আল্লাহর ৯৯ নাম: জানুন সেই অসীম গুণাবলীর মহিমা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৫:১৭:১৬
আল্লাহর ৯৯ নাম: জানুন সেই অসীম গুণাবলীর মহিমা

আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম, যেগুলোকে ‘আসমা উল হুসনা’ বলা হয়, কেবল ধর্মীয় শিক্ষার অংশ নয়, বরং আত্মিক উপলব্ধি ও আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সেতুবন্ধ। এই নামগুলো জানার মাধ্যমে মানুষ তার প্রভুকে ভালোভাবে জানতে পারে, বুঝতে পারে, এবং আল্লাহর গুণাবলির আলোকে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতে পারে।

কোরআনের নির্দেশ ও নবিজির উৎসাহ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাক। আর যারা এই নাম বিকৃত করে, তাদের বর্জন কর।” (সুরা আ’রাফ: ১৮০)। এই আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আল্লাহকে তাঁর সুন্দর নামসমূহ দ্বারা ডাকতে, যা দোয়া কবুলের জন্য এক বিশেষ মাধ্যমও।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে আল্লাহর নাম মুখস্ত করা, বোঝা এবং তার দ্বারা দোয়া করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, “আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে, যে এগুলো মুখস্ত করবে, সে জান্নাতে যাবে।” কিন্তু হাদিস বিশারদ ইমাম নববির ব্যাখ্যায় জানা যায়, এই সংখ্যা সীমাবদ্ধ নয়; আল্লাহর আরও বহু নাম রয়েছে, যা গোপনে রয়েছে তাঁর অদৃশ্য জ্ঞানের ভাণ্ডারে।

আল্লাহর নাম জানার তাৎপর্য

প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা শাওকানি (রহ.) তার ফতহুল কাদির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আল্লাহর নাম জানলে কেবল দোয়া কবুলের সুযোগ বাড়ে না, বরং মানুষ তার প্রভুর প্রতি এমন এক ভক্তি ও ভয়বোধে উদ্বুদ্ধ হয়, যা অন্তর থেকে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের প্রবণতা সৃষ্টি করে।

নবিজি (সা.) একটি দোয়ায় বলেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি তোমার সেই সব নামে, যেগুলো তুমি নিজেকে দিয়েছো, অথবা তোমার কোনো বান্দাকে শিখিয়েছো, কিংবা অদৃশ্য জ্ঞানের ভাণ্ডারে গোপন রেখেছো।” (শরহু মুসলিম লিননববি)

হাদিসে আস্মাউল হুসনার গুরুত্ব

সহিহ বুখারির একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যে এগুলো মুখস্থ রাখবে (বা হিফজ করে আমল করবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

ইমাম নববি (রহ.) এবং অন্যান্য বিদ্বানরা ব্যাখ্যা করেছেন, এই হাদিসে ‘নিরানব্বইটি নাম’ বলা হলেও এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহর নাম কেবল এতগুলোই। বরং এগুলো তাঁর অনেক নামের মধ্য থেকে বিশিষ্ট কয়েকটি নাম মাত্র। অন্য হাদিসে নবিজি (সা.) দোয়ায় বলেছেন:

“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি তোমার সেইসব নামে, যেগুলো তুমি নিজেকে দিয়েছ, অথবা তোমার কিতাবে নাজিল করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির কাউকে শিখিয়েছ, কিংবা গোপন রেখেছ তোমার গায়েবী জ্ঞানের ভাণ্ডারে।” (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহর ৯৯ নাম (আস্মাউল হুসনা) বাংলা অর্থসহ

১. আল্লাহ – একমাত্র উপাস্য, সর্বশক্তিমান

২. আর-রহমান – পরম দয়ালু

৩. আর-রহিম – পরম করুণাময়

৪. আল-মালিক – রাজাধিরাজ

৫. আল-কুদ্দুস – পবিত্রতম

৬. আস-সালাম – শান্তির উৎস

৭. আল-মুমিন – নিরাপত্তাদানকারী

৮. আল-মুহাইমিন – তত্ত্বাবধায়ক

৯. আল-আযীয – পরাক্রমশালী

১০. আল-জাব্বার – জবরদস্তি প্রয়োগকারী

১১. আল-মুতাকাব্বির – গৌরবান্বিত

১২. আল-খালিক – সৃষ্টিকর্তা

১৩. আল-বারি – গঠনতত্ত্বের স্রষ্টা

১৪. আল-মুসাওয়ির – আকৃতিদানকারী

১৫. আল-গাফফার – বারবার ক্ষমাকারী

১৬. আল-কাহ্হার – পরাক্রমশালী বিজয়ী

১৭. আল-ওয়াহাব – দানশীল

১৮. আর-রায্জাক – রিজিকদাতা

১৯. আল-ফাত্তাহ – উন্মোচনকারী

২০. আল-আলীম – সর্বজ্ঞ

২১. আল-কাবিদ – সংকোচকারী

২২. আল-বাসিত – সম্প্রসারণকারী

২৩. আল-খাফিদ – অবনমনকারী

২৪. আর-রাফি – উন্নতকারী

২৫. আল-মু’ইয – সম্মানদানকারী

২৬. আল-মুযিল – অপমানদানকারী

২৭. আস-সামি’ – সর্বশ্রোতা

২৮. আল-বাসির – সর্বদ্রষ্টা

২৯. আল-হাকাম – বিচারক

৩০. আল-আদল – ন্যায়পরায়ণ

৩১. আল-লতীফ – সূক্ষ্মদর্শী

৩২. আল-খাবীর – সর্বজ্ঞ

৩৩. আল-হালিম – সহিষ্ণু

৩৪. আল-আযীম – মহান

৩৫. আল-গফুর – অতিশয় ক্ষমাশীল

৩৬. আশ-শাকুর – কৃতজ্ঞতাপ্রিয়

৩৭. আল-আলি – সর্বোচ্চ

৩৮. আল-কাবীর – অতীব মহান

৩৯. আল-হাফিজ – সংরক্ষণকারী

৪০. আল-মুকিত – রক্ষণাবেক্ষণকারী

৪১. আল-হাসিব – হিসাব গ্রহণকারী

৪২. আল-জালিল – গৌরবান্বিত

৪৩. আল-কারিম – মহাদানশীল

৪৪. আর-রাকিব – তত্ত্বাবধায়ক

৪৫. আল-মুজিব – দোয়া কবুলকারী

৪৬. আল-ওয়াসি’ – সর্বব্যাপী

৪৭. আল-হাকীম – প্রজ্ঞাবান

৪৮. আল-ওয়াদুদ – পরম স্নেহশীল

৪৯. আল-মাজীদ – মহিমান্বিত

৫০. আল-বা’ইস – পুনরুত্থানকারী

৫১. আশ-শাহীদ – সর্বদ্রষ্টা

৫২. আল-হক্ক – প্রকৃত সত্য

৫৩. আল-ওয়াকীল – সহায়তা প্রদানকারী

৫৪. আল-কাওয়ী – ক্ষমতাশালী

৫৫. আল-মাতীন – দৃঢ় শক্তির অধিকারী

৫৬. আল-ওয়ালী – অভিভাবক

৫৭. আল-হামিদ – প্রশংসিত

৫৮. আল-মুহসী – গণনাকারী

৫৯. আল-মুব্দি – সৃষ্টির সূচনাকারী

৬০. আল-মু’ইদ – পুনরায় সৃষ্টিকর্তা

৬১. আল-মুহী – জীবনদাতা

৬২. আল-মুমীত – মৃত্যু দানকারী

৬৩. আল-হাইই – চিরঞ্জীব

৬৪. আল-কাইয়ুম – চিরস্থায়ী

৬৫. আল-ওয়াজিদ – সর্বদা বিদ্যমান

৬৬. আল-মাজিদ – মহিমান্বিত

৬৭. আল-ওয়াহিদ – একক

৬৮. আস-সমাদ – সবার নির্ভরশীল

৬৯. আল-কাদির – সর্বশক্তিমান

৭০. আল-মুকতাদির – সর্বক্ষমতাধর

৭১. আল-মুকাদ্দিম – অগ্রসরকারী

৭২. আল-মু’আখির – বিলম্বকারী

৭৩. আল-আউয়াল – প্রথম

৭৪. আল-আখির – সর্বশেষ

৭৫. আজ-জাহির – প্রকাশ্য

৭৬. আল-বাতিন – গোপন

৭৭. আল-ওয়ালী – সুরক্ষাকারী

৭৮. আল-মুতাআলী – চির উন্নত

৭৯. আল-বারর – কল্যাণকারী

৮০. আত-তাওয়াব – তাওবা কবুলকারী

৮১. আল-মুন্তাকিম – প্রতিশোধ গ্রহণকারী

৮২. আল-আফু – ক্ষমাশীল

৮৩. আর-রউফ – পরম করুণাময়

৮৪. মালিকুল মুলক – সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী

৮৫. জুল-জালালি ওয়াল ইকরাম – গৌরব ও সম্মানের অধিকারী

৮৬. আল-মুকসিত – ন্যায়পরায়ণ

৮৭. আল-জামি’ – একত্রিতকারী

৮৮. আল-গানী – সম্পদশালী

৮৯. আল-মুগনী – ধনপ্রদানকারী

৯০. আল-মানি’ – বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখেন

৯১. আদ-দার – ক্ষতিদাতা

৯২. আন-নাফি’ – উপকারকারী

৯৩. আন-নূর – আলোক

৯৪. আল-হাদি – পথপ্রদর্শক

৯৫. আল-বাদী – অপরূপ সৃষ্টিকর্তা

৯৬. আল-বাকি – চিরন্তন

৯৭. আল-ওয়ারিস – উত্তরাধিকারী

৯৮. আর-রশীদ – সঠিক পথ নির্দেশক

৯৯. আস-সাবুর – ধৈর্যশীল

ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর নামের প্রভাব

এই নামগুলো শুধু মুখস্ত করার জন্য নয় এগুলো জীবনে ধারণ করার জন্য। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে আল্লাহ আল-রাকীব (সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন), সে গোপনে কোনো অন্যায় করতে ভয় পায়। যে জানে আল্লাহ আল-মুজীব (প্রার্থনার উত্তরদাতা), সে দুঃসময়ে কেবল আল্লাহর দিকেই মুখ ফেরায়।

বিশেষত যেসব নাম আল্লাহর দয়া, ক্ষমা, ভালোবাসা ও রিজিক দেওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে আর্থিক ও আত্মিক সংকটে সাহায্যের জন্য সঁপে দেওয়া যায়।

আল্লাহর ৯৯টি নাম কেবল তথ্য নয়, আত্মিক পথচলার এক অনন্য রসদ। এগুলো আত্মিক শুদ্ধির মাধ্যম, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভয় জাগানোর উপায় এবং দোয়া কবুলের মাধ্যমও বটে। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত এগুলো জেনে অন্তরে ধারণ করা এবং প্রতিদিনের জীবনে এর প্রতিফলন ঘটানো।

“আল্লাহর নাম জানো, উপলব্ধি করো, আর আল্লাহর সান্নিধ্যে জীবন সাজাও।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ