এক মিনিটের ২৫টি আমল, কিন্তু সওয়াবে পাহাড়সম!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৭:০০:২৫
এক মিনিটের ২৫টি আমল, কিন্তু সওয়াবে পাহাড়সম!

আমরা অনেকেই আছি, যারা দিনের বেশিরভাগ সময় পেশাগত দায়িত্ব, পড়ালেখা, পারিবারিক ব্যস্ততা কিংবা যানজটের ভেতর কাটিয়ে দিই। অনেকে হয়তো মনে করি ফরজ নামাজটাই কেবল সময় মতো আদায় করতে পারি, তার বাইরে কিছু করার সুযোগ আর নেই। কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দেখিয়েছেন, সময় অল্প হলেও আন্তরিক আমল করলে তা মহান আল্লাহর কাছে অগণিত সওয়াবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি যদি মাত্র এক মিনিট সময়ও আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেন, তা হতে পারে আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক অভাবনীয় সুযোগ। নিচে এমন ২৫টি কার্যকর আমল তুলে ধরা হলো, যা আপনি এক মিনিটেই করতে পারেন অথচ এর ফজিলত এবং প্রতিদান অত্যন্ত বিশাল।

(১) সূরা ফাতিহা তিনবার পাঠ

এক মিনিটে আপনি মনে মনে সূরা ফাতিহা তিনবার পড়তে পারবেন। এই সূরার একটি পাঠেই প্রায় ৬০০ সওয়াব অর্জিত হয়। তিনবারে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮০০! সূরা ফাতিহা শুধু নামাযের রুকন নয়, বরং তা হল কুরআনের সারাংশ, দোয়ার দরজা এবং প্রশংসার এক অনন্য নিদর্শন।

(২) সূরাতুল ইখলাস ২০ বার পাঠ

সূরা ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য। ২০ বার পাঠের মানে দাঁড়ায় ৭ বার কুরআন খতম করার সমতুল্য সওয়াব। আপনি যদি প্রতিদিন এভাবে সূরাটি পড়েন, মাস শেষে ৬০০ বার, বছরে প্রায় ৭২০০ বার পাঠ করা সম্ভব।ফলে আপনার নামায় এমন আমল জমা হবে, যা ২৪০০ বার কুরআন খতম করার সমতুল্য।

(৩) কুরআনের এক পৃষ্ঠা তিলাওয়াত

শুদ্ধ উচ্চারণ জানলে আপনি এক মিনিটে কুরআনের একটি পূর্ণ পৃষ্ঠা তিলাওয়াত করতে পারবেন।এই আমলে অগণিত সওয়াব জমা হয় এবং তা কিয়ামতের দিন নূর হয়ে সামনে আসবে।

(৪) কুরআনের একটি আয়াত মুখস্থ

প্রতিদিন এক আয়াত মুখস্থ করুন।বছরের শেষে আপনার মুখস্থ হবে ৩৬৫টি আয়াত, যা প্রায় দুই পারা কুরআনের সমান।এভাবে ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগ বড় অর্জনে রূপ নেয়।

(৫) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু... কুল্লি শাই’ইন কাদির” (২০ বার)

এই দোয়াটি একবার পাঠে ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের ৮ জন দাস মুক্ত করার সওয়াব দেওয়া হয়।আপনি চাইলে দিনে ২০ বার এক মিনিটে পড়ে ফেলতে পারেন।

(৬) “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” (১০০ বার)

রাসূল (সা.) বলেছেন, কেউ এ দোয়াটি দিনে ১০০ বার পড়লে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।এটি এক মিনিটেই সম্ভব, বিশেষত আপনি যদি তা মনে মনে পাঠ করেন।

(৭) দুইটি প্রিয় তাসবীহ (৫০ বার):

“سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ”এগুলো এমন বাক্য যা হালকা উচ্চারণে, কিন্তু ওজনের দিক থেকে অনেক ভারী।রহমানের কাছে এগুলো অতি প্রিয়।

(৮) চারটি সর্বোত্তম বাক্য পাঠ (১৮ বার)

“সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার” এই চারটি বাক্যকে রাসূল (সা.) ‘সুর্য যেসব জিনিসের ওপর উদিত হয়েছে, তার থেকেও উত্তম’ বলেছেন।এগুলো দৈনিক অভ্যাসে পরিণত করা উচিত।

(৯) “লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ” (৪০ বার)

জান্নাতের ভাণ্ডার, বিপদের প্রতিষেধক এবং আত্মিক শক্তির উৎস এই বাক্য।এক মিনিটেই এটি ৪০ বারের বেশি পাঠ করা সম্ভব।

(১০) কালিমায়ে তাইয়্যেবা (৫০ বার):

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” তাওহীদের মূল ভিত্তি, ঈমানের শিখর এবং জান্নাতে প্রবেশের চাবিকাঠি।এক মিনিটে আপনি ৫০ বার পাঠ করতে পারেন।

(১১) বিশেষ তাসবীহ (১৫ বার):

“سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ... وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ”এই তাসবীহ পাঠ করলে সাধারণ তাসবীহর তুলনায় বহু গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

(১২) ইস্তিগফার (১০০ বার):

“আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা মাত্রই আল্লাহর দরজায় ক্ষমা চাওয়ার ঘোষণা।প্রতিদিন ১০০ বার ইসতিগফার করুন এতে জীবনে বরকত, বিপদ থেকে রক্ষা ও পাপ মোচনের সুযোগ তৈরি হয়।

(১৩) অন্তরের আমল

এক মিনিটের ভেতর আল্লাহর ভয়, কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও আশা জাগিয়ে তুলুন।এই অনুভূতি নিজেই আল্লাহর নিকট একটি চমৎকার ইবাদত হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৪) নবীর ওপর দরূদ (৫০ বার)

“সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” মাত্র একটি বাক্য।এটি ৫০ বার বললে আল্লাহ ৫০০ বার আপনার ওপর রহমত বর্ষণ করবেন।

(১৫) উপকারী বইয়ের ২ পৃষ্ঠা পাঠ

দ্বীনী বা আত্মউন্নয়নমূলক একটি বই পড়তে পড়তে আপনি নিজেকে নীরবে আত্মশুদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারেন।

(১৬) আত্মীয়কে কল করে সম্পর্ক রক্ষা

সিলাতুর রাহেম এক মিনিটে একটি আন্তরিক ফোনকল সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করে দিতে পারে।

(১৭) সংক্ষিপ্ত দোয়া

দুই হাত তুলে আপনি এক মিনিটে একটি হৃদয়ছোঁয়া দোয়া করুন।হয়তো এই দোয়াতেই আপনার তাকদির বদলে যেতে পারে।

(১৮) সালাম ও মুসাফাহা

কয়েকজনকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করুন এতে হৃদ্যতা বাড়ে, হাদীস অনুযায়ী পাপ ঝরে পড়ে।

(১৯) মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার উপদেশ

একজন মানুষকে ভুল কাজ থেকে বিরত রাখুন।এটি সমাজ ও আত্মার পবিত্রতার জন্য একটি বড় সদকা।

(২০) সৎ কাজের নির্দেশ

একজনকে ভালো কাজ করার উৎসাহ দিন যেমন সালাত পড়তে বলা, ভালো কথা বলা।

(২১) একজন ভাইকে উপদেশ

সৎ উপদেশ একটি গিফট।এক মিনিটে দেওয়া উপদেশ কারো জীবন পাল্টে দিতে পারে।

(২২) কষ্টে থাকা কাউকে সান্ত্বনা

একজন হতাশ, কষ্টে থাকা মানুষের কাঁধে এক মিনিটে হাত রাখুন এটিও একটি ইবাদত।

(২৩) রাস্তা থেকে কষ্টকর বস্তু সরানো

রাসূল (সা.) বলেছেন, এটি ঈমানের অঙ্গ।ছোট কাজ, কিন্তু পরকালে অনেক ওজনদার।

(২৪) অবহেলিত সময়কে আলোকিত করার অনুপ্রেরণা

এই এক মিনিট আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে ভবিষ্যতের সব অবহেলিত সময়কে আল্লাহর পথে নিয়োজিত করতে।

(২৫) দোয়া ও নিয়ত দিয়ে প্রতিটি মিনিট শুরু

একটি এক মিনিটের নিয়ত “আজকের দিনটা আল্লাহর জন্য ভালো কাজে ব্যয় করবো।”এই নিয়তও আপনার কাজকে ইবাদতে পরিণত করতে পারে।

আমরা সময়কে ব্যয় করি কখনো সচেতনভাবে, কখনো অন্যমনস্ক হয়ে। কিন্তু যারা সত্যিকারের মুমিন, তারা প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজে লাগাতে সচেষ্ট থাকেন। আপনার জীবনেও হয়তো সময় অপ্রতুল, কিন্তু মন তৈরি থাকলে এক মিনিটেই আপনি সেই আমল করতে পারেন যা কিয়ামতের দিনে পাহাড়সম সওয়াবে পরিণত হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ