১৬ জুলাই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় শোক: স্মরণে শহীদ আবু সাঈদ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ০৯:৫৬:০৩
১৬ জুলাই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় শোক: স্মরণে শহীদ আবু সাঈদ

আজ ১৬ জুলাই, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন সংযোজন- ‘জুলাই শহীদ দিবস’। এই দিনটি এখন থেকে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে শহীদ আবু সাঈদ ও গণ–অভ্যুত্থানের স্মরণে। গত বছর ২০২৪ সালের এই দিনে রংপুরে কোটাবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। তার আত্মত্যাগ ও সেই ঘটনার পরবর্তীতে দেশজুড়ে যে গণ–জাগরণ সৃষ্টি হয়, তা পরিণত হয় এক ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে, যা বদলে দেয় দেশের রাজনৈতিক গতিপথ।

এই পটভূমিতে সরকার চলতি বছর দিবসটিকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উপসচিব তানিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই দিবসটি এখন থেকে প্রতি বছর পালন করা হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।

আজকের দিনে সারাদেশে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দিবসটি পালনের আয়োজন করা হয়েছে। একইসাথে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতেও একইভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে এবং শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনার। মসজিদগুলোতে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দোয়া মাহফিল, আর অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিতে প্রার্থনা করা হচ্ছে শহীদদের জন্য।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হলে, পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ শুরু করে। আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ তখনও পিছু হটেননি। তিনি দুই হাত মেলে বুক পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান, যেন রাষ্ট্রীয় দমননীতির বিরুদ্ধে এক জীবন্ত প্রতিবাদচিহ্ন। ঠিক তখনই মাত্র ১৫ মিটার দূর থেকে দুই পুলিশ সদস্য তার ওপর শটগানের গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।

আবু সাঈদের মৃত্যু ছিল না শুধু একটি মর্মান্তিক ঘটনা, বরং তা পরিণত হয় গণ–অভ্যুত্থানের স্ফুলিঙ্গে। সারা দেশের ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে আসে, সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করে, এবং তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই আন্দোলন শুধু একটি সরকারের পতন ঘটায়নি, বরং সৃষ্টি করেছে এক নতুন রাজনৈতিক চেতনা, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকার অগ্রাধিকার পায়।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ