অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের কঠোর নিয়ম চালু, ছাত্র ভিসায় থাকছে পরিবর্তন

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৬:০৯:২১
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের কঠোর নিয়ম চালু, ছাত্র ভিসায় থাকছে পরিবর্তন

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সূচনায় অস্ট্রেলিয়া সরকার তাদের অভিবাসন নীতিতে আনছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। এসব পরিবর্তন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, দক্ষ কর্মী, উদ্যোক্তা ও স্থায়ী অভিবাসন প্রত্যাশীদের জীবন ও পরিকল্পনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমত, নতুন নীতিমালায় ছাত্র ভিসার ফি ১,৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২,০০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, স্পনসর ভিত্তিক ভিসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন (TSMIT) ৭৩,১৫০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬,৫১৫ ডলার এবং বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য বেতনসীমা ১,৩৫,০০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১,৪১,২১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বর্ধিত ব্যয় নিয়োগদাতাদের উপর আর্থিক চাপ তৈরি করলেও বিদেশি কর্মীদের জন্য এটি একটি সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন রাজ্য—যেমন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস ও নর্দান টেরিটরি ইতোমধ্যেই রাজ্যভিত্তিক মনোনয়ন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও ক্যানবেরাও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে অভিবাসন দপ্তর জানিয়েছে, জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে নতুন কোটা ঘোষণার পর মনোনয়ন কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।

তৃতীয়ত, আঞ্চলিক এলাকায় কাজের সুযোগ আরও বাড়াতে ডেজিগনেটেড এরিয়া মাইগ্রেশন এগ্রিমেন্ট (ডামা ভিসা) ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই ভিসায় আবেদনকারীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৫ বছর এবং ইংরেজি দক্ষতার ক্ষেত্রে শিথিলতা রাখা হয়েছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় গত এক বছরে ডামা ভিসার আবেদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই ভিসা এখন শুধুমাত্র আঞ্চলিক কাজের সুযোগ নয়, অনেকের জন্য স্থায়ী বসবাসের পথও হয়ে উঠছে।

চতুর্থত, অস্ট্রেলিয়া সরকার নতুন একটি স্থায়ী ভিসা চালু করতে যাচ্ছে যার নাম 'ন্যাশনাল ইনোভেশন ভিসা'। এটি মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিভাবান প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া প্রথম রাজ্য হিসেবে এই ভিসার মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে উদ্যোক্তাদের জন্য সাত স্তরের আবেদন পদ্ধতি থাকবে এবং প্রার্থীদের প্রমাণ দিতে হবে যে তাদের ব্যবসায়িক ধারণা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। আবেদনপত্রে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকবে।

পঞ্চমত, ৪৮২ টেম্পোরারি স্কিলড ভিসায় আবেদন বাতিলের হার চলতি বছরে ৪১ শতাংশ বেড়েছে। বাতিল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেক ক্ষেত্রে মনোনীত পেশা বাস্তব চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, একটি ছোট ক্যাফে থেকে ফুলটাইম শেফ নিয়োগের জন্য ভিসা আবেদন করলেও তা উপযুক্ত বিবেচিত হচ্ছে না। ফলে, এখন আবেদন যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় আরও বেশি কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।

অভিজ্ঞ অভিবাসন পরামর্শকদের মতে, এসব পরিবর্তন অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করলেও, যারা বাস্তবতা বুঝে, সঠিক প্রস্তুতি নেয় এবং পেশাগতভাবে পরিকল্পনা সাজিয়ে এগিয়ে যায় তাদের জন্য এই পরিবর্তন হতে পারে সম্ভাবনার দ্বার। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, এখনই স্কিল অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন করা, ইংরেজি পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জনের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং অভিজ্ঞ পরামর্শকের সহায়তা নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো উচিত।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ