বিশেষ প্রতিবেদন
হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস

দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক বিস্ময়কর ভূখণ্ড—চীন। পাহাড়, মরুভূমি, নদীনালা আর বিস্তৃত সমভূমির মাঝে হাজার হাজার বছরের এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস ধারণ করে আছে এই দেশটি। প্রাচীন চীন কোনো একক রাজ্যের নয়, বরং এক মহাজাতির আত্মপরিচয়, দর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। আজকের চীন শুধু একটি আধুনিক রাষ্ট্র নয়—এর জন্ম, বিকাশ ও বিস্তার এক মহাকাব্যিক যাত্রা।
হুয়াংহে নদী: সভ্যতার জননী
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে, পৃথিবীর মানচিত্র তখনো গঠিত হয়নি, নগরায়নও শুরু হয়নি। কিন্তু আজকের চীনের উত্তরাংশে এক নদী—হুয়াংহে, বা ‘হলুদ নদী’—বয়ে চলেছিল। কখনও শান্ত, কখনও করাল; এই নদী ছিল একদিকে মৃত্যুর কারণ, অপরদিকে প্রাণের উৎস। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে হুয়াশিয়া নামক সভ্যতা, যেটি চীনের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বীজ রোপণ করে।
গবেষণা বলছে, হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা ন্যাঙ্গাও ও লুয়াংঝু সংস্কৃতির মানুষ কৃষি করত, পশুপালন করত, আর মৃত্তিকা দিয়ে গৃহস্থালির পাত্র বানাতো। তারা ধর্মীয় রীতিতে বিশ্বাস করত এবং সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করত। এদের ধাতব অস্ত্র ছিল না, রাজাও ছিল না, কিন্তু ছিল চিন্তা, দর্শন এবং শিল্প।
শিয়া রাজবংশ: কিংবদন্তির ইতিহাস
হুয়াংহে নদীভিত্তিক সভ্যতার ধারাবাহিকতায় চীনের প্রথম কিংবদন্তীতুল্য রাজবংশ ছিল ‘শিয়া’। যদিও এই রাজবংশের কোনো লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তথাপি ‘গ্রেট ইউ’-এর বাঁধ নির্মাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাহিনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে চীনের প্রথম রাজা হিসেবে স্মরণ করা হয়।
এই পর্যায়ে আকাশপূজা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ড্রাগনের ধারণা সমাজে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ড্রাগন এখানে ছিল শক্তি, বৃষ্টি ও রাজত্বের প্রতীক। স্বর্গের অনুমোদন ব্যতীত কেউ রাজা হতে পারবে না—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয় "Mandate of Heaven" ধারণা, যা পরবর্তী চীনা রাজতন্ত্রের মৌলিক নৈতিক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
সাং রাজবংশ: লিখিত ইতিহাসের শুরু
খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১০৪৬ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী সাং বা শ্যাং রাজবংশ ছিল চীনের প্রথম প্রমাণিত শাসনব্যবস্থা। এই রাজবংশের হাতে গড়ে ওঠে সংগঠিত প্রশাসন, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও কর ব্যবস্থা। রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করত এবং পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সম্মান জানাতো।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল অরেকেল বোনস—গরুর হাড় বা কচ্ছপের খোলে খোদাই করা প্রতীক, যা আগুনে গরম করে ফাটলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো। এই প্রতীকগুলোই চীনা ভাষার প্রাচীনতম রূপ জিয়াগুয়ানের সূচনা করেছে। পাশাপাশি সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জ প্রযুক্তি এবং যুদ্ধ সংস্কৃতিতে চীনের ভিত মজবুত করে।
ঝৌ রাজবংশ: চীনা দর্শনের অগ্রযাত্রা
খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ সালে ঝৌদের রাজা উ একটি বিশাল যুদ্ধে সাং রাজবংশকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধ ছিল কেবল সামরিক বিজয় নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিষ্ঠা। “Mandate of Heaven” ধারণার ওপর ভিত্তি করে ঝৌ শাসকরা স্বর্গীয় অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে।
ঝৌ রাজবংশ ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম—প্রায় ৮০০ বছর। এই সময়েই গড়ে ওঠে সমাজ শ্রেণীবিন্যাস (শাসক, কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী), ধর্মীয় রীতিনীতির পরিশীলন, এবং ৫ উপাদান তত্ত্ব—আগুন, জল, মাটি, ধাতু ও কাঠ। পাশাপাশি সমাজে শুরু হয় দার্শনিক আত্মানুসন্ধান।
আত্মার জন্ম: কনফিউশনিজম ও টাওইজমের বীজ
ঝৌ যুগের শেষার্ধে চীন বিভক্ত হতে থাকে ছোট ছোট রাজ্যে। যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা আর কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার মধ্যেও জন্ম নেয় চিন্তা, দর্শন এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজ। এখানেই সূচনা হয় চীনের দুই মহান দার্শনিক ধারা—কনফিউশনিজম এবং টাওইজম—যা আগামী হাজার বছর ধরে চীনের সামাজিক কাঠামো, শাসন ও মূল্যবোধ গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।
সময়ের গভীরে গাঁথা চীনের আত্মপরিচয়
হুয়াংহে নদীর পলিমাটি শুধু চাষযোগ্য জমি তৈরি করেনি, বরং ধারণ করেছে এক জাতির ইতিহাস, দর্শন এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। শিয়া থেকে ঝৌ—প্রতিটি রাজবংশ, প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি বিশ্বাস গড়ে তুলেছে এমন এক চীন, যা সময়ের চেয়ে প্রাচীন, কল্পনার চেয়েও বিস্তৃত।
আজকের আধুনিক চীন যখন অর্থনীতিতে, ভূরাজনীতিতে এবং প্রযুক্তিতে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়, তখন তার শেকড় ফিরে যায় সেই প্রাচীন হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক নিরব, অথচ প্রবল, সভ্যতায়।
আজও টিকে থাকা ছোট রাজতন্ত্রগুলোর অজানা গল্প
বিশ্বের রাজতন্ত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থা বিশ শতকে ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়ে এবং তাদের জায়গায় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখনো বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক একক রয়েছে যেখানে রাজপরিবার বা বংশগত শাসকের উপস্থিতি বজায় আছে। কোথাও শাসক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, আবার কোথাও ঐতিহ্যগতভাবে নির্দিষ্ট বংশ থেকে মনোনীত হন। এখানে বিশ্বের ছোট ছয়টি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওয়ালিস ও ফুটুনা: ফরাসি অঞ্চলের ভেতরে তিনটি ঐতিহ্যবাহী রাজত্ব
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ওয়ালিস ও ফুটুনা দ্বীপপুঞ্জ মাত্র ১৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি ফরাসি ওভারসিজ কালেক্টিভিটি হলেও এর ভেতরে তিনটি ঐতিহ্যগত রাজত্ব এখনো সক্রিয় রয়েছে। ফরাসি সরকার এখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিজস্ব প্রথা অনুযায়ী রাজা বা প্রধান নির্বাচন করে থাকে। ওয়ালিস দ্বীপের শেষ রাজা কাপেলিয়েল ফাউপালা ২০০৮ সালে সিংহাসনে বসেন এবং ২০১৪ সালে স্থানীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে পদচ্যুত হন। তাকুমাসিভা বংশ ১৭৬৭ সাল থেকে এ অঞ্চলে শাসন করছে, যদিও ১৮১৮ থেকে ১৮২০ পর্যন্ত কুলিটেয়া বংশ স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল। ফুটুনা দ্বীপে দুটি স্বতন্ত্র প্রধানতন্ত্র রয়েছে সিগাভে এবং তুয়া। সিগাভের বর্তমান রাজা পোলিকালেপো কোলিভাই এবং তুয়ার চার বছর শাসকশূন্য থাকার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পেটেলো সি এখানকার রাজা নির্বাচিত হন।
ভুটান: নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ভুটান ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি বৌদ্ধ রাজত্ব। বিশ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত দেশটি একটি সম্পূর্ণ নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হতো। আইন ব্যবস্থা, কোড বা আলাদা বিচারিক কাঠামো সবই রাজাধিরাজের সিদ্ধান্তনির্ভর ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক তাঁর স্বেচ্ছা উদ্যোগে কিছু ক্ষমতা ত্যাগ করেন এবং গণতন্ত্রায়নের পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াও এই পরিবর্তনেরই অংশ।
টোঙ্গা: প্রশান্ত মহাসাগরের শতবর্ষী সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ১৭০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টোঙ্গা ১৮৭৫ সাল থেকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এর মোট আয়তন মাত্র ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার হলেও টোঙ্গার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সম্রাজ্ঞী সালোতে টুপো তৃতীয় ১৯১৮ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শাসন করেন এবং তাঁর মর্যাদাপূর্ণ আচরণে জনগণ তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। ১৯৫৩ সালে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও খোলা রথে বসে উৎসব উদযাপনে অংশ নেওয়া তাঁর দৃঢ়তা এবং আন্তরিকতা জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
ব্রুনাই: তেলসমৃদ্ধ ইসলামি সুলতানাত
বর্নিও দ্বীপের উত্তরাংশে অবস্থিত ব্রুনাই দারুসসালাম ৫৭৬৫ বর্গকিলোমিটারের একটি ইসলামি সুলতানাত। সুলতান দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয় পদেই অধিষ্ঠিত। দীর্ঘ শতাব্দী ব্রিটিশ রক্ষণশীলতার অধীনে থাকার পর ১৯৮৪ সালে ব্রুনাই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে সুলতান ক্রমে কঠোর ইসলামি মূল্যবোধ অনুসরণের আহ্বান জানান এবং ২০১৪ সালে দেশটি শরিয়াভিত্তিক ফৌজদারি আইন কার্যকর করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
লেসোথো: পর্বতমালা বেষ্টিত আফ্রিকার একটি ছোট রাজত্ব
লেসোথো ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যা সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা বেষ্টিত। উনবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ কলোনি এই অঞ্চলকে দখল করলে সোটো জনগোষ্ঠী অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই করে এবং ১৮৮০ থেকে ১৮৮১ সালের গান যুদ্ধ দেশটিকে আবার ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে নিয়ে যায়। এই বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা লেসোথোকে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ১৯৬৬ সালে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এসওয়াতিনি: ঐতিহ্য, সম্পদ এবং দারিদ্র্যের বৈসাদৃশ্য
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী এসওয়াতিনি প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি রাজতন্ত্র। এর বর্তমান শাসক রাজা মসোয়াতি তৃতীয় প্রয়াত রাজা সোবুজা দ্বিতীয়ের প্রায় ৭০ স্ত্রীর মধ্যে একজনের সন্তান। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল ডজনেরও বেশি। রাজপরিবারের বিলাসী জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষের বাস্তবতার সঙ্গে প্রবল বিরোধ সৃষ্টি করে কারণ দেশে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং এইচআইভি সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। গবাদিপশু এখানে শুধু খাদ্য বা পরিশ্রমের উৎস নয় বরং সম্পদের প্রতীক এবং বিবাহের সময় কন্যাদায় হিসেবে গরু দেওয়া হয়। লুদজিদজিনিতে অবস্থিত রাজকীয় গ্রাম এবং পবিত্র গবাদিপশুর খোঁয়াড় এসওয়াতিনির ঐতিহ্যবাহী সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
সূত্র: ব্রিটানিকা
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি কারা? জানুন ভয়ংকর তথ্য
১৯৬৩ সালে আলফ্রেড হিচকক নির্মাণ করেন তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম বিখ্যাত থ্রিলার দ্য বার্ডস। ছবিতে দেখানো হয়, যদি হঠাৎ অসংখ্য পাখি একযোগে কোনও উপকূলীয় শহরকে আক্রমণ করে, তবে কী ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সিনেমাটি পুরোপুরি কল্পকাহিনি নয়। ১৯৬১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাপিটোলা শহরে ঘটে যাওয়া এক রহস্যময় ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই ছবিটির নির্মাণ। সে সময় সুটি শিয়ারওয়াটার প্রজাতির হাজারো পাখি বিষাক্ত ডায়াটমে আক্রান্ত অ্যাঙ্কোভি খেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বাড়িঘরের ছাদে আছড়ে পড়ে, রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মৃতদেহ। এই অদ্ভুত ঘটনাই পরবর্তীতে হিচককের কল্পনাকে উসকে দেয়।
আজও দ্য বার্ডস বা দ্য হ্যাপেনিং এর মতো চলচ্চিত্রে প্রকৃতির হঠাৎ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠার কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু সত্য হলো, বাস্তব জীবনেও পাখির আক্রমণ কখনো কখনো মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে, এলাকা রক্ষা ও ছানাদের সুরক্ষার বিষয়টি পাখিদের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু প্রজাতির পাখি এমনভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে যে তা মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
ক্যাসোয়ারি: পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি
অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির ঘন বনে বসবাসকারী ক্যাসোয়ারিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি বলা হয়। উড়তে না পারা এ পাখির পায়ের ভেতরের আঙুলে থাকে লম্বা ছুরির মতো ধারালো নখ। এই নখের এক আঘাতে মানুষ পর্যন্ত মারা যেতে পারে। ক্যাসোয়ারি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, আর কৌতূহলবশত মানুষের কাছে ঘন ঘন চলে আসে।
ক্যাসোয়ারির আক্রমণ খুব বেশি ঘটে না, তবে সাধারণত হয় খাবারের লোভে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক পর্যটককে ক্যাসোয়ারি লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়, যদিও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯২৬ সালে, যখন ক্যাসোয়ারি শিকারে যাওয়া এক কিশোরকে পাখিটি মাটিতে ফেলে তার তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে জুগুলার শিরা কেটে ফেলে।
অস্ট্রিচ: দানবাকার পাখি, ভয়ংকর লাথির শক্তি
আফ্রিকার তৃণভূমিতে বসবাসকারী উটপাখি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জীবিত পাখি। পুরুষ উটপাখির উচ্চতা ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, ওজন ১৫০ কেজির বেশি। তারা ঘণ্টায় প্রায় ৭২ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে। তবে শত্রুর মুখোমুখি হলে উটপাখি ভয়ংকর লাথি মারতে সক্ষম, যা বড় শিকারী প্রাণীকেও মেরে ফেলতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উটপাখির আক্রমণ ঘটে মানুষের উত্তেজনা বা প্ররোচনার কারণে। ১৯৮১ সালে বিখ্যাত আমেরিকান গায়ক জনি ক্যাশ নিজ বাড়ির কাছে হাঁটার সময় একটি আক্রমণাত্মক উটপাখির মুখোমুখি হন। পাখিটি তার পেটে ধারালো নখ দিয়ে আঘাত করে—সৌভাগ্যবশত শক্ত বেল্ট বাকলের কারণে প্রাণঘাতী ক্ষতি হয়নি।
ইমু: দ্রুত দৌড়বিদ কিন্তু বিপজ্জনক প্রতিরক্ষক
ইমু ক্যাসোয়ারির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, তবে কোণঠাসা হলে ভয়ংকর লাথি দিতে সক্ষম। ইমুর আক্রমণে মানব মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবে চিড়িয়াখানা ও খামারে ইমুর আক্রমণে আহত হওয়ার ঘটনা বহুবার নথিবদ্ধ হয়েছে। ২০০৯ সালে এক বছরেই বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি ইমু আক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়।
ল্যামারগায়ার: আকাশে ভাসমান অস্থিখাদক শকুন
হিমালয় থেকে আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ল্যামারগায়ার বা দাড়িওয়ালা শকুন তাদের অনন্য খাদ্যাভ্যাসের জন্য পরিচিত। এরা বড় হাড় আকাশ থেকে পাথরের ওপর ফেলে ভেঙে ভেতরের মজ্জা খায়। আক্রমণাত্মক আচরণ মানুষের প্রতি খুব কম দেখা গেলেও প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার এস্কাইলাসকে নাকি এমন একটি পাখি কচ্ছপ ফেলে ভুলবশত হত্যা করেছিল—যদিও আধুনিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে কিংবদন্তি বলেই মনে করেন।
প্যাঁচা: নীরব শিকারি, ভয়ংকর প্রতিরক্ষামোড
প্যাঁচা সাধারণত লাজুক হলেও বাসা বা ছানার সুরক্ষায় অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেট-হর্নড ও বার্ড প্যাঁচার আক্রমণের বহু ঘটনা রয়েছে। ২০১২ সালে সিয়াটলে একাধিক মানুষ একই গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার আক্রমণের শিকার হন। ওরেগনে এক দৌড়বিদের মাথায় বারবার আঘাত করে আরেকটি প্যাঁচা।
গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার টালন বা নখর ৫০০ পিএসআই শক্তিতে চাপ দিতে পারে, যা গার্ড ডগের কামড়ের সমান। আক্রমণের সময় তারা সাধারণত মানুষের মাথা ও মুখ লক্ষ্য করে।
প্যাঁচা-সম্পর্কিত সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে উত্তর ক্যারোলিনার একটি হত্যা মামলা, যেখানে দাবি করা হয় যে এক নারীর মাথায় প্যাঁচার আঘাত থেকে শুরু হওয়া দুর্ঘটনাতেই তার মৃত্যু ঘটে।
বাস্তবতা বনাম প্রচারণা: টাইটানিক রহস্য উন্মোচন
বিশ্বের অন্যতম বড় সামুদ্রিক দুর্ঘটনা টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরই “আনসিঙ্কেবল” বা ‘অডুবিত’ জাহাজ–সংক্রান্ত গল্পটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়। কিন্তু জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগেও কি সেটিকে সত্যিই অডুবিত বলা হয়েছিল? ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ বলছে, হ্যাঁ যদিও বিষয়টি ছিল অনেকটা প্রচারণার অংশ, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের আস্থার ব্যাপারে।
টাইটানিক নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত ডিজাইনার থমাস অ্যান্ড্রুস। ৫০ হাজার টনেরও বেশি ওজনের এই জাহাজটিকে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ও নিরাপদ যাত্রীবাহী জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। জাহাজটির প্রচারণা ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বহু প্রতিবেদনে এটিকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ‘অডুবিত’ বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে যে জাহাজ ডোবার মুহূর্তেও অনেক যাত্রী আতঙ্কিত হননি।
জাহাজ ডোবার সময়ও হোয়াইট স্টার লাইনের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, প্রথমে তিনি টাইটানিক ডুবছে—এই খবরই বিশ্বাস করতে পারেননি, কারণ তার ধারণা ছিল জাহাজটি অডুবিত।
নিরাপত্তা নকশাই জন্ম দিল ‘অডুবিত’ তকমা
টাইটানিককে অডুবিত মনে করার প্রধান কারণ ছিল জাহাজটির অত্যাধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এর হালের ভেতরে ছিল ১৬টি বিশাল ওয়াটারটাইট কম্পার্টমেন্ট, যেগুলোর দরজা একটিমাত্র সুইচ টিপে বন্ধ করে ফেলা যেত। ধারণা ছিল, জাহাজের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই কম্পার্টমেন্টগুলো খুব দ্রুত সিল করে দিলে জাহাজ ভেসে থাকতে পারবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নকশায় ত্রুটি ছিল। কম্পার্টমেন্টগুলো উপরের দিকে সম্পূর্ণ সিল করা ছিল না, ফলে আইসবার্গে ধাক্কা লাগার পর পানি এক কম্পার্টমেন্ট থেকে পরেরটিতে গড়িয়ে পড়ে পুরো জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়।
বিলাসিতা, প্রচারণা এবং ট্র্যাজেডির পর জন্ম নেওয়া একটি ‘মিথ’
ডুবির আগ পর্যন্ত টাইটানিকের মূল আকর্ষণ ছিল এর বিলাসবহুল কেবিন, বিশাল আকার ও অভিজাত সুবিধা। যাত্রীরা এটি বেছে নিয়েছিলেন নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং এর আভিজাত্যের জন্য। সংবাদমাধ্যমেও জাহাজটির বিলাসিতা নিয়ে বেশি লেখা হতো, নিরাপত্তা নিয়ে নয়।
জাহাজ ডোবার পরই ‘আনসিঙ্কেবল’ তকমাটি যেন নাটকীয়তা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অথচ বাস্তবতা হলো, জাহাজটিকে সম্পূর্ণ অডুবিত বলা হলেও, সেই দাবি ছিল অতিরঞ্জিত। তবে এটাও সত্য প্রচারণা, বিজ্ঞাপন ও সংবাদ প্রতিবেদনে টাইটানিককে ‘অত্যন্ত নিরাপদ’ বলা হয়েছিল বারবার।
টাইটানিক দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, প্রকৃতিকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। জাহাজটি অডুবিত এই আত্মবিশ্বাসই অনেককে দেরিতে লাইফবোটে উঠতে বাধ্য করেছিল এবং বাড়িয়েছে প্রাণহানির সংখ্যা।
সূত্র: ব্রিটানিকা
শীতে সাদা হয়ে যায় যে সাত প্রাণী, জানুন তাদের রহস্য
উত্তর গোলার্ধে শীত নেমে আসতেই প্রকৃতিতে ঘটে বিস্ময়কর এক পরিবর্তন। বরফের সঙ্গে মিশে যেতে কিছু প্রাণী বাদামি বা ধূসর রঙ ত্যাগ করে হয়ে ওঠে একেবারে সাদা। গ্রীষ্মে যাদের দেখা যায় সাধারণ রঙে, শীতে তারাই অল্প সময়ে রূপ নেয় বরফসাদা আচ্ছাদনে। যদিও আর্কটিক অঞ্চলের অনেক প্রাণী সারাবছরই সাদা থাকে, যেমন ধবলভালুক বা স্নো-অাওল, তবে এই সাত প্রাণী মৌসুমি রঙ পরিবর্তনের অনন্য ক্ষমতা দেখায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু আড়াল বা ক্যামোফ্লাজ নয়, বরং তাপ সংরক্ষণ, শক্তি ব্যবস্থাপনা এবং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবও এই রঙ পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। মেলানিনহীন সাদা লোমের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া বায়ুফাঁক শীতে অতিরিক্ত উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নীচে একে একে তুলে ধরা হলো শীতে রঙ বদলানো সাত প্রাণীর বৈজ্ঞানিক রহস্য-
১. খরগোশজাতীয় প্রাণী: ফটোপিরিয়ডের জাদু
আর্কটিক হেয়ার, মাউন্টেন হেয়ার ও স্নোশু হেয়ার শীতের শুরুতেই বাদামি ও ধূসর লোম বদলে সাদা হয়ে যায়। দিনের আলোর পরিমাণ কমতে থাকলে চোখের রেটিনা সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়, এবং শরীরে নতুন সাদা লোম গজাতে শুরু করে। প্রথমে পা, কান ও বাহ্যিক অংশ সাদা হয়, পরে পুরো শরীর।
গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষারাবরণ দ্রুত কমে গেলে এই প্রাণীরা সাদা হয়ে পড়ে মাটির রঙের বিপরীতে ফলে শিকারিদের কাছে সহজ টার্গেট হয়।
২. বেজি বা উইজেল: রাজকীয় পোশাকের উৎস
তিন প্রজাতির উইজেল লিস্ট উইজেল, লং-টেইল্ড উইজেল এবং স্টোট শীতে বরফসাদা লোম পায়। স্টোটের সাদা লোমকেই মধ্যযুগ থেকে পরিচিত ‘আরমাইন’ নামে, যা রাজা-রাজড়াদের পোশাকের গলায় ব্যবহৃত হতো। দক্ষিণাঞ্চলে থাকা উইজেলরা রঙ না বদলালেও উত্তরাঞ্চলের উইজেলরা পুরোপুরি সাদা হয়। গবেষণা বলছে, এদের রঙ পরিবর্তনও তাপমাত্রার কারণে নয়, বরং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবে ঘটে।
৩. পিয়ারি ক্যারিবু: একমাত্র রঙ বদলানো ক্যারিবু উপপ্রজাতি
কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের উচ্চ আর্কটিকে পাওয়া পিয়ারি ক্যারিবু শীতে রূপ নেয় সম্পূর্ণ সাদা আচ্ছাদনে। অন্য উপপ্রজাতির ক্যারিবুরা সারাবছর বাদামি-ধূসরই থাকে। ছোট আকার, ভিন্ন শিং কাঠামো ও রঙ বদলানোর ক্ষমতার কারণে এগুলোকে একসময় আলাদা প্রজাতি ভাবা হতো।
৪. কলার্ড লেমিং: অদ্ভুত শীতের নখর
ডিক্রোস্টনিক্স গণের লেমিংগুলো শীতে পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। যদিও এরা বেশিরভাগ সময়ই বরফের নিচে বাস করে, যেখানে ক্যামোফ্লাজ খুব দরকার নেই, তবুও বিবর্তনে এ বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। শীতকালে তাদের পায়ের পাতায় গজায় বিশেষ ‘শীতের নখর’ যা বরফ খুঁড়ে বাসা বানাতে সাহায্য করে।
৫. পটারমিগান: পালকের জাদু
পটারমিগান তিন প্রজাতির পাখি, যারা শীতে বাদামি বা ছোপ ছোপ পালক ত্যাগ করে দেহজুড়ে সাদা পালক ধারণ করে। উইলো ও রক পটারমিগানের লেজে কিছু কালো পালক থাকে, তবে হোয়াইট-টেইলড পটারমিগান পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। এমনকি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ‘হোয়াইট বুট’ গজায়, যা তুষারের ওপর হাঁটতে সুবিধা দেয়। সাদা রঙের উজ্জ্বলতা আসে পালকের ভিতরে থাকা বায়ুফাঁকের কারণে।
৬. সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার: ঘরের আলোয়ও বদলায় রঙ
একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি হিসেবে এই তালিকায় রয়েছে সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার, যাকে অনেকে ‘উইন্টার হোয়াইট’ নামেও চেনে। যদি এদের এমন ঘরে রাখা হয় যেখানে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে, তবে শীতে তারা ধূসর-রূপালি রঙ থেকে সাদা হয়ে যায়। তাপমাত্রা নয়, আলোই নিয়ন্ত্রণ করে এদের মোল্টিং চক্র।
৭. আর্কটিক ফক্স: রঙ বদলের প্রতিযোগীতা
গ্রীষ্মে বাদামি-ধূসর আর শীতে বরফসাদা এই দারুণ পরিবর্তনের জন্য আর্কটিক ফক্স বিখ্যাত। তবে আলাস্কা ও কানাডার উপকূলীয় এলাকায় এদের ‘নীল রঙের’ ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া যায়, যারা শীতে কেবল অল্প হালকা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাল শেয়াল এখন আর্কটিক অঞ্চলে ঢুকে পড়ছে, এবং খাদ্য প্রতিযোগিতায় অনেক সময় আর্কটিক ফক্সকে হারিয়ে দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা
সুগার বিট: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ চিনির উৎস
বিশ্বের চিনি উৎপাদনে আখের পরেই যে ফসলটি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে, তা হলো সুগার বিট বা বিটা ভালগারিস। আধুনিক কৃষি, খাদ্যশিল্প ও বায়োটেকনোলজির অগ্রগতির কারণে এই ফসল এখন ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উচ্চমাত্রার সুক্রোজসমৃদ্ধ রসের জন্য সুগার বিটকে আজ চিনি শিল্পের প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সুগার বিট মূলত অ্যামারান্থেসি পরিবারের উদ্ভিদ এবং বহু শতাব্দী ধরে এটি পুষ্টিকর সবজি ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৭৪৭ সালে জার্মান রসায়নবিদ আন্দ্রেয়াস মার্গগ্রাফ প্রথমবারের মতো বিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন করেন। তবে শিল্পকারখানায় বিট থেকে চিনি তৈরির যাত্রা শুরু হয় ১৮০২ সালে সিলেশিয়ায় প্রথম বিট সুগার ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
ন্যাপোলিয়ন ১৮১১ সালে এ শিল্পের প্রসারের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখান। ব্রিটিশ অবরোধে যখন ফরাসি সাম্রাজ্যের আখের চিনি আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি বিকল্প হিসেবে বিট সুগার উৎপাদনকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দেন এবং চারোনদিকে দ্রুত কারখানা স্থাপন শুরু হয়। যদিও ন্যাপোলিয়নের পতনের পর শিল্পটি সাময়িকভাবে ম্লান হয়েছিল, তবে ১৮৪০-এর দশক থেকে ইউরোপজুড়ে এর বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ১৮৮০ সালের মধ্যেই ইউরোপে বিটের উৎপাদন আখকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ চিনি উৎপাদন বিট থেকে হয়।
চাষাবাদ ও উৎপাদন চক্র
সুগার বিট সাধারণত শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসেবে চাষ হয়; তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ অঞ্চলে এটি শীতকালীন ফসল হিসেবেও ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে। সাধারণত ১৭০ থেকে ২০০ দিনের ফসলচক্রে এটি পূর্ণবয়স্ক হয়।
বীজ বপন থেকে শেকড় পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা হলে ফলন বাড়ে এবং সুক্রোজের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত অবস্থায় প্রতিটি বিটের ওজন ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং এতে ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত সুক্রোজ পাওয়া যায়।
সুগার বিটের জন্য আদর্শ মাটি হচ্ছে হিউমাসসমৃদ্ধ লোম; তবে বালুকামাটি থেকে শুরু করে ভারী মাটি পর্যন্ত বিভিন্ন মাটিতেই এটি চাষ করা যায়। শিল্পোন্নত কৃষি খামারে গভীর চাষ, যথাযথ সারের ব্যবহার, প্রিসিশন ড্রিলিং, কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা হয়।
রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের হুমকি
কালো রুট রট, সারকোসপোরা লিফ স্পটসহ নানান ছত্রাকঘটিত রোগ সুগার বিটের শেকড়ের ওজন ও সুক্রোজ মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া নিমাটোড, পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের গুবরেপোকার আক্রমণ ফসলের বড় অংশ নষ্ট করে দিতে সক্ষম। এজন্য নিয়মিত ফসল ঘুরিয়ে চাষ এবং রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা হয়।
জেনেটিক উন্নয়ন ও ব্রিডিং
উচ্চ সুক্রোজমাত্রা, রোগপ্রতিরোধ এবং ভারী শেকড় নিশ্চিত করার জন্য বহু দেশে উন্নত হাইব্রিড ও পলিপ্লয়েড জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে গ্লাইফোসেট-সহনশীল জিএম (জেনেটিকালি মডিফাইড) সুগার বিট এখন বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।
ফলন, রোগপ্রতিরোধ, অভিযোজনশক্তি এবং চিনি আহরণশীলতা—এই চারটি বৈশিষ্ট্য বাড়াতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রগ্রহে বজ্রগতির বাতাস: নতুন রহস্য উদঘাটন
শুক্রগ্রহে এমন অবিশ্বাস্য গতির ঝড়ো বাতাস বইছে, যার শক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর হারিকেনকেও ছাড়িয়ে যায়। এই তীব্র বায়ুপ্রবাহ ঘণ্টায় ১০০ মিটারেরও বেশি গতিতে পুরো গ্রহ প্রদক্ষিণ করে, যা আমাদের দৃষ্টিতে বিপর্যয়কর হলেও শুক্রে এটি বায়ুমণ্ডলের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত। বিজ্ঞানীরা এই বিস্ময়কর ঘটনাকে বলেন ‘সুপাররোটেশন’, অর্থাৎ গ্রহের পৃষ্ঠের তুলনায় তার বায়ুমণ্ডলের ঘূর্ণন অনন্ত গুণ দ্রুত হওয়া।
শুক্রগ্রহ নিজের অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় প্রায় ২৪৩ পৃথিবী–দিন, যা আমাদের সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ঘূর্ণনগুলোর একটি। অথচ তার বায়ুমণ্ডল মাত্র চার পৃথিবী–দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ গ্রহ প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করে। এই বৈপরীত্য বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বড় রহস্য ছিল।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া নতুন তথ্য বলছে, সূর্যের তাপে সৃষ্ট ‘দৈনিক বায়ু–জোয়ার’ বা ডায়ার্নাল টাইডই শুক্রের বায়ুমণ্ডলের এই অস্বাভাবিক সুপাররোটেশনের প্রধান চালিকা শক্তি। প্রতিদিন সূর্যের তাপে বায়ুমণ্ডলে যে ওঠানামা তৈরি হয়, সেটিই শক্তি সঞ্চালনের মাধ্যমে বাতাসকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। গবেষকদের মতে, এই টাইড অন্য যেকোনো প্রক্রিয়ার তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। যদিও সেমিডায়ার্নাল টাইড (দিনে দুইবার তাপজোয়ার), গ্রহজ–তরঙ্গ এবং উত্তর–দক্ষিণমুখী বায়ুপ্রবাহও কিছু মাত্রায় ভূমিকা রাখে, তবুও প্রধান নিয়ামক হলো দৈনিক তাপজোয়ার।
গবেষণায় ২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ভেনাস এক্সপ্রেস এবং জাপানের আকাতসুকি উপগ্রহ শুক্রের বায়ুমণ্ডলে রেডিও তরঙ্গের বাঁক (রেডিও অকালটেশন) পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বহু মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। পাশাপাশি উন্নত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে বায়ুমণ্ডলের ভেতরে শক্তি কীভাবে স্থানান্তরিত হয় এবং সুপাররোটেশন কীভাবে সৃষ্টি হয় তা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের তাপ থেকে উৎপন্ন এই বায়ু–জোয়ার বুঝতে পারলে শুক্রের বায়ুমণ্ডলীয় গতিশীলতার আরও গভীর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের আচরণ বোঝার পথও সুগম হবে, যা ভবিষ্যতের গ্রহ–বিজ্ঞান গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
-রাফসান
৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে ইসলামের পতাকা ওড়ার নেপথ্য কাহিনী
সিলেট, যাকে বলা হয় ৩৬০ আউলিয়ার দেশ। বাংলাদেশের এই উত্তর-পূর্ব জনপদের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। কিন্তু এই পবিত্র ভূমিতে ইসলামের বিজয়ের ইতিহাসটি ছিল এক বিশাল সংঘাত ও অলৌকিক ঘটনার সমষ্টি। ইতিহাসের পাতা ও লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, ইয়েমেনের মাটি থেকে আসা সুফি সাধক হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং তৎকালীন সিলেটের অত্যাচারী রাজা গৌর গোবিন্দের মধ্যে যে লড়াই হয়েছিল, তা কেবল অস্ত্রশস্ত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল সত্যের আধ্যাত্মিক শক্তির সঙ্গে মিথ্যার কালো জাদুর লড়াই।
গৌর গোবিন্দের অত্যাচার ও বুরহান উদ্দিনের আর্তনাদ
চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সিলেট (তৎকালীন শ্রীহট্ট) শাসন করতেন রাজা গৌর গোবিন্দ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী কিন্তু নিষ্ঠুর শাসক। ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, রাজ্যে মুসলমানরা বসবাস করলেও তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল অত্যন্ত সীমিত। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন শেখ বুরহান উদ্দিন নামক এক মুসলিম তার নবজাতক পুত্রের জন্ম উপলক্ষে একটি গরু জবাই করেন। এই খবর রাজার কানে পৌঁছালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বুরহান উদ্দিনের নবজাতক শিশুটিকে হত্যা করেন এবং তার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন।
হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর আগমন
নিরুপায় বুরহান উদ্দিন বিচারের আশায় দিল্লির সুলতানের দ্বারস্থ হন। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক তার ভাগ্নে সিকান্দার গাজীর নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান, কিন্তু গৌর গোবিন্দের যাদুবিদ্যা ও শক্তির কাছে তারা পরাস্ত হন। পরবর্তীতে হযরত শাহজালাল (রহ.) তার ৩৬০ জন সফরসঙ্গী বা আউলিয়াকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি এবং আল্লাহভীরুতা ছিল তার মূল সম্বল।
কালো জাদু বনাম আধ্যাত্মিক শক্তি
লোকশ্রুতি রয়েছে, রাজা গৌর গোবিন্দ তার রাজ্যকে রক্ষা করতে কালো জাদুর আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি তার প্রাসাদের চারপাশে জাদুকরী আগুনের বেষ্টনী তৈরি করেছিলেন এবং লোহার বিশাল সব বল ছুড়ে মুসলিম বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন। সাধারণ অস্ত্রের মাধ্যমে এই জাদু প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না।
কথিত আছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তার সঙ্গীরা যখন সুরমা নদীর তীরে পৌঁছান, তখন নদী পার হওয়ার কোনো নৌকা ছিল না। তখন শাহজালাল (রহ.) তার জায়নামাজ বিছিয়ে অলৌকিকভাবে নদী পার হন। এরপর যখন গৌর গোবিন্দের জাদুকরী প্রতিরোধের সম্মুখীন হন, তখন হযরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের আজান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আজানের সুমধুর ও শক্তিশালী ধ্বনিতে গৌর গোবিন্দের জাদুকরী প্রাসাদ কাঁপতে শুরু করে এবং তার সমস্ত কালো জাদু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
সিলেট বিজয় ও ইসলামের প্রচার
অবশেষে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা গৌর গোবিন্দ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান এবং সিলেটে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। হযরত শাহজালাল (রহ.) কেবল একজন বিজেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংস্কারক। তার আগমনের মাধ্যমেই সিলেটে এবং পরবর্তীতে বাংলার এই অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে পড়ে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ তার আধ্যাত্মিকতার ছায়াতলে আশ্রয় নেয়।
সিলেটে ইসলাম বিজয়ের এই ইতিহাস আজও মানুষের মনে জীবন্ত। হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন। গৌর গোবিন্দের দম্ভ চূর্ণ করে যেভাবে সত্য ও ন্যায়ের বিজয় হয়েছিল, তা ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
শীতের ভোরে প্রকৃতির অপূর্ব সাজ
বাংলাদেশজুড়ে শীত এখন পুরোপুরি তার আবহ নিয়ে হাজির। কুয়াশায় মোড়ানো আকাশ, হিমেল বাতাসের তীব্র ছোঁয়া, ভোরের আলোয় ঝলমলে শিশিরবিন্দু, খেজুরের রস বিক্রেতার ডাক সব মিলিয়ে শীতের সকাল যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। বছরের সবচেয়ে শীতল ঋতু হিসেবে শীত সাধারণত বাংলা ক্যালেন্ডারের পৌষ ও মাঘ মাস জুড়ে থাকে এবং এই সময়ে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতিতে নানা বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন দেখা যায়।
শীতের ভোরে প্রাকৃতিক দৃশ্য হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। আকাশে হালকা বা ঘন কুয়াশার চাদর, দূর থেকে দেখা যায় গাছপালা আর পথঘাট ধূসর পর্দায় মোড়া। ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু রোদ উঠলে মুক্তোর মতো আলো ছড়ায়। পুকুরপাড়, কৃষিজমি, গ্রামের রাস্তা সবকিছুই যেন স্নিগ্ধ ঠান্ডার কোমল ছোঁয়ায় নতুন রূপ পায়।
আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যে দেখা যায়, শীতের সকালে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা থাকে বেশ উঁচু। এর ফলে শীত আরও তীব্র অনুভূত হয়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুরে কনকনে ঠান্ডা ও হালকা শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হওয়া এখন নিয়মিত। এসব অঞ্চলে সকালে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানেই ঠান্ডার সঙ্গে যুদ্ধ।
শীতে মানুষের জীবনধারা বদলে যায়। সকালবেলা রাস্তা ঘাটে দেখা যায় গরম কাপড়ে মুড়ানো মানুষদের ব্যস্ত যাতায়াত। অফিসগামী মানুষের হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ জড়িয়ে থাকে উষ্ণতার আরাম। অনেকেই আবার ঘরে বসে উপভোগ করেন খেজুরের পাটালি কিংবা খেজুরের রস। গ্রামাঞ্চলে ভোরবেলা রস সংগ্রহের দৃশ্য শীতের অন্যতম আনন্দময় অনুষঙ্গ।
শীতকাল নানা পুষ্টিকর ফলমূল ও সবজির মৌসুম। কমলা, কুল, সফেদা, ডালিম, গাজর, ব্রোকলি, ফুলকপি, পালং শাক এসব সবজি ও ফল শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্য উপকারিতায়ও অনন্য। শীতের সকাল তাই হয়ে ওঠে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের উপযুক্ত সময়।
সাংস্কৃতিকভাবে শীতের সকাল বাঙালির জীবনকে বরাবরই প্রভাবিত করে এসেছে। বাংলা কবিতা, গান, গল্পে শীতের সকাল তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে বারবার স্থান দখল করেছে। কুয়াশা, শিশির, শীতের রোদ, খেজুরের রস এসবই বাঙালির লোকজ স্মৃতি, আবেগ ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে।
সাগরের তল থেকে মরুভূমির বুক আসলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে
আমাদের এই পৃথিবী তার গভীরে ঠিক কত রহস্য লুকিয়ে রেখেছে তা মানুষের কল্পনারও অতীত। ইতিহাসের ধুলোমাখা পাতা থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাগার পর্যন্ত এমন কিছু প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর আজও মেলেনি। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনায় থাকা হারিয়ে যাওয়া শহর থেকে শুরু করে নির্জন মরুভূমিতে একা একা হেঁটে চলা পাথর সবকিছুর মধ্যেই যেন এক অলৌকিক আখ্যান মিশে আছে। প্রকৃতির এই খেয়ালি আচরণ আর ইতিহাসের অমীমাংসিত অধ্যায়গুলো যুগে যুগে মানুষের কৌতূহলকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
রহস্যের কথা উঠলেই সবার আগে যে নাম ভেসে আসে তা হলো আটলান্টিস। দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনায় উঠে আসা এই উন্নত সভ্যতাটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ধারণা করা হয় সমৃদ্ধ এই নগরীটি মাত্র একদিনের প্রলয়ে সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গিয়েছিল। এটি কি শুধুই প্লেটোর কোনো দার্শনিক উপকথা নাকি এর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব ছিল তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে সমুদ্রের গভীরে যখনই কোনো প্রাচীন কাঠামোর সন্ধান মেলে তখনই নতুন করে আটলান্টিসকে খুঁজে পাওয়ার নেশা জেগে ওঠে। এই হারানো সভ্যতার গল্প বারবার মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির বিশালতার কাছে মানুষের জ্ঞান ও ক্ষমতা কতটা তুচ্ছ।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে রয়েছে এক অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক রহস্য যা সেইলিং স্টোনস নামে পরিচিত। এখানকার বিশাল পাথরগুলো মরুভূমির শুকনো মাটির ওপর দিয়ে যেন নিজে থেকেই এগিয়ে চলে এবং পেছনে রেখে যায় দীর্ঘ ও গভীর দাগ। বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত চলাচলের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন। একসময় মনে করা হতো এটি কোনো চুম্বকীয় বা অলৌকিক শক্তির প্রভাব। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে রাতের তীব্র ঠান্ডায় মরুভূমির কাদামাটি জমে যখন বরফের পাতলা আস্তরণ তৈরি করে তখন বাতাসের সামান্য ধাক্কাতেই এই পাথরগুলো পিছলে সামনে এগিয়ে যায়। বরফ গলে গেলে শুধু পাথরের এগিয়ে যাওয়ার চিহ্নটিই পড়ে থাকে যা দর্শকদের অবাক করে দেয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে চিলির ইস্টার দ্বীপের মোয়াই মূর্তিগুলোও যেন ভিন্ন এক সময়ের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি এই বিশাল আকৃতির মূর্তিগুলোকে রাপানুই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া ছাড়া সেই আদিম যুগে মানুষ কীভাবে পাথর কাটার সরঞ্জাম ছাড়াই এত বিশাল মূর্তি তৈরি করেছিল তা এক বড় বিস্ময়। তার চেয়েও বড় রহস্য হলো এই ভারী মূর্তিগুলো দ্বীপের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করা হয়েছিল কীভাবে। বিভিন্ন তত্ত্বে বলা হয়েছে কাঠ বা দড়ির সাহায্যে মূর্তিগুলোকে দাঁড় করিয়ে হাঁটানোর কৌশলে হয়তো পরিবহন করা হতো। তবে এই মূর্তিগুলোর প্রকৃত ইতিহাস আজও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি।
মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তানের দারভাজা গ্রামে রয়েছে এক জ্বলন্ত গর্ত যা নরকের দরজা বা দারভাজা গ্যাস ক্র্যাটার নামে পরিচিত। প্রায় ১৯০ ফুট চওড়া এবং ৭০ ফুট গভীর এই গর্তে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দিনরাত আগুন জ্বলছে। তবে এই আগুনের উৎস প্রাকৃতিক নয় বরং এর পেছনে রয়েছে মানুষের হস্তক্ষেপ। ১৯৭১ সালে একটি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র খননের সময় মাটি ধসে এই বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন বিষাক্ত মিথেন গ্যাসের বিস্তার ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা গর্তটিতে আগুন ধরিয়ে দেন এবং ভেবেছিলেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা নিভে যাবে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে মরুভূমির বুকে এটি আজও জ্বলছে। রাতের আঁধারে এই জ্বলন্ত গর্ত এক ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে যা মানুষকে প্রকৃতির ওপর মানুষের হস্তক্ষেপের পরিণতির কথা মনে করিয়ে দেয়।
আটলান্টিসের মায়া থেকে শুরু করে নরকের দরজার লেলিহান শিখা পর্যন্ত এই পৃথিবী যেন রহস্যের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক কিছু বিস্ময় হয়তো চিরকালই অমীমাংসিত থেকে যাবে। আর এই অজানা রহস্যগুলোই মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায় এবং প্রকৃতি ও ইতিহাসকে আরও নিবিড়ভাবে জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়।
পাঠকের মতামত:
- এয়ারপোর্টে আসবেন না: লন্ডন ছাড়ার আগে তারেক রহমানের বার্তা
- ডায়মন্ড অ্যানভিল সেলে জানা গেল পৃথিবীর জন্মরহস্য
- ডেভিল হান্ট ফেজ-২: চব্বিশ ঘণ্টায় বড় সাফল্য পেল পুলিশ
- হাদির চিকিৎসার সর্বশেষ আপডেট জানাল পরিবার
- হাদির চিকিৎসার সর্বশেষ আপডেট জানাল পরিবার
- শীতে কেন বাড়ে মাইগ্রেন? জেনে নিন বাঁচার উপায়
- স্ট্রোকের ৫টি আগাম লক্ষণ যা জীবন বাঁচাতে পারে
- খালেদা জিয়া ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ: প্রধান উপদেষ্টা
- আইপিএল নিলামে তোলপাড়: রেকর্ড দামে বিক্রি ফিজ
- সিডনিকে হারিয়ে রিশাদের অভিষেক রাঙাল হোবার্ট
- ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা
- বিজয় দিবসেই লন্ডনের মঞ্চে শেষবারের মতো তারেক রহমান
- ৫৪ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস হয়নি: রাবি উপাচার্য
- বিজয় দিবস নিয়ে মোদির মন্তব্যে ফুঁসে উঠল ঢাবি শিক্ষার্থী
- তারেককে নিয়ে রিল বানালেই পুরস্কার! বিএনপির অভিনব ঘোষণা
- পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আর ফিরে আসবে না: ড. ইউনূস
- ১৬ ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আসলে কী হচ্ছিল?
- সিঙ্গাপুরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওসমান হাদি
- প্রকৃতির দুর্যোগে গাজায় বাড়ছে দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়
- একই দিনে শুরু আইপিএল ও পিএসএল সূচি নিয়ে চমক
- মাত্র ৩ সপ্তাহেই বিদায় জানান সিগারেটকে: জানুন জাদুকরী ৩-৩-৩-৩ নিয়ম
- বিজয় দিবসের এয়ার শো দেখতে তেজগাঁওয়ে মানুষের ঢল
- ১৬ অক্টোবর ২০২৫: জেনে নিন আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
- ৫০ জন প্রার্থীকে হত্যার মিশন নিয়েছে আওয়ামী লীগ: রাশেদ
- নতুন রাজনীতি হবে চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিপক্ষে: জামায়াত
- ১৬ ডিসেম্বর শুধুই ভারতের জয় বললেন নরেন্দ্র মোদি
- স্বর্ণের বাজারে আবার অস্থিরতা: এক লাফে বাড়ল স্বর্ণের দাম
- মাত্র ৫টি অভ্যাসে জব্দ হবে ডায়াবেটিস
- রাজধানীসহ সারা দেশে আজকের আবহাওয়ার খবর
- সকাল থেকে বিকেল: ঢাকার রাজপথে আজকের কর্মসূচি
- একাই থামিয়ে দিলেন পাকিস্তানি বহর: বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্মদিন আজ
- জেনে নিন আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
- জিয়া বিদ্রোহ না করলে দেশ স্বাধীন হতো না: হাফিজ
- বুধবার টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- ১ বছরের শিশুও মুক্তিযোদ্ধা: ৫৪ বছরের লজ্জাজনক চিত্র
- আইপিএলের নিলামসহ টিভিতে আজকের খেলার সময়সূচি
- সাভারে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের সূচনা করলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা
- সবার ওপরে মুক্তিযুদ্ধ, বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই
- প্রতিশোধ নয় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই: তারেক রহমান
- আমরা নিরাপদ না থাকলে শত্রুরাও নিরাপদ থাকবে না: মাহফুজ
- ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলেই বিপদ: জানুন কেন
- শীতে ঠোঁট ফাটা রোধে জাদুকরী ৫টি টিপস
- আমি হালুয়া-রুটি খাওয়া সাংবাদিক নই: রিমান্ড শুনানিতে আনিসের হুঙ্কার
- সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে হাদি
- চোখের যে ৫ লক্ষণে বুঝবেন কিডনি নষ্ট হচ্ছে
- হাদির ওপর হামলায় ক্ষুব্ধ জামায়াত আমির দিলেন সিইসিকে হুঁশিয়ারি
- শকুনেরা আবারও স্বাধীনতা খামচে ধরছে: সারজিস
- জিয়ার রহমানের ডাকেই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত: তারেক রহমান
- ঘুমেও নিরাপত্তা নেই: লুট হওয়া অস্ত্রে কাঁপছে খুলনা
- সিঙ্গাপুরের পথে হাদি, চিকিৎসকদের আশার বাণী
- যেভাবে জানা যাবে স্কুল ভর্তি লটারির ফল
- দুইদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে যেসব এলাকায়
- স্কুলভর্তির ডিজিটাল লটারি শুরু, ফল প্রকাশের সময় জানা গেল
- চিকিৎসক জানাল ওসমান হাদীর বর্তমান অবস্থা
- বুধবার টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- শনি-রবিবার বিদ্যুৎ থাকবে না বহু এলাকায়
- মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি শুরুর সময়সূচি প্রকাশ
- রাজশাহীতে নলকূপে আটকে পড়া শিশুকে বের করতে সুরঙ্গ খনন
- এমপি হওয়ার আগেই ভিআইপি প্রোটোকল পেলেন হাদি: ডা. মাহমুদা মিতু
- রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন যেসব এলাকা
- তানোরে ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার শিশুসাজিদ, কেমন আছে সে
- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আজ শুরু, একটি আসনের জন্য লড়াই যতজনের
- দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের নতুন রেকর্ড
- শীতে ত্বক শুষ্ক ও র্যাশ কেন হয়, জানুন সমাধান
- বুধবার ঢাকায় কোন মার্কেট বন্ধ আজই জেনে নিন








