বিজ্ঞান

মিলল মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণগহ্বর সংঘর্ষের প্রমাণ

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৯:৫০:৩১
মিলল মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণগহ্বর সংঘর্ষের প্রমাণ

মহাবিশ্বের এক রহস্যময় ও ভয়ংকর অধ্যায়ের নতুন দরজা খুলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক আবিষ্কার। প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন দুটি অতিমাত্রায় বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ ও একীভবনের ঘটনা, যা এখন পর্যন্ত পাওয়া কৃষ্ণগহ্বর একত্রিত হওয়ার সবচেয়ে বড় নজির। সূর্যের ভরের চেয়ে ১০০ গুণ বড় দুটি কৃষ্ণগহ্বর একে অপরকে ঘিরে সর্পিলভাবে আবর্তিত হয়ে ধীরে ধীরে মিশে গেছে, আর এই সংঘর্ষে জন্ম নিয়েছে একটি নতুন, আরও বড় ও শক্তিশালী কৃষ্ণগহ্বর।

এই অসাধারণ মহাজাগতিক ঘটনাটি ঘটেছে পৃথিবী থেকে প্রায় এক হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে। যুক্তরাষ্ট্রের এলআইজিও (লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি) নামের বিশেষ গবেষণা কেন্দ্রের যন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন এই সংঘর্ষ থেকে সৃষ্ট তীব্র মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এমন এক ধরণের শক্তি প্রবাহ, যা স্থান-কালকে অস্থির করে তোলে এবং এর উৎস থাকে বিশাল মহাকর্ষীয় ঘটনাগুলো, যেমন কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চার্লি হো জানান, কৃষ্ণগহ্বর দুটি এত দ্রুত গতিতে ঘুরছিল যে, সেই ঘূর্ণন আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বে অনুমোদিত সীমার একেবারে কাছাকাছি ছিল। একে অপরকে প্রদক্ষিণ করতে করতে তারা ক্রমশ কাছাকাছি আসে এবং শেষ পর্যন্ত একীভূত হয়। এই একীভবনের সময় যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হয়, তা তীব্র বিস্ফোরণের মতো পুরো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীদের হিসেবে, সংঘর্ষের ফলে যে নতুন কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়েছে, তার ভর প্রায় সূর্যের ২২৫ গুণ। এই ঘটনা শুধু আকারে নয়, প্রভাবেও অতিকায়। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাভিটি এক্সপ্লোরেশন ইনস্টিটিউটের প্রধান অধ্যাপক মার্ক হ্যানাম বলেন, "কৃষ্ণগহ্বরের এমন সংঘর্ষ মহাবিশ্বের সবচেয়ে হিংসাত্মক ও শক্তিশালী ঘটনা। এই সংঘর্ষ থেকে সৃষ্ট তরঙ্গ এতটাই সূক্ষ্ম যে, তা প্রোটনের থেকেও হাজার গুণ ছোট হয়ে থাকে। ফলে পৃথিবীতে এসে তা শনাক্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।”

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এমন ঘটনা শুধু মহাজাগতিক সংঘর্ষের নতুন মাত্রাই উন্মোচন করছে না, বরং মহাবিশ্বের জন্ম ও বিকাশ সংক্রান্ত বহু রহস্যের জট খুলে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে আরও গবেষণা করলে আমরা হয়তো বুঝতে পারব—এই কৃষ্ণগহ্বরগুলো কীভাবে গঠিত হয়, কীভাবে বিকশিত হয় এবং মহাবিশ্বের গহীনে আসলে কী ঘটছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ