তিনজনের ডিএনএতে জন্ম ৮ শিশু: বিরল রোগ প্রতিরোধে সাফল্য

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১১:০৩:৫৪
তিনজনের ডিএনএতে জন্ম ৮ শিশু: বিরল রোগ প্রতিরোধে সাফল্য

বিজ্ঞান ও চিকিৎসা গবেষণায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটিয়েছে ব্রিটেন। এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে মায়ের পাশাপাশি এক দাতা নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ব্যবহার করে জন্ম হয়েছে আটটি সুস্থ শিশুর। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য ছিল জিনঘটিত মারাত্মক ও বিরল রোগ প্রতিরোধ করা।

সাধারণত মানুষের বেশিরভাগ ডিএনএ থাকে সেলের নিউক্লিয়াসে, যা বাবা-মার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আসে। তবে সেলের বাইরের অংশ, অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়াতেও কিছু ডিএনএ থাকে। এই অংশে যদি ত্রুটি থাকে, তবে শিশুর মধ্যে পেশিশক্তি দুর্বলতা, খিঁচুনি, বুদ্ধি বিকাশে সমস্যা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

এই সমস্যার সমাধানে ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা এক বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এতে মায়ের ডিম্বাণুর নিউক্লিয়ার ডিএনএ তুলে নেওয়া হয় এবং একটি স্বাস্থ্যবান ডোনার নারীর ডিম্বাণুতে তা প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই ডোনার ডিম্বাণুর মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে ঠিকঠাক, তবে নিউক্লিয়ার ডিএনএ মুছে ফেলা হয়। ফলে resulting শিশুর ডিএনএ-তে মায়ের, বাবার এবং ডোনার নারীর মাইটোকন্ড্রিয়ার সংমিশ্রণ থাকে—তিনজনের অংশীদারিত্বে তৈরি হয় নতুন জীবন।

নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা ২২টি নিষিক্ত ডিম্বাণুতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন এবং সেখান থেকে জন্ম নেওয়া ৮ শিশুর শরীরে কোনো মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ ধরা পড়েনি। এছাড়া একজন মা এখনও গর্ভবতী বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্বখ্যাত ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী রবিন লাভেল-ব্যাজ জানান, একটি শিশুর দেহে সামান্য ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া গেলেও তা রোগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও শিশুটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্ডি গ্রিনফিল্ড এই আবিষ্কারকে ‘বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অসাধারণ সাফল্য’ বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি জানান, শুধুমাত্র সেসব পরিবারেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে, যাদের ক্ষেত্রে জিনঘটিত রোগের বিকল্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই।

এদিকে বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো এই চিকিৎসা পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যুক্তরাজ্যে ২০১৬ সালে আইনি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এর ব্যবহার শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়াতেও এটি বৈধ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এমন জিনগত পরিবর্তন নিষিদ্ধ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু দাতা নারীর ডিএনএ পরিমাণে ১ শতাংশেরও কম, তাই এটি সন্তানের বৈশিষ্ট্যে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না। এটি রক্ত বা হাড়ের মজ্জা দানের চেয়েও কম জেনেটিক প্রভাব সৃষ্টি করে।

মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগে নিজের সন্তান লিলিকে হারানো লিজ কার্টিস বলেন, “যেখানে আগে শুধু অসহায়ত্ব ছিল, সেখানে এখন এই সাফল্য নতুন আশার আলো জাগায়।” তিনি 'লিলি ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করে গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজে যুক্ত হয়েছেন এবং নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ