল ভাবনা ও তাৎপর্য বুঝতে পারবেন।

বিভিন্ন বিদ্যমান বিরোধী দলের প্রতি কমিউনিস্টদের অবস্থান

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ইতোমধ্যেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে ইংল্যান্ডে চার্টিস্ট আন্দোলন এবং আমেরিকায় কৃষি সংস্কারপন্থীদের মতো বিদ্যমান শ্রমিক শ্রেণির দলগুলোর প্রতি কমিউনিস্টদের সম্পর্ক কেমন।

কমিউনিস্টরা শ্রমিক শ্রেণির তাৎক্ষণিক লক্ষ্য এবং মুহূর্তের প্রয়োজনীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করে। তবে তারা কেবলমাত্র বর্তমান আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সেই আন্দোলনের ভবিষ্যত্‌তাকেও তারা প্রতিনিধিত্ব করে এবং তার সুরক্ষাও করে।

ফ্রান্সে কমিউনিস্টরা রক্ষণশীল এবং চরমপন্থী বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলে। তবে তারা ফরাসি বিপ্লবের উত্তরাধিকার হিসেবে যে সব বিভ্রম ও ধাপ প্রচলিত আছে, সেগুলোর প্রতি সমালোচনামূলক অবস্থান গ্রহণের অধিকারও সংরক্ষণ করে।

সুইজারল্যান্ডে তারা র‍্যাডিকালদের সমর্থন করে। তবে তারা ভুলে যায় না যে এই দলটি পরস্পরবিরোধী উপাদানে গঠিত। এর একটি অংশ হলো ফরাসি অর্থে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী এবং অন্যটি চরমপন্থী বুর্জোয়া।

পোল্যান্ডে তারা সেই দলটির পাশে দাঁড়ায় যারা মনে করে, জাতীয় মুক্তির প্রধান শর্ত হলো কৃষিভিত্তিক বিপ্লব। এই দলটিই ১৮৪৬ সালের ক্রাকো বিদ্রোহ সংঘটনে নেতৃত্ব দেয়।

জার্মানিতে কমিউনিস্টরা বুর্জোয়া শ্রেণির সঙ্গে যৌথভাবে লড়াই করে, যখন সেই শ্রেণি বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সংগ্রামের লক্ষ্য থাকে একচেটিয়া রাজতন্ত্র, সামন্ত প্রভুশ্রেণি এবং ক্ষুদ্র বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে।

তবে তারা কখনোই এক মুহূর্তের জন্যও থেমে যায় না শ্রমিক শ্রেণিকে এই শিক্ষা দিতে যে বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের মধ্যে একটি মৌলিক বৈরিতা ও শত্রুতা বিরাজ করে। তারা চায় যেন জার্মান শ্রমিকরা, বুর্জোয়া শ্রেণির কর্তৃত্বের সঙ্গে সঙ্গে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো অবশ্যম্ভাবীভাবে আসবে, সেগুলোকে বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শেখে। এভাবে, জার্মানির প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণিগুলোর পতনের পরপরই যেন বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধেও সংগ্রাম শুরু করা যায়।

কমিউনিস্টদের বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ থাকে জার্মানির দিকে, কারণ এই দেশটি একটি বুর্জোয়া বিপ্লবের প্রাক্কালে অবস্থান করছে। এই বিপ্লব সংঘটিত হবে ইউরোপীয় সভ্যতার তুলনামূলকভাবে উন্নত পরিস্থিতিতে এবং এমন এক প্রলেতারিয়েত শ্রেণির দ্বারা, যা সতেরো শতকের ইংল্যান্ড কিংবা আঠারো শতকের ফ্রান্সের তুলনায় অধিক পরিণত। তদুপরি, জার্মানির বুর্জোয়া বিপ্লব হবে অবিলম্বে ঘনিয়ে আসা প্রলেতারিয়েত বিপ্লবের এক পূর্বসূচনা।

সার্বিকভাবে, কমিউনিস্টরা বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি বিপ্লবী আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ সকল আন্দোলনে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বাগ্রে সম্পত্তির প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে, তা যে পর্যায়েই থাকুক না কেন।

সবশেষে, তারা কাজ করে বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা স্থাপনের লক্ষ্যে।

কমিউনিস্টরা নিজেদের মতাদর্শ ও লক্ষ্যের কথা গোপন রাখে না। তারা খোলাখুলিভাবে ঘোষণা করে যে তাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র বিদ্যমান সমস্ত সামাজিক শর্তের বলপ্রয়োগে ধ্বংসের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব।

শাসক শ্রেণিরা যেন কমিউনিস্ট বিপ্লবের কাছে শিহরিত হয়।

প্রলেতারিয়েতের হারানোর কিছু নেই, কেবল তাদের শৃঙ্খল ছাড়া। তাদের সামনে রয়েছে একটি জয়ী বিশ্ব।

সকল দেশের শ্রমিকগণ, ঐক্যবদ্ধ হও।

কার্ল মার্কসকে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের চিঠি

প্যারিস, ২৩–২৪ নভেম্বর ১৮৪৭

প্রিয় মার্কস,

এই সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি যে আমি যাচ্ছি।তাহলে দেখা হচ্ছে শনিবার সন্ধ্যায়, ওস্টেন্ডে, হোটেল দ্য লা কুরোন-এ, যেটি বন্দর সংলগ্ন রেলস্টেশনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত।রবিবার সকালে আমরা জলপথে পার হবো।তুমি যদি বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটি ধরো, তাহলে তুমি আমার সঙ্গে প্রায় একই সময়ে পৌঁছাবে।

... মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ভার্টে(পৃষ্ঠার উল্টো দিকে দেখো)

“বিশ্বাসস্বীকারোক্তি” বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবো।আমার ধারণা, আমরা ‘প্রশ্নোত্তরমূলক’ কাঠামোটি বাদ দিয়ে এই লেখাটিকে “কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো” নামে প্রকাশ করলেই ভালো হবে।যেহেতু এতে ইতিহাসের কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া অপরিহার্য, তাই পূর্ববর্তী রূপটি এই কাজের জন্য উপযুক্ত নয়।

আমি এখানকার যেটি করেছি [Principles of Communism], সেটি সঙ্গে আনবো।এটি সাধারণ বর্ণনামূলক রূপে লেখা, কিন্তু অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে লেখা হওয়ায় ভাষা অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়েছে।আমি শুরু করেছি এই প্রশ্ন দিয়ে—“কমিউনিজম কী?”এরপর সরাসরি চলে গেছি প্রলেতারিয়েত-এর বিষয়ে।বর্ণনা করেছি তার উৎপত্তির ইতিহাস, পূর্ববর্তী শ্রমজীবীদের থেকে তার পার্থক্য, প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বন্দ্বের বিকাশ, সংকটসমূহ এবং উপসংহার।এর ফাঁকে বিভিন্ন গৌণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং শেষে রেখেছি কমিউনিস্টদের দলগত নীতি, যতটুকু প্রকাশযোগ্য।

এই পাঠ্য এখনো সম্পূর্ণভাবে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়নি।তবে, কিছু অপ্রাসঙ্গিক বা তুচ্ছ বিষয় বাদ দিলে, আমি মনে করি এটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারবো যাতে এর কোনোকিছু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়।

কমিউনিস্ট বিশ্বাস স্বীকারোক্তির খসড়া

এই দলিলটি হলো কমিউনিস্ট লীগের প্রথম কংগ্রেসে (লন্ডন, ২–৯ জুন ১৮৪৭) আলোচিত কর্মসূচির একটি খসড়া। এই কংগ্রেসটি ছিল “লিগ অব দ্য জাস্ট” নামে পরিচিত সংগঠনটির পুনর্গঠনের চূড়ান্ত ধাপ। উক্ত সংগঠনটি ১৮৩৬–৩৭ সালে প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ছিল মূলত জার্মান শ্রমিক ও কারিগরদের একটি সংগঠন। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি একটি আন্তর্জাতিক চরিত্র অর্জন করে এবং জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন ও সুইডেনে এর শাখা সম্প্রসারিত হয়।

মার্কস ও এঙ্গেলসের সক্রিয় তত্ত্বগত ও সাংগঠনিক ভূমিকা, যা সমাজতন্ত্রী ও অগ্রসর শ্রমিকদের মধ্যে মতাদর্শগত ঐক্য গঠনের দিকে পরিচালিত হয়, তা “লিগ অব দ্য জাস্ট”-এর লন্ডন-অবস্থিত নেতৃবৃন্দকে (কার্ল শাপার, জোসেফ মল, হাইনরিশ বাউয়ার) অনুপ্রাণিত করে। ১৮৪৬ সালের নভেম্বর থেকে এই নেতারা মার্কস ও এঙ্গেলসের কাছে অনুরোধ করেন—লিগকে পুনর্গঠন করতে এবং এর জন্য একটি নতুন কর্মসূচি প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে।

যখন মার্কস ও এঙ্গেলস নিশ্চিত হন যে, এই নেতারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নীতিগুলোকে সংগঠনের কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত, তখন ১৮৪৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে তারা লীগের সদস্যপদ গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

এই কংগ্রেসে এঙ্গেলসের সক্রিয় অংশগ্রহণ (মার্কস লন্ডনে যেতে পারেননি) কংগ্রেসের গতি ও ফলাফলের উপর সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে “কমিউনিস্ট লীগ” রাখা হয় এবং পূর্বের আদর্শবাক্য “সকল মানুষ ভাই” (All men are brothers)-এর পরিবর্তে নতুন মার্কসবাদী স্লোগান “বিশ্বের শ্রমিকরা এক হও” (Working Men of All Countries, Unite!) গ্রহণ করা হয়।

কংগ্রেসের শেষ দিনে, অর্থাৎ ৯ জুন ১৮৪৭, সংগঠনের খসড়া কর্মসূচি ও খসড়া বিধিনিয়ম পাস হয়।

এই “কমিউনিস্ট বিশ্বাসস্বীকারোক্তি” (Credo)-এর পূর্ণ পাঠ্য প্রথমবারের মতো জানা যায় ১৯৬৮ সালে, যখন সুইস গবেষক বার্ট আঁদ্রেয়াস এই খসড়া বিধিনিয়ম ও প্রথম কংগ্রেসের সদস্যদের উদ্দেশে প্রেরিত একটি সার্কুলারের সঙ্গে এটি আবিষ্কার করেন। এই দলিলগুলো ছিল কমিউনিস্ট লীগের সক্রিয় সদস্য জোয়াখিম ফ্রিডরিশ মার্টেন্সের ব্যক্তিগত সংগ্রহে, যা বর্তমানে হামবুর্গ রাজ্য ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে।

এই আবিষ্কার কমিউনিস্ট লীগের ইতিহাস এবং এর কর্মসূচির দলিল তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে।

পূর্বে ধারণা করা হতো যে, প্রথম কংগ্রেসে শুধু একটি কর্মসূচি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং এরপর জুন থেকে আগস্ট ১৮৪৭ এর মধ্যে লন্ডনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ (জোসেফ মল, কার্ল শাপার, হাইনরিশ বাউয়ার) এই খসড়াটি তৈরি করেন।

তবে নতুন প্রাপ্ত দলিলগুলো প্রমাণ করে যে, খসড়াটি ৯ জুন ১৮৪৭ তারিখেই প্রস্তুত ছিল এবং এর লেখক ছিলেন ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস। মার্টেন্সের সংগ্রহে পাওয়া পাণ্ডুলিপিটি এঙ্গেলসের হাতের লেখা। কেবল কয়েকটি শব্দ, উপসংহার এবং কংগ্রেসের সভাপতি ও সচিবের স্বাক্ষর ছাড়া বাকিটুকু তাঁরই রচনা।

এই দলিলটি প্রমাণ করে যে কংগ্রেসে কর্মসূচির আলোচনায় এঙ্গেলসের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরই বিশুদ্ধ মার্ক্সবাদী রূপে রচিত।

এছাড়া, কর্মসূচির খসড়া তৈরির সময় এঙ্গেলসকে এই বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হয়েছিল যে, লীগ সদস্যরা তখনো পর্যন্ত ইউটোপিয়ান সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হননি। এটি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে প্রথম ছয়টি প্রশ্ন ও উত্তররূপে।

এই “বিপ্লবী ধর্মপুস্তক” বা "catechism"-এর ধরন সে সময় “লিগ অব দ্য জাস্ট” এবং অন্যান্য শ্রমিক ও কারিগর সংগঠনে খুব প্রচলিত ছিল।

এটি ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এঙ্গেলস ভবিষ্যতে এই কর্মসূচির দলিলটির ভাষা ও যুক্তির আরও পরিমার্জন ও নির্ভুলতা আনার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছিলেন।

প্রথম কংগ্রেসের পর “কমিউনিস্ট বিশ্বাসস্বীকারোক্তি” এবং খসড়া বিধিনিয়ম সংগঠনের অন্যান্য শাখায় পাঠানো হয়। এই পাঠ্যের ওপর আলোচনার ফলাফল বিবেচনা করে পরবর্তী দ্বিতীয় কংগ্রেসে কর্মসূচি ও বিধিনিয়মের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে—এই ছিল পরিকল্পনা।

১৮৪৭ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে, এঙ্গেলস যখন Principles of Communism নামে একটি পরিমার্জিত কর্মসূচি রচনা করছিলেন, তখন তিনি সরাসরি এই “বিশ্বাসস্বীকারোক্তি” দলিলটিকে ব্যবহার করেছিলেন। দুই দলিলের পাঠ্যাংশে মিল দেখা যায় এবং Principles-এ পূর্ববর্তী দলিলটির প্রতি ইঙ্গিতও পাওয়া যায়, যেখানে এঙ্গেলস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কিছু উত্তর পূর্বের মতোই রেখে দেওয়া হবে।

একজন কমিউনিস্টের বিশ্বাস স্বীকারোক্তি (A Communist Confession of Faith)

প্রণেতা: ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস
লন্ডন, ৯ জুন ১৮৪৭

প্রশ্ন ১: আপনি কি একজন কমিউনিস্ট?
উত্তর: হ্যাঁ।

প্রশ্ন ২: কমিউনিস্টদের লক্ষ্য কী?
উত্তর: সমাজকে এমনভাবে সংগঠিত করা যাতে তার প্রতিটি সদস্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতার মধ্যে নিজ নিজ ক্ষমতা ও দক্ষতার সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও প্রয়োগ করতে পারে, এবং তাতে সমাজের মৌলিক শর্তাবলীর কোনো লঙ্ঘন না ঘটে।

প্রশ্ন ৩: এই লক্ষ্য আপনি কীভাবে বাস্তবায়ন করতে চান?
উত্তর: ব্যক্তিগত মালিকানা বিলুপ্ত করে তাকে সামাজিক মালিকানা দিয়ে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন ৪: এই সামাজিক মালিকানার ভিত্তি কী?
উত্তর: প্রথমত, শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য এবং ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনশীল শক্তি ও জীবনধারণের উপকরণের বিপুল পরিমাণ সঞ্চয়ের ওপর। যন্ত্র, রসায়ন ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে যা ক্রমাগত সম্প্রসারিত হওয়ার সামর্থ্য রাখে।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক ব্যক্তির চেতনা বা অনুভবে নিহিত কিছু অপ্রতিরোধ্য মৌলিক নীতির ওপর, যা সমগ্র ঐতিহাসিক বিকাশের ফলাফল হিসেবে প্রমাণের প্রয়োজন ছাড়াই গ্রহণযোগ্য।

প্রশ্ন ৫: এমন মৌলিক নীতিগুলো কী কী?
উত্তর: যেমন, প্রত্যেক ব্যক্তি সুখী হতে চায়। ব্যক্তিগত সুখ সর্বসাধারণের সুখ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৬: আপনি কীভাবে এই সামাজিক মালিকানার পথ প্রস্তুত করতে চান?
উত্তর: প্রলেতারিয়েতকে প্রজ্ঞা দিয়ে আলোকিত ও ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে।

প্রশ্ন ৭: প্রলেতারিয়েত কী?
উত্তর: সমাজের সেই শ্রেণি যারা শুধুমাত্র নিজেদের শ্রমের মাধ্যমে বেঁচে থাকে, কোনো ধরণের মূলধনের মুনাফা থেকে নয়। এদের জীবন ও মৃত্যু নির্ভর করে ব্যবসার চক্রাকার উত্থান-পতনের ওপর। সংক্ষেপে, প্রতিযোগিতার ওঠানামার ওপর।

প্রশ্ন ৮: তাহলে কি সব সময় প্রলেতারিয়েত ছিল?
উত্তর: না। গরিব ও শ্রমজীবী শ্রেণি সর্বদা ছিল, আর যারা কাজ করত তারা প্রায় সবসময়ই ছিল দরিদ্র। কিন্তু প্রলেতারিয়েত সর্বদা ছিল না, যেমন প্রতিযোগিতাও সবসময় মুক্ত ছিল না।

প্রশ্ন ৯: প্রলেতারিয়েত কীভাবে গড়ে উঠল?
উত্তর: প্রলেতারিয়েত গঠিত হয় বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে। এসব যন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্টিম ইঞ্জিন, স্পিনিং মেশিন এবং পাওয়ার লুম। এ যন্ত্রগুলো ছিল ব্যয়বহুল এবং শুধুমাত্র ধনীদের পক্ষেই ক্রয়যোগ্য। তারা শ্রমিকদের প্রতিস্থাপন করেছিল, কারণ যন্ত্র ব্যবহারে পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছিল দ্রুত এবং কম খরচে। এর ফলে শিল্প গিয়েছিল ধনী পুঁজিপতিদের হাতে, এবং শ্রমিকদের সামান্য যে সম্পত্তি—তাঁদের হাতের যন্ত্র, তাঁত ইত্যাদি—তা হয়ে পড়েছিল মূল্যহীন। ফলে পুঁজিপতিরা পায় সবকিছু, আর শ্রমিক পায় কিছুই না।

এইভাবেই গড়ে উঠেছিল কারখানা ব্যবস্থা। পুঁজিপতিরা বুঝতে পারে এই ব্যবস্থা তাঁদের জন্য কতটা লাভজনক, এবং তাঁরা এটিকে আরও বেশি কাজের ক্ষেত্রে প্রসারিত করে। তাঁরা শ্রমিকদের কাজ বিভক্ত করে, ফলে আগে যারা একটি সম্পূর্ণ পণ্য তৈরি করত, তারা এখন শুধুমাত্র তার একটি অংশ বানায়। এই সরলীকরণে উৎপাদন দ্রুত হয় এবং কম খরচে হয়। তখন দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কাজেই যন্ত্রের ব্যবহার সম্ভব। একবার কোনো শাখা কারখানাভিত্তিক উৎপাদনে গেলে, সেটিও পুঁজিপতিদের হাতে চলে যায়, আর শ্রমিকেরা হারায় শেষ স্বাধীনতাটুকু।

আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে প্রায় সব কাজই কারখানা ভিত্তিক। এই প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছে পূর্ববর্তী মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র কারিগরদের, আর শ্রমিকদের অবস্থানকে পুরোপুরি রূপান্তর করেছে। এর ফলে গড়ে উঠেছে দুইটি নতুন শ্রেণি:

১. ধনী পুঁজিপতিদের শ্রেণি, যারা উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে প্রায় একচেটিয়া দখলে রেখেছে জীবিকা নির্বাহের উপায় ও সেইসব উপায় (যন্ত্র, কারখানা, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি) যেগুলো দিয়ে এসব জীবনধারণের উপায় উৎপাদিত হয়। এদের বলা হয় বুর্জোয়া শ্রেণি বা বুর্জোয়াজি।
২. একেবারে সম্পত্তিহীন শ্রেণি, যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য বাধ্য হয়ে নিজেদের শ্রম বিক্রি করে বুর্জোয়াদের কাছে, যাতে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে পারে। যেহেতু এই লেনদেনে পক্ষদ্বয় সমান নয় এবং বুর্জোয়াদের হাতে সুবিধা, তাই শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে বুর্জোয়া দ্বারা নির্ধারিত প্রতিকূল শর্ত মেনে চলতে হয়। এই শ্রেণিকে বলা হয় প্রলেতারিয়েত।

প্রশ্ন ১০: প্রলেতারিয়েত কিভাবে দাসের থেকে ভিন্ন?
উত্তর: দাস একবারের জন্য বিক্রি হয়, প্রলেতারিয়েতকে প্রতিদিন কিংবা প্রতি ঘণ্টায় নিজেকে বিক্রি করতে হয়।
দাস একজন প্রভুর সম্পত্তি এবং সেই কারণেই, তার জীবিকা—যতই করুণ হোক না কেন—গ্যারান্টি দেওয়া থাকে।
প্রলেতারিয়েত বলতে গেলে পুরো বুর্জোয়া শ্রেণির দাস, কোনো একক প্রভুর নয়, ফলে তার জীবিকা কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়, কারণ তার শ্রম তখনই কেনা হয় যখন বুর্জোয়া শ্রেণির প্রয়োজন পড়ে।
দাসকে সমাজে ব্যক্তি নয়, বস্তুর মর্যাদা দেওয়া হয়।
প্রলেতারিয়েতকে ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সে নাগরিক সমাজের একজন সদস্য।
সুতরাং, দাসের জীবিকা প্রলেতারিয়েতের চেয়ে ভালো হতে পারে, কিন্তু প্রলেতারিয়েত উন্নয়নের উচ্চতর স্তরে অবস্থান করে।
দাস মুক্ত হয় যখন সে প্রলেতারিয়েতে রূপান্তরিত হয়, অর্থাৎ সম্পত্তিগত সম্পর্কের মধ্যে কেবল দাসত্বের সম্পর্কটিকেই বিলোপ করে।
কিন্তু প্রলেতারিয়েত সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে কেবল তখনই, যখন সে সমস্ত ধরনের সম্পত্তির মালিকানাই বিলুপ্ত করে।

প্রশ্ন ১১: প্রলেতারিয়েত কীভাবে ক্রীষক বা সার্ফ থেকে আলাদা?
উত্তর: সার্ফ ভূমি ব্যবহারের সুযোগ পায়, অর্থাৎ উৎপাদনের একটি উপকরণের মালিক হয়, বিনিময়ে তাকে তার উৎপাদনের একটি অংশ হস্তান্তর করতে হয়।
প্রলেতারিয়েত এমন উপকরণ দিয়ে কাজ করে যেগুলোর মালিক অন্য কেউ, এবং তার শ্রমের বিনিময়ে সে পায় প্রতিযোগিতা দ্বারা নির্ধারিত একটি অংশ।
সার্ফের আয় নির্ধারিত হয় তার নিজের শ্রম দ্বারা, অর্থাৎ তার নিজের দ্বারা;
প্রলেতারিয়েতের ভাগ্য নির্ধারিত হয় প্রতিযোগিতা দ্বারা, অর্থাৎ বুর্জোয়ার দ্বারা।
সার্ফের জীবিকা গ্যারান্টিযুক্ত, প্রলেতারিয়েতের নয়।
সার্ফ স্বাধীন হয় তার প্রভুকে বিতাড়ন করে এবং নিজেই জমির মালিক হয়ে প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করে, ফলে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সে হয়ে ওঠে মালিক শ্রেণির একজন সদস্য।
প্রলেতারিয়েত স্বাধীন হয় সম্পত্তি, প্রতিযোগিতা ও শ্রেণি ব্যবস্থার বিলুপ্তির মাধ্যমে।

প্রশ্ন ১২: প্রলেতারিয়েত কীভাবে হস্তশিল্পী থেকে ভিন্ন?
উত্তর: হস্তশিল্পী, যিনি গত শতাব্দীতে প্রায় সর্বত্র ছিলেন এবং এখনো কোথাও কোথাও বিদ্যমান, তিনি মূলত একজন অস্থায়ী প্রলেতারিয়েত।
তার লক্ষ্য হচ্ছে নিজেই মূলধন সংগ্রহ করে অন্য শ্রমিককে শোষণ করা।
এই লক্ষ্য সে তখনই অর্জন করতে পারে যখন কোথাও গিল্ড ব্যবস্থা এখনো টিকে আছে কিংবা যেখানে পেশাগত স্বাধীনতা এখনো শিল্পকে কারখানা ভিত্তিক উৎপাদনে রূপান্তর করেনি এবং প্রতিযোগিতা তীব্র হয়নি।
কিন্তু যেই মুহূর্তে হস্তশিল্পে কারখানা ব্যবস্থা প্রবেশ করে এবং প্রতিযোগিতা তীব্র হয়, তখন এই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় এবং হস্তশিল্পী প্রলেতারিয়েতে পরিণত হন।
হস্তশিল্পী মুক্ত হতে পারেন হয় বুর্জোয়া শ্রেণিতে প্রবেশ করে, অথবা প্রতিযোগিতার ফলে প্রলেতারিয়েত হয়ে গিয়ে প্রলেতারিয়েত আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে—অর্থাৎ সচেতন বা অসচেতনভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সদস্য হয়ে।

প্রশ্ন ১৩: তাহলে আপনি কি বিশ্বাস করেন না যে কখনোই যৌথ সম্পত্তির ভিত্তিতে সমাজ গঠিত হয়েছে?
উত্তর: না।
কমিউনিজম কেবল তখনই সম্ভব হয়েছে যখন যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উদ্ভাবন এমন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যেখানে সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্য সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও সুখী জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে।
কমিউনিজম এক ধরনের মুক্তির তত্ত্ব যা দাস, সার্ফ বা হস্তশিল্পীদের জন্য সম্ভব ছিল না—এটি কেবল প্রলেতারিয়েতদের মাধ্যমেই সম্ভব এবং এ কারণেই এটি উনিশ শতকের একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। পূর্ববর্তী কোনো যুগে তা সম্ভব ছিল না।

প্রশ্ন ১৪: আসুন আমরা ষষ্ঠ প্রশ্নে ফিরে যাই। আপনি যদি প্রলেতারিয়েতকে আলোকিত ও ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে যৌথ সম্পত্তির পথে প্রস্তুতি নিতে চান, তাহলে কি আপনি বিপ্লবকে প্রত্যাখ্যান করেন?
উত্তর: আমরা কেবল সব ধরনের ষড়যন্ত্রের অকার্যকারিতা নয়, বরং তার ক্ষতিকর প্রভাবেও বিশ্বাস করি।
আমরা জানি বিপ্লব ইচ্ছা বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গঠিত হয় না, বরং তা সর্বত্র এবং সবসময় পরিস্থিতির অনিবার্য পরিণতি যা ব্যক্তি বা শ্রেণির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়।
কিন্তু আমরা এটাও দেখি যে, প্রায় সব দেশে প্রলেতারিয়েতদের বিকাশ সম্পদশালী শ্রেণিরা বলপ্রয়োগে দমন করছে।
ফলে বিপ্লব একরকম এই বিরোধীরা নিজেরাই বাধ্য করছে।
যদি অবশেষে প্রলেতারিয়েত বিপ্লবে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আমাদের কাজ দিয়ে ঠিক যেমনভাবে এই মুহূর্তে আমাদের শব্দ দিয়ে তাদের পক্ষে আছি, তখনও থাকব।

প্রশ্ন ১৫: আপনি কি বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে এক লাফে যৌথ সম্পত্তির ব্যবস্থায় রূপান্তর করতে চান?
উত্তর: না, আমাদের এমন কোনো অভিপ্রায় নেই।
জনগণের বিকাশ কোনো ফরমান বা নির্দেশে সংঘটিত হয় না।
এটি নির্ধারিত হয় সেই পরিস্থিতির দ্বারা, যেখানে তারা বাস করে এবং সুতরাং তা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়।

প্রশ্ন ১৬: তাহলে এই রূপান্তর আপনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন?
উত্তর: যৌথ সম্পত্তি প্রবর্তনের প্রথম ও মৌলিক শর্ত হলো প্রলেতারিয়েতের রাজনৈতিক মুক্তি, যা একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে।

প্রশ্ন ১৭: একবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, আপনার প্রথম পদক্ষেপ কী হবে?
উত্তর: প্রলেতারিয়েতের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান।

প্রশ্ন ১৮: আপনি কীভাবে এটি করবেন?
উত্তর:
১. ব্যক্তিগত মালিকানাকে সীমিত করে, ধাপে ধাপে সামাজিক মালিকানার পথে রূপান্তরের জন্য, যেমন ধাপে ধাপে কর বৃদ্ধি, উত্তরাধিকার অধিকারের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির মাধ্যমে।
২. জাতীয় কর্মশালা ও কারখানায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান প্রদান করে।
৩. সকল শিশুদের রাষ্ট্রীয় খরচে শিক্ষাদান করে।

প্রশ্ন ১৯: এই রূপান্তরকালীন সময়কালে আপনি কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করবেন?
উত্তর: যখনই শিশু মায়ের প্রাথমিক যত্ন ছাড়া থাকতে পারবে, তখন থেকেই সে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করবে।

প্রশ্ন ২০: তাহলে যৌথ সম্পত্তির প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কি নারীদের যৌথ ব্যবহারের ঘোষণাও আসবে?
উত্তর: মোটেই না।
আমরা পুরুষ-নারীর পারস্পরিক সম্পর্ক কিংবা পরিবারের ক্ষেত্রে কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করব যখন বিদ্যমান পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নতুন সমাজব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটাবে।
তাছাড়া আমরা সচেতন যে, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্ব ও সম্পত্তিগত সম্পর্ক অনুযায়ী পারিবারিক সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলুপ্তি পরিবারকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।

প্রশ্ন ২১: কমিউনিজমে জাতিগত পরিচয় টিকে থাকবে কি?
উত্তর: যেসব জাতিগোষ্ঠী কমিউনিটির নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে, তারা নিজে থেকেই একে অপরের সঙ্গে মিশে যাবে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের আলাদা অস্তিত্ব বিলুপ্ত করবে, যেমনভাবে শ্রেণি ও বর্ণভেদের পার্থক্য বিলুপ্ত হয় সম্পত্তিগত ভিত্তি বিলুপ্তির মাধ্যমে।

প্রশ্ন ২২: তাহলে কি কমিউনিস্টরা বিদ্যমান সব ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে?
উত্তর: পূর্বে যেসব ধর্ম ছিল, তারা ইতিহাসের নির্দিষ্ট পর্যায়ে নির্দিষ্ট জাতির বা জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নের প্রতিফলন ছিল।
কিন্তু কমিউনিজম হলো এমন এক ইতিহাস-পর্যায়ের প্রতিফলন, যা বিদ্যমান সব ধর্মকে অপ্রয়োজনীয় ও অতীত করে তোলে।

চলবে...

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ