ঢাকায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে কী হবে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৩:১৭:৫৩
ঢাকায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে কী হবে

পারমাণবিক বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আজও বিশ্ববাসীর জন্য এক বড় সংকট। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মত ঘনবসতিপূর্ণ, ব্যস্ত নগরীতে এমন একটি বিস্ফোরণ ঘটলে প্রভাব কল্পনার অতীত। ফার্মগেটের মতো ঘন বসতি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে যদি এক মেগাটন শক্তির পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়, তাহলে মুহূর্তেই শহরের কোলাহল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে বিস্তীর্ণ এলাকা ভস্মীভূত হয়ে যাবে এবং সৃষ্টিকর্তার নির্মম রূপটি প্রকাশ পাবে।

১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে প্রয়োগকৃত পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসলীলায় প্রায় দুই লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হারানোর ইতিহাস আজও সারা বিশ্বকে শিহরিত করে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তি এখন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের পারমাণবিক মজুদ রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার, যা হিরোশিমা-নাগাসাকির বোমার তুলনায় প্রায় ৬০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই পরিসংখ্যানই আজকের বাস্তবতাকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

ফার্মগেটে এক মেগাটন শক্তির বিস্ফোরণে মাত্র এক সেকেন্ডের কম সময়ে তৈরি হবে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের বিশাল অগ্নিগোলক। এর তাপমাত্রা সূর্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে। এই অগ্নিগোলকের ভেতরে থাকা সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে প্লাজমা অবস্থায় পরিণত হয়ে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে যাবে। ফার্মগেট থেকে শুরু করে তেজগাঁও, শাহবাগ, বাংলামোটর, নিউমার্কেট এবং খামারবাড়ি পর্যন্ত এলাকা এই মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

অগ্নিগোলকের পর বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা ১৩ থেকে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। এই অঞ্চলে তাপমাত্রার কারণে মানুষরা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মহাখালী, উত্তরা এই তেজস্ক্রিয় আগুনের বিস্তৃতির মধ্যে পড়বে। এর মধ্যবর্তী এলাকায় প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা খুবই নগণ্য। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও তাপদাহ একযোগে মানুষের জীবনের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে।

বিস্ফোরণের সঙ্গে সৃষ্ট আঘাত এতটা প্রবল হবে যে, শব্দের গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে বাতাস বয়ে যাবে এবং পুরো ঢাকা শহর কেঁপে উঠবে। ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত ধ্বংসাত্মক ঝাঁকুনিতে ভবনগুলো ধসে পড়বে। এমনকি ২০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়ানো মানুষও মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে পারে। বিস্ফোরণ স্থল থেকে আশেপাশে থাকা তেল ও গ্যাসের পাম্পগুলো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে, যা বিশাল আগুনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। মাশরুম আকৃতির ধোঁয়া ও কার্বন কণার মেঘ আকাশ ঢেকে দেবে, যা সূর্যালোককে পুরোপুরি রোধ করবে।

বিস্ফোরণের পরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় কণাগুলো ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এতে নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ভারতের সীমানার কাছাকাছি এলাকাও প্রভাবিত হতে পারে। এ অঞ্চলে বেঁচে থাকা মানুষের জীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে ক্যান্সার, তেজস্ক্রিয় অসুখ, জন্মগত ত্রুটি ও নানা জটিলতা দেখা দেবে।

অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকলেও আক্রান্তরা এক প্রকার দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকা পড়বে। পানির অভাব, খাদ্যের সংকট এবং চিকিৎসার জন্য আকুল চাহিদা তীব্র হয়ে উঠবে। বিমানবন্দর, বন্দরের অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো অসম্ভব হবে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যাহত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার কারণে উদ্ধারকারীরা নিরাপদে প্রবেশ করতে পারবে না, ফলে সাহায্যের হাত পৌঁছানো আরও কঠিন হবে।

বিস্ফোরণের ফলে সূর্যের আলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং বায়ুমণ্ডলে কার্বন কণার স্তর তৈরি হবে। এর ফলে পৃথিবীতে ‘নিউক্লিয়ার উইন্টার’ নামে পরিচিত দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা আবহাওয়া শুরু হবে। অ্যাসিড বৃষ্টি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে শস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। শুধু ঢাকা নয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চাপে থাকবে।

এক মেগাটন শক্তির এই ভয়াবহ অস্ত্র তৈরির পেছনে বিশ্বনেতাদের এই তৎপরতা মানবতার জন্য অন্ধকার এক বাস্তবতা। ২০১৭ সালে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধের পক্ষে সওয়াল করলেও কিছু শক্তিধর দেশ নিজেদের নিরাপত্তার কারণে এই নিষেধাজ্ঞাকে ব্যাহত করে যাচ্ছে। ক্ষমতার লোভে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে বিশ্বকে আরো বিপদে ফেলছে। বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের আশঙ্কা কমেনি, বরং সঙ্কট আরও বাড়ছে।

ঢাকা শহরের মত ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে এক মেগাটন পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রভাবের বিশ্লেষণ মানবজাতির জন্য এক ভয়ংকর হুঁশিয়ারি। এই বোমা ব্যবহার মানব সভ্যতার জন্য আতঙ্ক ও ধ্বংসের প্রতীক। তাই বিশ্বনেতাদের উচিত পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ করে শান্তির পথ অনুসরণ করা, যা মানব জাতির ভবিষ্যত সুরক্ষার একমাত্র উপায়

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ