এপস্টেইন বিতর্কে নিজ সমর্থকদেরই দুষলেন ট্রাম্প, দলে বিভক্তি তুঙ্গে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১০:৩০:৩৩
এপস্টেইন বিতর্কে নিজ সমর্থকদেরই দুষলেন ট্রাম্প, দলে বিভক্তি তুঙ্গে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের মৃত্যু ও সংশ্লিষ্ট গোপন তথ্য নিয়ে তার প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবার তিনি ক্ষোভ ঝাড়লেন নিজের সাবেক সমর্থকদের ওপরই। একইসঙ্গে “মূর্খ রিপাবলিকান” এবং “ডেমোক্র্যাটদের দোসর” বলেও আক্রমণ করলেন নিজ দলের কিছু সদস্যকে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ দেওয়া এক পোস্টে ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প লেখেন, “আমার আগের সমর্থকরা এই বাজে গল্পে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলেছে। তারা দুর্বল।” এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে কথা বলার সময় বলেন, “সবটাই ডেমোক্র্যাটদের সাজানো নাটক। আর কিছু বোকা রিপাবলিকান এতে পা দিয়েছে।”

এই ইস্যুতে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের মধ্যেই বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, এপস্টেইনের হাতে থাকা প্রভাবশালী ধনীদের এক গোপন “ক্লায়েন্ট লিস্ট” রয়েছে এবং ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের জেলে তার মৃত্যু আসলে আত্মহত্যা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এখন ট্রাম্প নিজেই এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় ও এফবিআই সম্প্রতি এক মেমোতে জানিয়েছে, এমন কোনো ক্লায়েন্ট তালিকা বা ব্ল্যাকমেইলের প্রমাণ তারা পায়নি। তদন্তে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এপস্টেইনের মৃত্যু ছিল আত্মহত্যা, কোনো ষড়যন্ত্র নয়।

এই ব্যাখ্যায় অনেক ট্রাম্প সমর্থক হতাশ। তারা আশা করেছিল, আবার ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প এই মামলার গোপন তথ্য প্রকাশ করবেন। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই দাবিকে “ডেমোক্র্যাটদের চাল” বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন, যা তার ঘনিষ্ঠ মহলেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

একই দিনে বাহরাইনের যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এই ইস্যুতে সাংবাদিকদের চাপের মুখে পড়েন ট্রাম্প। তিনি তখন নিজের প্রশাসনের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “লোকজন এখন এমন এক লোকের কথা বলছে, যে কয়েক বছর আগেই মারা গেছে। অথচ আমি দেশ চালিয়ে বড় বড় সাফল্য এনেছি।”

এই ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রশাসনের ভেতরও শুরু হয়েছে ভাঙন। অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআই-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনোর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি বংগিনো পদত্যাগ করার কথাও ভাবছেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, বন্ডি “যা বিশ্বাসযোগ্য তা প্রকাশ করতে পারেন।” তবে ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রও তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ বলেন, “আমি বরাবরই বলেছি—সব কিছু প্রকাশ করা উচিত।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাকা মাইকেল ফ্লিনও কড়া সমালোচনা করে বলেন, “এটা শুধু এপস্টেইনের বিষয় নয়, এটা শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়। এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

ট্রাম্প আগে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে এই কেলেঙ্কারির সব তথ্য প্রকাশ করতে তিনি রাজি। কিন্তু বাস্তবে তার প্রশাসনের গোপনীয়তা ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান রাজনৈতিকভাবে তার জন্য নতুন সংকট ডেকে আনছে।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ