ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধে ইরানের ‘গোপন কৌশল’ ফাঁস করল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৮ ১০:৪৭:২৭
ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধে ইরানের ‘গোপন কৌশল’ ফাঁস করল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

বিশ্ব রাজনীতিতে আলোড়ন তোলা এক গোপন যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্প্রতি উন্মোচন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনে পত্রিকাটি দাবি করেছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের এক অঘোষিত সংঘর্ষে তেহরান সফলভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।

এই যুদ্ধ পরিস্থিতি, যা অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়নি, সেখানে ইরান বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যুদ্ধের ধরন পাল্টে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ধারাবাহিক, পর্যায়ক্রমিক আক্রমণ এবং বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি করে।

বিশেষ করে ফাতেহ-১ নামের উন্নত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইরান বিশেষ গুরুত্ব দেয়। হামলার সময় ও জায়গায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্য এনে তারা ‘আয়রন ডোম’সহ ইসরায়েলের বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করে ফেলে।

প্রথমদিকে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের ব্যর্থতা ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু সংঘর্ষের দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, ২২ জুন যুদ্ধের শেষ ধাপে ইরান ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যার মধ্যে ১০টি সফলভাবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে।

যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুরুতে দাবি করেছিল যে তারা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে, পরে যুদ্ধবিরতির পর তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে বাস্তবে তাদের সফলতার হার নেমে এসেছে ৮৬ শতাংশে। এমনকি মার্কিন ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, যা ইসরায়েল গোপন রেখেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উঠে এসেছে যে, এই সংঘর্ষ ভবিষ্যতের যুদ্ধশৈলীর জন্য এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছে। এতদিন যাকে বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা হতো ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেম তা যে অভেদ্য নয়, এ যুদ্ধ তা প্রমাণ করেছে।

র‌্যান্ড করপোরেশনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাফায়েল কোহেন বলেন, “কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই ১০০ ভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। প্রতিটি ব্যবস্থারই কোথাও না কোথাও দুর্বলতা থাকে, যা খুঁজে বের করে একে অকার্যকর করা সম্ভব।”

এই ঘটনার রেশ গিয়ে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রেও। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দুর্বলতা দেখে মার্কিন প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় নতুন করে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ঘোষণা দেয়। ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের একটি প্রকল্পে তারা ১৭৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘোষণা করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ভৌগোলিক পরিসর ও বৈচিত্র্যময় সীমান্তপ্রবণতা একে আরও জটিল প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তোলে, যেখানে ইসরায়েলের মতো ‘কেন্দ্রীভূত’ প্রতিরক্ষা কৌশল কার্যকর নাও হতে পারে।

প্রতিবেদনের শেষাংশে জানানো হয়, এই সংঘর্ষ ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশের সামরিক দিক থেকে আত্মসমালোচনার সূত্র খুলে দিয়েছে। তারা এখন তাদের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করছে। সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ যুদ্ধের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত পালাবদলের সূচনা ঘটছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ