জানুন দরুদ পাঠের অগণিত ফজিলত সম্পর্কে

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১২:৪৮:৩৯
 জানুন দরুদ পাঠের অগণিত ফজিলত সম্পর্কে

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতির জন্য রহমতরূপে পাঠিয়েছেন। তাই তার প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহর আনুগত্যের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কোরআন শরিফে বহু আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার নবীর প্রতি ভালোবাসা, অনুসরণ ও অনুকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

আল্লাহ ও ফেরেশতারা যাঁর জন্য দোয়া করেন

সুরা আহযাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—"নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করেন; হে মুমিনগণ, তোমরা তার জন্য দরুদ ও সালাম পাঠ করো।"এ আয়াতটি সরাসরি আমাদের নির্দেশনা দেয়, যেন আমরা কেবল মুসিবতে নয়, প্রতিদিন নিয়মিতভাবে নবীজি (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করি।

দরুদ পাঠের অনন্য ফজিলতসমূহ

১. দশগুণ রহমত, গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি

একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন,"যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।"(নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)

২. ফেরেশতারা আমাদের জন্য দোয়া করেন

হজরত আমের ইবনে রবিআহ (রা.) বলেন,"যখন কেউ নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে দরুদ পাঠ করে।"(ইবনে মাজাহ)

৩. দরুদবিহীন দোয়া কবুল হয় না

হজরত উমর (রা.) বলেন,"যে দোয়ায় নবীজির ওপর দরুদ নেই, সে দোয়া আসমান পর্যন্ত পৌঁছায় না।"(তিরমিজি)

৪. সুপারিশ নিশ্চিত হয়

হজরত রুওয়াইফি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন,"যে ব্যক্তি এই দরুদ পাঠ করবে, আমার সুপারিশ তার জন্য অবধারিত হয়ে যাবে।"(তাবরানি)

৫. কিয়ামতে নবীজির নিকটতা লাভ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,"কিয়ামতের দিন নবীজি (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী সে ব্যক্তি হবে, যে সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠ করেছে।"(তিরমিজি)

দরুদ পাঠের দ্বারা অন্যান্য সুবিধা

৬. মানসিক শান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর

দরুদ শরিফ পাঠ একটি এমন আত্মিক প্রশান্তির আমল, যা আত্মা ও হৃদয়কে প্রশান্ত করে। এটি হতাশা, দুশ্চিন্তা, হতবুদ্ধি অবস্থা দূর করে এনে দেয় আল্লাহর প্রশান্তি।

৭. ইবাদতের কবুলিয়াতের চাবিকাঠি

দোয়ায় ও ইবাদতে দরুদ শরিফ যুক্ত করা হলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া ও ইবাদত দ্রুত কবুল করে থাকেন। হাদিসে এসেছে, দোয়ার শুরু ও শেষে দরুদ পাঠ করলে মাঝের দোয়াও কবুল হয়।

৮. নবীজিকে সালাম পৌঁছায় সরাসরি

হাদিসে এসেছে, ফেরেশতারা নবীজির কাছে উম্মতের সালাম পৌঁছে দেন। এমন এক ব্যবস্থা আল্লাহ দিয়েছেন যাতে নবীজি (সা.) আমাদের কথা জানতে পারেন।

৯. গরিবদের জন্য সদকার বিকল্প

যাদের সদকা দেয়ার সামর্থ্য নেই, তারা দরুদ পাঠ করে সেই সওয়াব অর্জন করতে পারেন। হাদিসে এ কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

বিশেষ দরুদ ও সুপারিশের দরজা

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন,"যে ব্যক্তি চায় আমাদের (আহলে বাইত) ওপর দরুদ পাঠ করে তার পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এ দরুদ পাঠ করে—

اللهم صل على محمد النبي وأزواجه أمهات المؤمنين وذريته وأهل بيته كما صليت على آل إبراهيم إنك حميد مجيد(আবু দাউদ)

কতবার দরুদ শরিফ পাঠ করা উচিত?

এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। একবার পাঠ করলেও দশগুণ রহমত নাজিল হয়। তবে হাদিসে দেখা যায়, সাহাবিগণ নবীজিকে বলতেন, "আমার দোয়ার অর্ধেক আপনাকে উৎসর্গ করব?" নবীজি (সা.) বলতেন, "যত বেশি করবে ততই ভালো।" অর্থাৎ সংখ্যার চেয়ে নিয়মিততা ও হৃদয় থেকে পাঠ করাই মুখ্য।

নবীজি (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি আমাদের জীবনে রহমত, শান্তি ও কল্যাণ ডেকে আনে। আমাদের উচিত প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় দরুদ পাঠে ব্যয় করা। ঘুমের আগে, নামাজের পর, অবসরে, রাস্তায়, কর্মস্থলে যেখানেই হোক না কেন, হৃদয়ে দরুদ থাকুক সবসময়। ইনশাআল্লাহ, এ আমল আমাদের জীবনের বিপদাপদ দূর করবে, গুনাহ মাফ করবে, এবং কিয়ামতের দিন নবীজির সান্নিধ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

পাঠকের মতামত:

ট্যাগ: দরুদ শরিফ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ