যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপে অর্থনীতি: সমাধানে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিল আমীর খসরু

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১১:০১:০৭
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপে অর্থনীতি: সমাধানে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিল আমীর খসরু

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বনানীর সেরিনা হোটেলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। শুধু এই অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, দেশের শিল্প-কারখানার অবকাঠামো এবং সমগ্র রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি।”

তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। যদি এই শুল্ক কাঠামো পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আমরা সময়মতো মোকাবিলা না করতে পারি, তাহলে তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি আঘাত হানবে।”

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক নেতা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যদি ভারত বা ভিয়েতনামের তুলনায় আমাদের ট্যারিফ বেশি হয়, তাহলে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। আমাদের পণ্যদ্রব্য তখন বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এর প্রভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিক বেকার হবে এবং বিনিয়োগকারী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে।”

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারকে একটি ‘লাইফলাইন মার্কেট’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “আমরা এমন একটি বিশাল মার্কেট হারাতে চাই না, কারণ এর প্রতিক্রিয়া দেশের সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি পড়বে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে সংকট সমাধানে সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে আমীর খসরু বলেন, “এই সমস্যার সমাধান কোনো একক দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন সকলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় কৌশল। আমরা সরকারকে বলবো দেশের স্বার্থে, অর্থনীতি রক্ষায়, প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে সবাইকে নিয়ে উদ্যোগ নিন। আমরা পাশে থাকবো।”

তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে নেগোসিয়েশন তথা আলোচনাভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদারের সুপারিশ করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও সেই পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “নেগোসিয়েশনের সময় এখনো শেষ হয়নি। সময় থাকতে আমাদের সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু জানান, এই শুল্ক আরোপ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং এর সঙ্গে নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নীতি এবং রাজনৈতিক ইস্যুও যুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে যেসব খবর পাচ্ছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও কূটনৈতিক অঙ্গনের বিষয়গুলোও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের একটি জাতীয় ঐক্যে পৌঁছাতে হবে।”

বিএনপি নেতা জানান, দলটি নিজস্ব কূটনৈতিক চ্যানেল, ব্যবসায়ী সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক লবিং কাঠামো ব্যবহার করে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং যথাসম্ভব ইতিবাচক হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। “আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও দেশের স্বার্থে সরকারের সহযোগিতা করবো এই মেসেজ আজ আমরা দিয়েছি,” বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামো বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিকে এক চ্যালেঞ্জিং পর্বে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু কূটনীতি নয়, প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, ব্যবসায়ী-শ্রমিক-রাজনৈতিক মহলের সম্মিলিত উদ্যোগ। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য সেই পথেই একটি সমন্বিত রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে যেখানে দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সবাইকে এক কণ্ঠে কথা বলতে হবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ