রাসুল (সা.) রাতে ঘুমানোর আগে যে ৭টি আমল করতেন 

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৪:২৫:৩৩
রাসুল (সা.) রাতে ঘুমানোর আগে যে ৭টি আমল করতেন 

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যা শুধু দিনের কাজ নয়, রাতের আমলকেও গুরুত্ব দিয়েছে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাতের বেলায় কিছু নির্দিষ্ট সূরা ও আয়াত পাঠ করতেন, যা আমাদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ও ফজিলতপূর্ণ। এসব আমলে রয়েছে আত্মশুদ্ধি, নিরাপত্তা এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অপার সুযোগ। হাদিস শরিফে ঘুমের আগে বিভিন্ন সূরা ও আয়াত পাঠের কথা সুস্পষ্টভাবে এসেছে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক: ঘুমের আগে নিয়মিত আমল

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমাতে যাওয়ার আগে কখনো এই দুই সূরা পাঠ না করে ঘুমাতেন না। হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমাতে যাওয়ার আগে ‘আলিফ লাম তানযীল’ (সূরা সাজদাহ) এবং ‘তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক’ (সূরা মুলক) পাঠ করতেন।” (তিরমিজি: ২৮৯২, সহিহ)

এই দুটি সূরা পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন শয়তানের আক্রমণ ও কবরের আজাব থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন বলে হাদিসে এসেছে। সূরা মুলকে আছে মৃত্যুর পরকার্য, আসমান-জমিনের শাসনব্যবস্থা ও তাকওয়ার শিক্ষা।

২. সূরা যুমার ও সূরা ইসরা: চিন্তাশীল অন্তরের প্রস্তুতি

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর আগে সূরা যুমার ও সূরা বনি ইসরাঈল (সূরা ইসরা) পাঠ করতেন।” (তিরমিজি: ৩৪০৫)

এই সূরাগুলোতে রয়েছে তাওহিদের ব্যাখ্যা, কিয়ামতের বর্ণনা এবং আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনের স্মরণ। ঘুমের আগে এমন সূরা পাঠ অন্তরকে স্মরণ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করে।

৩. সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস: আত্মরক্ষার ঢাল

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ঘুমাতে যাওয়ার সময় দুই হাত তালু করে তিনটি সূরা- ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের ওপর মাসেহ করতেন। তিনি এ কাজ তিনবার করতেন। (বুখারি: ৫০১৭)

এই আমল রুহানিয়াত ও আত্মরক্ষার এক অনুপম পন্থা। এটা শয়তানের ক্ষতি, জাদু, হিংসা ও অন্যান্য অদৃশ্য বিপদ থেকে রক্ষা করে।

৪. সূরা কাফিরূন: শিরকমুক্ত আত্মার অঙ্গীকার

রাসুল (সা.) হজরত নুফল (রা.)-কে বলেছিলেন, “সূরা কাফিরূন পাঠ করে ঘুমাতে যাও। এতে শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা রয়েছে।” (আবু দাউদ: ৫০৫৫)

এই সূরা পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন যে, তার জীবন শুধু এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিবেদিত, কোনো মিশ্রতা নয়।

৫. আয়াতুল কুরসী: রাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত

হজরত আবু হুরাইরা (রা.)-এর বিখ্যাত হাদিসে এসেছে, “ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে একজন ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত পাহারা দেন। শয়তান তার নিকট আসতে পারে না।” (বুখারি: ৩২৭৫)

আয়াতুল কুরসী আল্লাহর ক্ষমতা, জ্ঞান ও অধিপত্যের অনুপম পরিচয় বহন করে। এটি পাঠ করা মানে নিজেকে আল্লাহর হেফাজতে সমর্পণ করা।

৬. সূরা বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত: সারা রাতের জন্য নিরাপত্তা

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “সূরা বাকারা-এর শেষ দুই আয়াত (آمَنَ الرَّسُولُ... إلَى خَاتِمِ السُّورَةِ) যে পাঠ করবে, তা তার জন্য সারা রাতের জন্য যথেষ্ট হবে।” (বুখারি: ৪০০৮, মুসলিম: ৮০৭)

এই আয়াতদ্বয়ে আছে ঈমান, আনুগত্য, ক্ষমা ও আল্লাহর রহমত লাভের প্রার্থনা। একজন মুমিনের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে এসব আয়াত অপরিহার্য।

৭. সূরা আলে ইমরান-এর শেষ দশ আয়াত: গভীর অধ্যবসায়ের উদ্বুদ্ধতা

হজরত ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.) রাতের নির্জনে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই সূরা আলে ইমরানের শেষ দশটি আয়াত পাঠ করতেন।” (বুখারি: ৯৯২, মুসলিম: ৭৬৩)

এই আয়াতগুলো আল্লাহর সৃষ্টি, কিয়ামতের স্মরণ ও আল্লাহভীতি জাগ্রত করে। গভীর চিন্তাশীলতার মাধ্যমে আত্মার জাগরণ ঘটায়।

ঘুমানোর পূর্বে রাসুল (সা.)-এর এই নিয়মিত আমলগুলো কেবল আধ্যাত্মিক উপকারে নয়, বরং মানসিক শান্তি ও দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আয়াত ও সূরার রয়েছে বিশেষ ফজিলত, যা রাত্রিকালীন সময়কে পরিণত করতে পারে রহমত, বরকত ও আত্মিক উন্নয়নের এক অনুপম সুযোগে।

আসুন, প্রিয় রাসুল (সা.)-এর এই সুন্নত আমলগুলো আমাদের জীবনের অংশ বানাই এবং আল্লাহর নিকট থেকে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করি। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ