জেনে নিন রাসুল (সা.) এর আয়না দেখার দোয়া

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৮:০৯:২৯
জেনে নিন রাসুল (সা.) এর আয়না দেখার দোয়া

মানুষের সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব এবং চারিত্রিক গঠন এই তিনটি গুণই আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নেয়ামত। কোরআনে আল্লাহ বলেন,"لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم"অর্থ: "আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তমতম গঠনে" (সুরা আত-তীন, আয়াত ৪)।

এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট হয়, মানুষের বাহ্যিক অবয়ব এবং চারিত্রিক গঠন আল্লাহরই অনুপম সৃষ্টি। কিন্তু ইসলাম বাহ্যিক রূপের প্রশংসা যতটা করে, তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বা আখলাক-এর ওপর।

দোয়ার শব্দ ও তাৎপর্য

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শুধু নিজের চেহারার প্রতি তাকিয়ে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করতেন না, বরং আত্মশুদ্ধির এক গভীর দোয়ায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন:

اللهم أنت حسّنت خلقي فحسن خُلقيউচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা হাসসানতা খালক্বি, ফাহাসসিন খুলুক্বি।অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার আকৃতি সুন্দর করেছেন, অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন।

এই দোয়াটির মাধ্যমে আমরা দেখি রাসুল (সা.) বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন, ঠিকই, কিন্তু মূল অনুরোধটি হচ্ছে: “আমার চরিত্র সুন্দর করে দিন।”

‘খালক্ব’ ও ‘খুলুক্ব’ – বাহ্যিক রূপ বনাম অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য

আরবি ভাষায় ‘খালক্ব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে শারীরিক গঠন বা বাহ্যিক অবয়ব। আর ‘খুলুক্ব’ অর্থ চরিত্র, ব্যবহার বা আত্মিক গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে দুই শব্দকে পাশাপাশি রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করছেন।

আমরা অনেক সময় আয়নায় নিজেকে দেখে বাহ্যিক রূপের প্রশংসা করি, কিন্তু আমাদের চরিত্রের রূপ কীভাবে? মানুষ কেমন ব্যবহার পায় আমাদের কাছ থেকে? আমাদের ধৈর্য, দয়া, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা এসব গুণ কি বাহ্যিক সৌন্দর্যের মতোই সুন্দর? এই প্রশ্নের উত্তরই এই দোয়াটি আমাদের চিন্তার জগতে জাগিয়ে তোলে।

হাদিসের বর্ণনা ও গ্রহণযোগ্যতা

এই দোয়াটি সহিহ হাদিসগ্রন্থ মুসনাদে আহমদ (হাদিস নং: ২৪৩৯২) এবং আবু ইয়ালার সংকলনে (হাদিস নং: ৫০৭৫) বর্ণিত হয়েছে। ইসলামি স্কলাররা এই দোয়াটিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও চর্চাযোগ্য একটি দোয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেতনার প্রতিফলন—যেখানে বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আত্মিক পরিশুদ্ধিকে।

চরিত্র গঠনের গুরুত্ব ও নবীজির দৃষ্টিভঙ্গি

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার নিকটতম, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।" – (তিরমিজি, হাদিস: ২০১৮)

তিনি আরও বলেন, "আমি উত্তম চরিত্র সম্পন্ন করতে প্রেরিত হয়েছি।" – (মুআত্তা মালিক)

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে, ইসলামের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘খুলুক’ বা চরিত্র। মানুষ যদি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যে নিজেকে বিভোর রাখে, কিন্তু চরিত্রে দূষিত হয়, তাহলে সে ইসলামী আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে যায়।

এই দোয়া ছোটদের শেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আজকের সমাজে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কেবল বাহ্যিক রূপ বা সামাজিক ‘লাইক-শেয়ার’ সংস্কৃতিতে বড় করা হচ্ছে। কিন্তু যদি শিশুরা শিখে যায় সৌন্দর্য কেবল মুখে নয়, ব্যবহারে, চেতনায়, সহানুভূতিতে তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে মানবিক ও নৈতিকতাসম্পন্ন।

এই দোয়াটি শিশুদের মুখস্থ করিয়ে দেয়া মানে তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই একটি আত্মিক সৌন্দর্যের বীজ বপন করা। তারা শিখবে চেহারা যত সুন্দরই হোক না কেন, যদি চরিত্রে দাগ থাকে, তবে সেই রূপ আল্লাহর কাছে গৃহীত নয়।

আধুনিক জীবনে দোয়াটির প্রাসঙ্গিকতা

আজকের সমাজে মানুষ বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে যেমন আগ্রহী, তেমনি চরিত্র ও নৈতিকতার প্রশ্নে অনেকটা উদাসীন। এই দোয়াটি যেন সেই বাস্তবতায় আমাদের একটি সজাগ সংকেত দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া হোক কিংবা কর্মস্থল, পরিবার বা বন্ধুমহল সর্বত্র আমাদের আসল পরিচয়ই হলো আমাদের আচরণ ও মূল্যবোধ।

এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করা মানে নিজের ভেতরের ‘আয়না’ দেখতে শেখা। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ নয়, মন দেখতে চাওয়ার প্রেরণা দেওয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ