বাবার চেয়েও ভয়ংকর: রূপগঞ্জে পাপ্পা গাজীর অপরাধ সাম্রাজ্য

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ০৯:১০:১৪
বাবার চেয়েও ভয়ংকর: রূপগঞ্জে পাপ্পা গাজীর অপরাধ সাম্রাজ্য

আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে কারাগারে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, ভূমি দখল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ। তবে তার একার নয়—পুরো পরিবার মিলে রূপগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক অঘোষিত দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে বলে উঠে এসেছে নানা অনুসন্ধানে। এসব অপরাধের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে গাজীপুত্র গোলাম মূর্তজা পাপ্পা গাজীর নাম, যিনি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পুরো রূপগঞ্জে একক আধিপত্য গড়ে তুলেছিলেন।

গোলাম দস্তগীর গাজী অনেক আগেই রূপগঞ্জের নির্বাচনি রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পুত্র পাপ্পা গাজীকে প্রস্তুত করেছিলেন। পিতার রাজনৈতিক পরিচয়কে পুঁজি করে পাপ্পা রূপগঞ্জে মাদক ব্যবসার নেতৃত্ব দেন। তার নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠে একাধিক মাদক স্পট, নিজস্ব বাহিনী এবং ছড়িয়ে পড়ে ভয়াল নেটওয়ার্ক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাপ্পা গাজীর সঙ্গে ছিলেন এমদাদুল হক দাদুল ও মিজানুর রহমান মিজান নামে দুই সহযোগী। তারা মিলে রূপগঞ্জের প্রায় ৪০০ স্পট থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার মাদক বিক্রি করতেন। এসব মাদক চলে যেত সাধারণ মানুষের হাতে, বিশেষ করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও কিশোরদের মধ্যে।

রূপগঞ্জে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে গত ১৫ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। খুন হয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে রয়েছে স্কুলশিক্ষক, সাধারণ ব্যবসায়ী, তরুণ যুবক এমনকি সাবেক মাদক কারবারিরাও। এর বাইরেও সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে পাঁচ শতাধিক, যা স্পষ্টতই একটি জনপদের জন্য ভয়াবহ।

চনপাড়া বস্তি থেকে শুরু করে দাউদপুর, কাঞ্চন, ভুলতা, মুড়াপাড়া পর্যন্ত পুরো অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছে মাদকের অবাধ ব্যবসা। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদ হয়ে, আবার সড়কপথে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রূপগঞ্জে নিয়মিত আসতো ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা। পুলিশের চোখের সামনে দিয়েই চলতো এই অপতৎপরতা, যার পেছনে ছিলো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া।

পাপ্পা গাজী শুধু পুরুষ বাহিনী নয়, শিশু-কিশোরদের নিয়েও তৈরি করেছিলেন এক ‘সেলসম্যান নেটওয়ার্ক’। জানা গেছে, অন্তত ৭০০ শিশু-কিশোরকে মাদক বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হতো। নারীদেরও ব্যবহার করা হতো মাদক বহনে। কেউ কেউ পরিচিত ছিলেন ‘ফেন্সি কুইন’, ‘কালনাগিনী’ বা ‘ডেঞ্জার লেডি’ নামে। তারা শুধু মাদক নয়, সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপের বিস্তারেও ভূমিকা রাখতেন।

মাদক ছাড়াও পাপ্পা গাজীর বিরুদ্ধে রয়েছে তদবির ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ। বিভিন্ন সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন শত শত কোটি টাকা। কেউ চাকরি পেলেও অধিকাংশই প্রতারিত হয়েছেন। এসআই নিয়োগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, এমনকি বদলির টেন্ডার নিয়েও পাপ্পার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে পাপ্পা গাজী পলাতক। একাধিক সূত্র বলছে, তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন এবং সেখান থেকেই দূরনিয়ন্ত্রিতভাবে তার অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

সাবেক মন্ত্রী গাজী কারাগারে থাকলেও, রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ আজও সেই অন্ধকার অধ্যায়ের থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ