ব্রিটিশ গোয়েন্দা-তথ্য ফাঁস, তালেবানের টার্গেটে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৮ ১১:২১:২৮
ব্রিটিশ গোয়েন্দা-তথ্য ফাঁস, তালেবানের টার্গেটে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা!

যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। দেশটির গোপনচর সংস্থা এমআই-সিক্স এবং স্পেশাল ফোর্সের শতাধিক সদস্যের পরিচয়সহ হাজার হাজার আফগান নাগরিকের সংবেদনশীল তথ্য চুরির ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। ব্রিটিশ হাইকোর্টের এক বিচারক গোপনীয়তা সংক্রান্ত এক বিশেষ নিষেধাজ্ঞার অংশ প্রত্যাহার করায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) মিডিয়া সংস্থাগুলো এই ঘটনা প্রচার করতে সক্ষম হয়।

ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে বিশেষ বাহিনী ও গোপনচরদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এবং আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে কাজ করা প্রায় ১৯,০০০ আফগান নাগরিকের বিস্তারিত আবেদনপত্র। আফগানিস্তানে তালেবানের প্রতিশোধের আশঙ্কা থাকায় এদের অনেকেই এখন মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের সামরিক উপস্থিতির সময় যারা ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে কাজ করেছিলেন, তাদের তথ্য এবং যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের জন্য জমা দেওয়া আবেদনপত্র অনিরাপদ একটি ডেটাবেসে সংরক্ষিত ছিল। ডেটাবেসে যুক্ত ছিল ব্রিটিশ সেনা ও গোয়েন্দাদের স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্যও।

এই ভয়াবহ তথ্য ফাঁস ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত সরকার বুঝতেই পারেনি যে ডেটাবেসটি ভেঙে তথ্য চুরি করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্যের কিছু অংশ একটি আফগান ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ করে, এবং ইঙ্গিত দেয় যে, তার কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে।

তথ্য ফাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানের হুমকি আরও বাস্তব হয়ে ওঠে, কারণ তারা আগেই বলেছিল—পশ্চিমা বাহিনীর হয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এসব আফগান নাগরিকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ায় ঘটনাটিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যয়’ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘Afghan Relocations and Resettlement (ARR)’ নামে একটি বিশেষ পুনর্বাসন প্রকল্প গোপনে চালু করা হয়, যার মাধ্যমে ৪,৫০০ জন আফগান ও তাদের পরিবার যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ২,৪০০ জনকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।

এই ফাঁসের ঘটনাটি এতটাই স্পর্শকাতর ছিল যে, আদালতের ‘সুপার ইনজাংশন’ আদেশের মাধ্যমে শুধু বিষয়বস্তু নয়, আদেশের অস্তিত্বও গোপন রাখা হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষেও এতদিন সেটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তি ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার আবেদন দ্রুত নিষ্পন্ন করে তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসে। এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের ছাপ রয়েছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তারা জানিয়েছে যে কেউ যদি ARR প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাজ্যে আসে, তাকে কঠোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ