মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন অনিশ্চয়তা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১০:৫২:৪৮
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন অনিশ্চয়তা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দরজা খুলতে না খুলতেই আবারো নতুন অনিশ্চয়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে পুরো প্রক্রিয়া। এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শ্রমবাজার পুনরায় চালুর আলোচনায় অগ্রগতি না হতেই, দেশটিতে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশির গ্রেফতার হওয়া পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এর ফলে শুধু শ্রমচুক্তিই নয়, বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ভাবমূর্তি ও আস্থার ক্ষেত্রেও বড় ধরণের প্রশ্ন উঠে গেছে।

গত বছর শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি পেলেও প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে নির্বাচিত ৭ হাজার ৯২৬ জনের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে নানা প্রশাসনিক জটিলতায়। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, অথচ এর মধ্যেই সেলাঙ্গর ও জোহর রাজ্যে গত এপ্রিল থেকে পরিচালিত অভিযানে বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল নিজেই ২৭ জুন বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। তার মতে, গ্রেফতারদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ আইনে মামলা করা হয়েছে, ১৫ জনকে দেশছাড়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এ ঘটনাকে ঘিরে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে আরও সতর্ক হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকেরা।

অভিবাসন বিশ্লেষক আসিফ মুনীর মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারকে আগ বাড়িয়ে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (JWG) মাধ্যমে আবারো দ্রুত আলোচনা শুরু করা দরকার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চাইলে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ে ওই সন্দেহভাজনদের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। এতে করে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো অপরাধীদের দায় ব্যক্তিগত না গোষ্ঠিগত। পাশাপাশি মালয়েশিয়াকে বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর আগে সঠিকভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হবে। এতে দেশটির নিরাপত্তা উদ্বেগ অনেকটা প্রশমিত হতে পারে।”

এদিকে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওকাপের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এই ঘটনা কেবল মালয়েশিয়া নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছেও আমাদের শ্রমবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। বিদেশি নিয়োগকারীরা যদি সন্দেহ করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাহলে তারা কর্মী নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “একজন বা কয়েকজনের অপরাধ পুরো দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। তবে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া দরকার।”

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, বরং ফোন রিসিভ না করায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ