ধর্ষণ মামলায় বিএনপি-ছাত্রদল নেতাদের নাম, পাহাড়ে উঠছে ক্ষোভের আগুন

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৮ ১৭:২৯:৪১
ধর্ষণ মামলায় বিএনপি-ছাত্রদল নেতাদের নাম, পাহাড়ে উঠছে ক্ষোভের আগুন
কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে পাহাড়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড় জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার সকালে রাঙামাটির শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের দুই ঐতিহাসিক সংগঠন—পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)—এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম এলাকা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি কে কে রায় সড়ক, রাজবাড়ি, শিল্পকলা একাডেমি, কালিন্দীপুর, বিজন সরণি ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে আবার জিমনেসিয়াম এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

'নারীরা ঘরেও নিরাপদ নন'—বক্তাদের ক্ষোভ

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাহাড়ি নারীদের জন্য এখন নিজস্ব ঘরবাড়িও নিরাপদ নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিকভাবে অপরাধীদের রক্ষার প্রবণতার কারণেই এমন ভয়াবহ ঘটনা বারবার ঘটছে। বক্তারা আরও বলেন, "ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়, কিন্তু অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয়, ফলে সাহস পেয়ে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।"

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সহসভাপতি কবিতা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক মিলন চাকমা সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি ক্যাসাইনু মারমা এবং পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা।

ধর্ষকদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

বক্তারা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চার ধর্ষকের যে ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে মনে হয়, তারা নিজেদের কোনো অপরাধেই দোষী মনে করছে না। এমন প্রকাশ্য নির্লজ্জতা এবং অনুশোচনাহীনতা সমাজ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননার ইঙ্গিত দেয়।

রাজনৈতিক পরিচয়ে চিহ্নিত অভিযুক্তরা

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নে গত বুধবার রাতে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫), এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন (৩২)।

এ ছাড়া মামলার পলাতক দুই আসামি হলেন ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনির ইসলাম (২৯) এবং ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল ইসলাম (২৩)। অভিযুক্ত ছয়জনেরই কোনো না কোনোভাবে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্যকে আরও স্পষ্ট করেছে।

বিচারের দাবিতে পাহাড়জুড়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র গ্রেপ্তার নয়, দ্রুততম সময়ে আইনি প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। "এদের দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধই তাদের প্রকৃত পরিচয়। এই অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে পাহাড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধ করা যাবে না,"—বলেছেন কবিতা চাকমা।

পাহাড়ে বিচারহীনতা ও নারীর নিরাপত্তার সংকট

পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রেই বিচার হয় না বা দীর্ঘসূত্রতায় হারিয়ে যায়। বক্তারা বলেন, “এই অপরাধীরা যদি বিচারের আওতায় না আসে, তবে এটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভয়ংকর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারী-শিশুদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

এই ঘটনাটি শুধুই একটি ধর্ষণের ঘটনা নয়; এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, নারীর মর্যাদা, এবং আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থার প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। রাঙামাটিতে পাহাড়ি ছাত্র ও নারী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ পাহাড়ে সুবিচার ও ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে। এখন প্রশ্ন—প্রশাসন ও রাষ্ট্র কি এই দাবি শোনার জন্য প্রস্তুত?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ