জুলাই শহীদদের স্বপ্নের ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১১:২৫:৫২
জুলাই শহীদদের স্বপ্নের ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৬ জুলাই ২০২৫-এ পালিত ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে বিস্তারিত বাণীতে বলেন, জুলাই শহীদরা একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারা এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করতেন যেখানে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সমান অধিকারভোগী হবে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে সুযোগ এসেছে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ মিলে কোটাব্যবস্থার বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু করে। সেই আন্দোলনে বিভিন্ন শহরে পুলিশের গুলিতে ও সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ছয় জন শহীদ হন। এই শহীদের আত্মদান আন্দোলনে এক নতুন প্রাণ সঞ্চার করে এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সাহসের কারণে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নামেন, যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে টিকে থাকা স্বৈরশাসন পতিত হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ওই আন্দোলন শুধুমাত্র একটি শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল না, এটি ছিল সার্বজনীন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবির নিদর্শন। চলমান বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত সমাজ বিনির্মাণই ছিল আন্দোলনের মূলমন্ত্র। সেই মানসিকতা ধারণ করে এখন নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি পর্যায়ে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালন করা হচ্ছে। দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, শহীদদের স্মৃতিকে সংরক্ষণ এবং তাঁদের পরিবার ও আহতদের কল্যাণের লক্ষ্যে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ ও ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি ও সরকারি গেজেটে প্রকাশের কাজ চলমান রয়েছে। এই উদ্যোগগুলো দেশের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঐতিহাসিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে এবং তাঁদের মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্যও নানা কর্মসূচি চলছে। এসব উদ্যোগ শহীদদের আত্মত্যাগের সম্মান জানানো এবং তাঁদের পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই শহীদরা যেমন দেশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য আত্মদান করেছেন, তেমনি তাঁদের আদর্শ ও চেতনাই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলবে। তাই সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তারা সবাই মিলে দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।

তিনি বাণীতে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা সবাই মিলে জুলাই শহীদদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই। বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত সমাজ গঠন আমাদের সম্মিলিত দায় ও কর্তব্য।” এই অঙ্গীকারই হবে দেশের মানুষের প্রতি সম্মান এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকৃত প্রকাশ।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে স্মরণ করিয়ে দেন যে, চলমান উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতি শহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে সম্ভব হয়েছে। তাই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি এবং ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে অবিরাম কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ