কর্মীদের অপরাধে দায় নিন, বিএনপিকে চরমোনাই পীরের আহ্বান

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৯:৫৬:০০
কর্মীদের অপরাধে দায় নিন, বিএনপিকে চরমোনাই পীরের আহ্বান

বিএনপির কর্মীদের অপরাধের দায় দলীয়ভাবে স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, যিনি চরমোনাই পীর নামেও পরিচিত। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি বিএনপির প্রতি কড়া সমালোচনা করেন এবং বলেন, কর্মীদের কর্মকাণ্ডে যদি জনতার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, তার দায় দলকেই নিতে হবে।

রেজাউল করীম বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজরা বিএনপির নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। এই চাঁদাবাজদের কার্যক্রমে জনমনে বিএনপির বিরুদ্ধেই ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে, যা স্বাভাবিক। তিনি দলটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "দলের ভেতরে যেসব অপরাধী রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করুন এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিন। একজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর জনতার কাছ থেকে সৌজন্যমূলক আচরণ আশা করা অন্যায়।"

তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে বর্বরভাবে একজনকে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পর জনতার উত্তেজনা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই গণবিক্ষোভকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মূল অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।"

চরমোনাই পীর আরও বলেন, এই বর্বরতার সঙ্গে জড়িতদের একটি বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলটি নিজেরাই তাদের বহিষ্কার করেছে, যা দায় স্বীকার করার শামিল। তাই তিনি বলেন, বিএনপিকে কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

রাজনৈতিক শালীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। অতীতের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। তাই এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত—নিজ দলের কর্মীদের আচরণে সতর্ক থাকা এবং প্রতিপক্ষের সমালোচনায় শিষ্টাচার বজায় রাখা। কারণ, রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে আবারও কোনো ‘পতিত ফ্যাসিবাদ’ মাথাচাড়া দিতে পারে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সমাজে সংস্কারের বিষয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। যদিও রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও আইনি সংস্কারে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখনো পুরোনো হানাহানি ও সহিংসতা বিদ্যমান। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এমনকি ধর্ষণের ঘটনাও রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে বাড়ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

চরমোনাই পীর বলেন, ১৪ জুলাই বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক দিন। সেইদিন চরমোনাই তরিকার আধ্যাত্মিক ধারার বিরুদ্ধে রাস্তায় অশ্লীল ও আক্রমণাত্মক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির বিএনপিকে সতর্ক করে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা খণ্ডিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই বিকৃত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চরমোনাই ও সুফিবাদকে অপমানের ভাষায় টানা হয়েছে রাজপথে, এমনকি বিএনপির মঞ্চ থেকেও চরমোনাইকে 'শায়েস্তা' করার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির কয়েকজন নেতার ভাষা ও আচরণ অতীতের পতিত শাসকদের মতো হয়ে উঠছে, যা রাজনীতিকে আরও কলুষিত করছে। রাজনীতিতে শিষ্টাচার ও মূল্যবোধ ফিরে না এলে, এই সমাজে নতুন করে অরাজকতা তৈরি হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

তিনি সরকারের কাছেও প্রশ্ন তোলেন—কেনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। যদি কোনো অদৃশ্য শক্তি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ