আন্তর্জাতিক কূটনীতি

যুক্তরাজ্য-জার্মানি ঐতিহাসিক চুক্তি: নিরাপত্তা ও সহযোগিতার নতুন অধ্যায়

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১০:০২:২৪
যুক্তরাজ্য-জার্মানি ঐতিহাসিক চুক্তি: নিরাপত্তা ও সহযোগিতার নতুন অধ্যায়

যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সম্পর্ক আরও জোরদার করতে লন্ডনে যাচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্টজ। বৃহস্পতিবার তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি নতুন “বন্ধুত্ব চুক্তি” স্বাক্ষর করবেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

এটি চ্যান্সেলর ম্যার্টজের প্রথম যুক্তরাজ্য সফর হলেও, তিনি এর আগেই স্টারমারের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন—মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ইউক্রেন সফরের সময়ও তাদের দেখা হয়।

চুক্তির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনায় অর্থায়নের দায়িত্ব নিচ্ছে ইউরোপের ন্যাটো মিত্ররা। ব্রিটেন ও জার্মানি এতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

নতুন এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, নিরাপত্তা শঙ্কা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়গুলোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও উভয় দেশ ন্যাটোর সদস্য হিসেবে আগে থেকেই পারস্পরিক প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এই চুক্তি আরও বিস্তৃত সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত করবে।

চুক্তির খসড়ায় বলা হবে: “একপক্ষের প্রতি কৌশলগত হুমকি অপর পক্ষের জন্যও হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে।” এতে সশস্ত্র হামলার ক্ষেত্রে সামরিক সহায়তাসহ পারস্পরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

এই উদ্যোগের আওতায় ২,০০০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার স্ট্রাইক মিসাইল তৈরির প্রকল্পও ঘোষণা করা হবে, যা আগামী দশকের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। ব্রিটেন থেকে জার্মানিতে বক্সার সাঁজোয়া যান ও টাইফুন যুদ্ধবিমান রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনাও এই সফরে চূড়ান্ত হবে।

চুক্তিতে আরও রয়েছে অভিবাসন ইস্যুতে যৌথ প্রতিশ্রুতি। উভয় নেতা অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেবেন। জার্মান সরকার ‘অবৈধ অভিবাসন’ সহজতর করার যে কোনও চেষ্টাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর আওতায় পাচারকারীদের বোট গুদামজাত করার স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হবে।

চুক্তিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেও যৌথ সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলগত শিল্পখাতে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য-জার্মানি বিজনেস ফোরাম চালু করা হবে, যেখানে কয়েকটি জার্মান কোম্পানি ব্রিটেনে নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা দেবে।

চুক্তিতে দুই দেশের নাগরিকদের পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করতে স্কুল সফরের জন্য সীমান্ত প্রক্রিয়া সহজ করার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া, রেল যোগাযোগ জোরদার করতেও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সম্প্রতি ইউরোস্টার জানিয়েছে, তারা ২০৩০-এর দশকে লন্ডন-ফ্র্যাঙ্কফুর্ট সরাসরি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে—যা হবে যুক্তরাজ্য-জার্মানির প্রথম এমন সংযোগ।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেপফুল এই সফরে ম্যার্টজের সঙ্গে থাকবেন এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠক করবেন।

জার্মান সরকারের এক সূত্র বলেছে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী ‘আঘাতজনক’ অভিজ্ঞতার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কের এই ইতিবাচক উন্নয়নকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।

-আলমগীর হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ