ঢাবি থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়নের দিন ছিল ১৭ জুলাই

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১০:৪৩:০৫
ঢাবি থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়নের দিন ছিল ১৭ জুলাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৭ জুলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তপ্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ওইদিন সারাদেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬ জুলাই রাত থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে থাকে। ১৭ জুলাই দুপুর নাগাদ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিতাড়িত করেন। সেই সঙ্গে তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ওইদিন ছিল ১৬ জুলাইয়ের শহীদদের গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি। এটি হওয়ার কথা ছিল রাজু ভাস্কর্যের সামনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তারা আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আখতার হোসেনকে আটক করে। এসময় সংবাদমাধ্যমকর্মীরা এগিয়ে এলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে।

পুলিশি বাধায় শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের বদলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন। এরপর বিকেল সোয়া চারটার দিকে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল বের করলে পুলিশ একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক ও মলচত্বরে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।

এই পরিস্থিতির জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট জরুরি সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করে।

অপরদিকে, ওই রাতেই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। এর আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সামাজিক মাধ্যমে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৮ জুলাই দেশজুড়ে সর্বাত্মক প্রতিবাদ পালনের ডাক দেন তিনি।

আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আসিফ মাহমুদের লেখা বই “জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু”-তে সেই সময়কার অনেক ঘটনা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৭ জুলাই হল এলাকায় যখন গুলি ও হামলা চলছিল, তখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব আসে। একপর্যায়ে কিছু শর্তে তারা আলোচনায় রাজি হন। সমন্বয়কারীদের সঙ্গে বৈঠকের একপর্যায়ে কৌশলগতভাবে আসিফ মাহমুদকে আলোচনায় অংশ না নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই পুরো সময়জুড়ে ছাত্রসমাজের ঐক্য, প্রতিরোধ ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা যেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্রের কঠোর দমননীতিও ইতিহাসে রয়ে যায় একটি গভীর ক্ষতের মতো।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ