নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে অচল রাজশাহী বিএনপি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৭ ০৮:০৫:৪২
নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে অচল রাজশাহী বিএনপি

রাজশাহী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে চরম স্থবিরতায় রয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ জুলাই গঠিত তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর ছয় বছর পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। এতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও তীব্রতর হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে কেন্দ্রঘনিষ্ঠ আন্দোলন-সংগঠনের গতিশীলতায়।

দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত একাধিক নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে জেলা ও উপজেলা ইউনিটে কমিটি গঠন না হওয়ায় নেতৃত্ব সংকট, দ্বন্দ্ব ও দখল-রাজনীতির সংস্কৃতি আরও গভীর হয়েছে। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজশাহী জেলা বিএনপির এ অচলাবস্থা দলীয় কর্মকাণ্ড ও ঐক্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৯ সালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে ঘোষিত ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ছিল মাত্র তিন মাসের জন্য। সেই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আবু সাঈদ চাঁদকে এবং সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান বিশ্বনাথ সরকার। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তা দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কার্যকর থাকায় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিস্তর কটাক্ষ হচ্ছে।

আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য তাজমুলতান টুটুল ফেসবুকে রসিকতা করে মন্তব্য করেন, “এই কমিটি না থাকলে ছয় বছর ধরে সদস্য পরিচয় দিতে পারতাম না। আজীবনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হোক।” অপর সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন বিস্ময়ের চিহ্ন দিয়ে লিখেন, “আলহামদুলিল্লাহ! ছয় বছর পূর্ণ!”

জানা গেছে, রাজশাহী জেলার অধীনে বিএনপির ২৩টি ইউনিট থাকলেও গত ছয় বছরে মাত্র দুটি ইউনিটে (গোদাগাড়ী উপজেলা ও পৌরসভা) পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়েছে। ৯টি ইউনিটে দেওয়া হয়েছে কেবল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নামসহ আংশিক কমিটি। বাকি ১২টি ইউনিট এখনো সম্পূর্ণভাবে অচল।

দলের একাংশের অভিযোগ, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কিছু নেতা তাদের পদ-পদবি ব্যবহার করে অনিয়মে জড়িয়েছেন। তারা সরকারি দলের দোসরদের আশ্রয় দিয়ে মামলা বাণিজ্য, স্বার্থসিদ্ধি ও ত্যাগীদের উপেক্ষা করে চলেছেন। এই অবস্থায় দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে, কমিটির বাইরে থাকা অনেক নেতার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে অপর অংশ। তারা বলছে, যেসব নেতা গত ১৬ বছর রাজপথে অনুপস্থিত ছিলেন, এখন তারাই মাঠে আধিপত্য বিস্তার ও দখলবাজির মাধ্যমে দলীয় স্বার্থকে বিপন্ন করছেন।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ এসব দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা দলীয় আন্দোলনের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনের পর বিভিন্ন ইউনিটে সংঘর্ষ ও দলীয় কোন্দলে অর্ধশতাধিক কর্মী আহত হন এবং অন্তত তিনজন নিহত হন।

জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী এনামুল হক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এটা দলীয় কাঠামোগত ব্যর্থতা। একটি সংগঠনে গঠনতান্ত্রিকভাবে সময়মতো কাউন্সিল না হওয়া নেতৃত্বের অযোগ্যতার প্রমাণ।”

আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ২০১৯ সালের পর থেকে দলীয় আন্দোলন-সংগ্রাম, বিশেষ করে সরকারবিরোধী রাজপথের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বিলম্বিত হয়েছে। তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার-হয়রানি ও প্রার্থীদের মনোমালিন্যসহ নানা জটিলতায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। তবে শিগগিরই বাকি ইউনিটগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।”

তৃণমূলের নেতা একরাম হোসেন বলেন, “আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংগঠনকে কার্যকর করতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়া কোনো পথ নেই।” অপর নেতা আব্দুর রাকিব বলেন, “নেতৃত্বের দখল নিতে অনেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু দলের জন্য যারা নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না।”

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ