অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদের হত্যার বিচার হবে: আসিফ নজরুল

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৮:১৪:৪৪
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদের হত্যার বিচার হবে: আসিফ নজরুল

আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকী ও ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল দৃঢ় ভাষায় ঘোষণা করেছেন “অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। আমরা শেখ হাসিনার মতো বিচার প্রক্রিয়া নয়, বরং একটি সর্বজনগ্রাহ্য, আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করতে চাই।”

বুধবার (১৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলী।

ড. আসিফ নজরুল তার বক্তব্যে আবেগ ও দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বহু মানুষ মারা যায়, কিন্তু আবু সাঈদের মতো অকল্পনীয়ভাবে আর কেউ মারা যায়নি। তার আত্মত্যাগ একশ্রেণির মানুষকে শুধু শোকাহত করেনি, বরং অনুপ্রাণিত করেছে আত্মোৎসর্গে। আজ দেশের এক হাজারের বেশি তরুণ তার পথ অনুসরণ করে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। আমরা কি এই বিশাল আত্মদানের যোগ্য সম্মান জানাতে পেরেছি?”

তিনি আরও বলেন, “আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দু’জন পুলিশ কনস্টেবল ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। কোনো ধামাচাপা বা বিলম্ব নয় এই বিচার হচ্ছে পূর্ণ গতিতে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের সরকারের সময়েই এই বিচারকার্য শেষ হবে।”

প্রসঙ্গত, আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই গণআন্দোলনের এক প্রতীকী শহীদ, যিনি মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং ন্যায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। বক্তারা বারবার উল্লেখ করেন, তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না তিনি ছিলেন একটি আদর্শের মুখচ্ছবি।

ড. আসিফ নজরুল শেখ হাসিনার আমলে বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির সমালোচনা করে বলেন, “শেখ হাসিনা তার বাবার মৃত্যুর বিচার পেতে সাড়ে তিন বছর সময় নিয়েছেন, অথচ প্রতিনিয়ত সেই প্রসঙ্গ টেনে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু আমরা এমন বিচার চাই না। আমরা এমন বিচার চাই যা দেশ-বিদেশে সম্মান অর্জন করবে, যা সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।”

আবু সাঈদের মৃত্যু স্মরণ করে ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, “আমি ১৬ তারিখ ঘটনাটি দেখিনি, ১৭ জুলাই বিকেলে জানতে পারি। আমি তখন অভিভাবক হিসেবে আর বসে থাকতে পারিনি। মনে হয়েছিল, আমাদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আবু সাঈদের আদর্শ ছিল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে মৃত্যুকে বরণ করা এমন মানুষের স্মৃতি শুধু সংরক্ষণের নয়, তা থেকে শক্তি গ্রহণের।”

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং আবু সাঈদের আন্দোলনের সহযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। তারা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, এই হত্যার বিচার শুধু এক পরিবারের ন্যায়বিচার নয় এটি একটি প্রজন্মের সম্মান রক্ষার প্রশ্ন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ