গাজার নারীদের নিয়ে ‘মায়াকান্না’ করলেন নেতানিয়াহু, নেটিজেনরা বলছেন ভণ্ডামি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ১০:৫১:৩০
গাজার নারীদের নিয়ে ‘মায়াকান্না’ করলেন নেতানিয়াহু, নেটিজেনরা বলছেন ভণ্ডামি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক পডকাস্টে গাজার নারীদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে যাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, সেই নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ফুল সেন্ড নামের একটি পডকাস্টে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “গাজার নারীদের কোনো সম্পত্তির অধিকার নেই, তাঁদের জীবন মূল্যহীন, তাঁরা নিপীড়নের শিকার। কথিত কোনো অপরাধ করলে তাঁদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়।”

তবে অনেকেই নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ভণ্ডামিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, যাঁদের মুক্তির কথা তিনি বলছেন, সেই ফিলিস্তিনি নারীদের ওপরই তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার দিনের পর দিন বোমা হামলা চালাচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছেন ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন, যাদের একটি বড় অংশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রায় ৭০০টির মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলার তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। মাতৃত্বসেবাদানকারী হাসপাতালের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র আটটিতে, তাও আংশিক সেবা দিতে পারছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই তাঁর বক্তব্যকে 'দখলদারি নারীবাদ' বলে আখ্যা দেন। একজন মন্তব্য করেন, “গাজার নারীরা চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক—তাঁদের শুধু পর্দা দেখে অবদমিত বলে ভাবা অপমানজনক।” আরেকজন লিখেছেন, “নারীদের রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া মানবাধিকারের নামে ভণ্ডামি।”

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা। ফিলিস্তিনি নারীরা বহু বছর ধরে প্রতিরোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যসেবার নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁদের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবেই কেবল তুলে ধরা বাস্তবতা বিকৃত করে বলেও মত দিয়েছেন তাঁরা।

নেতানিয়াহু সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, “হামাস যাঁদের দমন করে রেখেছে, তাঁদের কেন হামাসের সমর্থক ভাবা হচ্ছে? তাঁদের তো স্বাধীনভাবে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।”

এই বক্তব্য এমন এক সময় এল, যখন গাজার মানুষ—বিশেষ করে নারী ও শিশুরা—ইসরায়েলের টানা অবরোধে ওষুধ, খাদ্য ও পানির অভাবে কঠিন মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ