মৃত ব্যক্তির জন্য শেষ ইবাদত: গোসল, কাফন ও জানাজার গুরুত্ব

ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো এবং জানাজার নামাজ পড়ে তাকে কবরস্থ করা ফরজে কেফায়া। ফরজে কেফায়া অর্থ হলো, সমাজের কেউ যদি এই ফরজ কর্তব্যটি পালন করে তাহলে বাকিরা এ থেকে মুক্ত। তবে যদি কেউ না করে, তাহলে সবার ওপর গুনাহ হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন, পরিবার, ওয়ারিসদের ওপর এই দায়িত্ব প্রথমে বর্তায়। তাদের মধ্যে যদি কেউ এই কর্তব্য পালন করতে অক্ষম হয় বা অনিচ্ছুক থাকে, তখন মুসলিম সমাজের অন্যান্য সদস্য এবং রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের জন্য এটি একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্বে পরিণত হয়।
মৃত ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষা এবং তাকে সম্মানের সাথে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের ঐক্য, মর্যাদা এবং ধর্মীয় চেতনাকে প্রতিফলিত করা হয়। এ কারণে মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন ও দাফনের দায়িত্ব পালনে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা আবশ্যক।
মৃতের সম্পদ ও কাফনের ব্যয়ভার
মৃত ব্যক্তির যদি নিজস্ব কোনো সম্পদ থাকে, তাহলে তার সম্পদ থেকে গোসল, কাফন ও দাফনের খরচ বহন করা হয়। এটি ইসলামের সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার অংশ। সম্পদ থেকে এই ব্যয় বহনের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির সম্মান বজায় রাখা হয় এবং পরিবার বা সমাজের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা পড়ে না।
যদি মৃত ব্যক্তির কোনো সম্পদ না থাকে, তখন গোসল ও কাফন দেওয়ার দায়িত্ব জীবিত অবস্থায় তার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ওপর বর্তায়। পরিবারের কেউ যদি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে অক্ষম হন, তখন অন্য মুসলিম সমাজের সদস্যদের এগিয়ে আসা উচিত। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দাফনের জন্য বরাদ্দ রাখা থাকলে সেটিও ব্যবহৃত হতে পারে।
গোসল দেওয়ার ফজিলত ও নৈতিক মূল্য
নবী করিম (সা.)-এর একটি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে তার ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা তার গোনাহ মাফ করে দেবেন। এটা প্রমাণ করে মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার সম্মান রক্ষার জন্য গোসল দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মৃত ব্যক্তির শরীরকে সম্মানের সাথে পরিষ্কার করা ও যন্ত্রণার মুহূর্ত শেষে তাকে শান্তি দেওয়া মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব।
এছাড়াও, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় তাঁকে সম্মান ও দয়ালুতার সাথে আচরণ করতে হবে। কেউ যেন এই কাজকে অপমানজনক বা অসম্মানজনক মনে না করে, কারণ এটি একটি পবিত্র কাজ এবং মহান ফজিলতের সঙ্গে যুক্ত।
কাফন পরানোর নিয়ম ও বিধি
মৃত পুরুষের কাফন পরানোর নিয়ম
পুরুষদের কাফনের জন্য জামা, লুঙ্গি ও চাদর তিনটি পোশাক ব্যবহার করা উত্তম। এর মধ্যে লুঙ্গি ও চাদর দিয়েও কাফন করা যেতে পারে, তবে জামা সংযোজন করলে আরও সম্পূর্ণ হয়। যদি শুধুমাত্র চাদর দিয়ে কাফন করা হয়, তা সামর্থ্য অনুযায়ী মাকরুহ অর্থাৎ পরিহারযোগ্য।
কাফন পরানোর প্রক্রিয়ায় প্রথমে মসৃণভাবে চাদর বিছানো হয়, তার ওপর লুঙ্গি ও জামা রাখা হয়। মৃত ব্যক্তিকে চাদরের ওপর স্থির করে প্রথমে জামা পরানো হয়। এরপর লুঙ্গি বাঁ পাশ থেকে মোড়ানো শুরু করে ডান পাশ থেকে শেষ করতে হয়। চাদরও একই পদ্ধতিতে মোড়ানো হয়। সবশেষে কাফনের দুই পাশ একত্র করে বেঁধে দেওয়া হয় যেন এলোমেলো বা বিচ্ছিন্ন না হয়।
মৃত নারীর কাফন পরানোর নিয়ম
নারীদের কাফনের জন্য চাদর, জামা, পেটিকোট, ওড়না এবং বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করা উত্তম। তবে পেটিকোট, চাদর ও ওড়না দিয়েও কাফন সম্পূর্ণ হয়। সামর্থ্য কম থাকলে এর চেয়ে কম উপকরণ ব্যবহার করা উচিত নয়।
কাফনের জন্য প্রথমে একটি চাদর বিছানো হয়। এরপর পেটিকোট ও জামা বসানো হয়। মৃত নারীর চুল দুই ভাগে ভাগ করে সিনার (মাথার দুই পাশে) রাখা হয়। ওড়না মাথার ওপর রাখা হয়, বাঁধা হয় না, কেবল ঢেকে রাখা হয়। পেটিকোট বাঁ পাশ থেকে মোড়ানো শুরু করে ডান পাশে শেষ করা হয় এবং সিনার পাশে বেঁধে দেওয়া হয়। চাদরও একই রীতি মোড়ানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত বাঁধা হয়।
কাফন ও গোসলের ক্ষেত্রে ইসলামের সামাজিক ও মানবিক আদর্শ
গোসল ও কাফন এমন দুটি ইবাদত যা শুধু মৃত ব্যক্তির জন্য নয়, সামাজিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত। এটি মৃতের মর্যাদা রক্ষা করে, পরিবারের সদস্যদের অন্তরের শান্তি দেয় এবং মুসলিম সমাজে সম্মান ও সহানুভূতির বন্ধন দৃঢ় করে।
মৃত্যুর পর শরীরকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া ও ঈমানদার হিসেবে বিদায় জানানো, মুসলিম সমাজের ঐক্য ও মানবিকতা প্রতিফলিত করে। সমাজের প্রত্যেক সদস্যের উচিত এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা এবং কারো প্রতি অবহেলা না করা।
রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ব
যখন মৃত ব্যক্তির পরিবারের কেউ কাফন ও দাফনের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন, তখন এটি মুসলমান সমাজের ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি উদ্যোগে ‘মৃতদেহ সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে অভাবগ্রস্তদের জন্য গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় নিয়মাবলী অনুসরণ নিশ্চিত করা হয়।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মৃত ব্যক্তির মর্যাদাবান শেষকৃত্যের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। যাতে কারো মর্যাদা হীন না হয় এবং সমাজের ন্যায্যতার ক্ষতি না ঘটে।
মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন ও দাফন শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, বরং তা সামাজিক ও মানবিক দায়িত্বেরও একটি বড় অংশ। ইসলামী বিধান অনুযায়ী এটি ফরজে কেফায়া, যা মুসলিম সমাজের ঐক্য ও মর্যাদা বজায় রাখতে অপরিহার্য। প্রতিটি মুসলিমের উচিত জীবিত অবস্থায় এ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা ও প্রয়োজনে এগিয়ে আসা।
এ কাজগুলো পূর্ণ শ্রদ্ধা, সম্মান ও নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করলে মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি নিশ্চিত হবে এবং দুনিয়ায় ও পরকালে পরিবারের সম্মান ও প্রশান্তি অর্জিত হবে। অতএব গোসল, কাফন ও দাফনের এই মহৎ দায়িত্ব পালন থেকে কেউ বিরত থাকবেন না।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা: আসিফ নজরুল
- পুরুষের প্রতি পারিবারিক সহিংসতা: এক নীরব বাস্তবতা ও অস্বীকৃত সংকট
- আশুগঞ্জে এনসিপি কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়েই তোলপাড়
- ১৩ জুলাই শেয়ার দর কমেছে যে ১০টি শেয়ারের
- শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী দশ শেয়ার: ১৬ জুলাইয়ের আলোচিত গেইনারদের বিশ্লেষণ
- মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যায় রিমান্ডে মুখ খুলছে আসামিরা, উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- দেশের বাজারে আজকের সোনার ভরি মূল্য কত
- বার্নেবি হোয়াইট-স্পানারের ‘Partition’: একটি পরিশীলিত পাঠপ্রতিক্রিয়া
- আজ কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন
- মিটফোর্ড খুন: চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মশাল মিছিল
- ছাত্রদলের উপর 'মব' চাপানোর পেছনে শিবিরের হাত: কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ
- রূপচর্চায় নারিকেল তেলের ব্যবহার জেনে নিন
- ক্যাথরিন পেরেজ-শাকদাম: ইরানে ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তির নিখুঁত ছকের এক নারী মুখ
- ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতিতে বেঁচে আছেন ‘কৌতুকের রাজা’ দিলদার
- সমুদ্রের অতল গভীরে চীনের অভিযাত্রা: এক বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অদৃশ্য রূপ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা
- এনসিপির সংবাদ সম্মেলন: ‘আওয়ামী লীগ জঙ্গি কায়দায় হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে’
- শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সিরিজ সিরিজ জয়
- ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
- আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
- গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে সহিংসতায়,কারফিউ জারি
- জাতীয় রাজনীতিতে ফের জোরালো হচ্ছেন তারেক রহমান
- মেহেদি হাসানের ঘূর্ণিতে শ্রীলঙ্কা বিপর্যস্ত
- জাগপার রংপুর সমাবেশে তীব্র সমালোচনায় রাশেদ প্রধান, দিল্লির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
- গোপালগঞ্জের ঘটনার পর খুলনায় পৌঁছেছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা, রাতেই সংবাদ সম্মেলন
- শাকিব খানকে নিয়ে মুখ খুললেন মিষ্টি জান্নাত, বললেন— 'সব প্রশ্ন করুন তাকে'
- গোপালগঞ্জ হামলায় ব্যবস্থা না নিলে ‘লংমার্চ টু গোপালগঞ্জ’ : ইনকিলাব মঞ্চের হুঁশিয়ারি
- হাছান মাহমুদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২৫ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
- এনসিপির ‘গোপালগঞ্জ আসেন’ ডাক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ফারজানা সিঁথির
- ‘গোপালগঞ্জ বাংলাদেশেরই অংশ’— সাংবিধানিক অধিকারের কথা বললেন শফিকুর
- গোপন দলিল ফাঁস: এনবিআর কর্মকর্তা দ্বিতীয় সচিব মুকিতুল বরখাস্ত
- গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে বরিশালে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
- অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদের হত্যার বিচার হবে: আসিফ নজরুল
- সিলেট সীমান্তে রাতভর বিএসএফের পুশ-ইন, বিজিবির তৎপরতা
- খুলনার রূপসায় শ্রদ্ধাভরে পালিত হলো জুলাই শহীদ দিবস
- আসিফ মাহমুদের পোস্টে এনসিপি নেতাকর্মীদের অবস্থান
- আদালতে দীপু মনি: আমার সব মিলিয়ে ৬-৭ কোটি টাকার সম্পদ
- গাইবান্ধায় বিএনপির বিক্ষোভে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে হুঙ্কার
- গোপালগঞ্জ কারাগারে হামলা, পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী
- বিচারের মুখোমুখি হবে দোষীরা, প্রতিশ্রুতি অন্তর্বর্তী সরকারের
- শহীদ আবু সাঈদকে স্মরণে ছাত্রদলের শ্রদ্ধা ও প্রতিজ্ঞা
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা: আসিফ নজরুল
- পুরুষের প্রতি পারিবারিক সহিংসতা: এক নীরব বাস্তবতা ও অস্বীকৃত সংকট
- আশুগঞ্জে এনসিপি কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়েই তোলপাড়
- ১৩ জুলাই শেয়ার দর কমেছে যে ১০টি শেয়ারের
- শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী দশ শেয়ার: ১৬ জুলাইয়ের আলোচিত গেইনারদের বিশ্লেষণ
- মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যায় রিমান্ডে মুখ খুলছে আসামিরা, উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- দেশের বাজারে আজকের সোনার ভরি মূল্য কত
- বার্নেবি হোয়াইট-স্পানারের ‘Partition’: একটি পরিশীলিত পাঠপ্রতিক্রিয়া
- আজ কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন
- মিটফোর্ড খুন: চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মশাল মিছিল
- ছাত্রদলের উপর 'মব' চাপানোর পেছনে শিবিরের হাত: কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ
- রূপচর্চায় নারিকেল তেলের ব্যবহার জেনে নিন
- ক্যাথরিন পেরেজ-শাকদাম: ইরানে ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তির নিখুঁত ছকের এক নারী মুখ
- ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতিতে বেঁচে আছেন ‘কৌতুকের রাজা’ দিলদার
- সমুদ্রের অতল গভীরে চীনের অভিযাত্রা: এক বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অদৃশ্য রূপ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা