বিশেষ প্রতিবেদন

হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস

২০২৫ আগস্ট ০২ ১৬:১৩:৪৬
হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস

দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক বিস্ময়কর ভূখণ্ড—চীন। পাহাড়, মরুভূমি, নদীনালা আর বিস্তৃত সমভূমির মাঝে হাজার হাজার বছরের এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস ধারণ করে আছে এই দেশটি। প্রাচীন চীন কোনো একক রাজ্যের নয়, বরং এক মহাজাতির আত্মপরিচয়, দর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। আজকের চীন শুধু একটি আধুনিক রাষ্ট্র নয়—এর জন্ম, বিকাশ ও বিস্তার এক মহাকাব্যিক যাত্রা।

হুয়াংহে নদী: সভ্যতার জননী

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে, পৃথিবীর মানচিত্র তখনো গঠিত হয়নি, নগরায়নও শুরু হয়নি। কিন্তু আজকের চীনের উত্তরাংশে এক নদী—হুয়াংহে, বা ‘হলুদ নদী’—বয়ে চলেছিল। কখনও শান্ত, কখনও করাল; এই নদী ছিল একদিকে মৃত্যুর কারণ, অপরদিকে প্রাণের উৎস। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে হুয়াশিয়া নামক সভ্যতা, যেটি চীনের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বীজ রোপণ করে।

গবেষণা বলছে, হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা ন্যাঙ্গাও ও লুয়াংঝু সংস্কৃতির মানুষ কৃষি করত, পশুপালন করত, আর মৃত্তিকা দিয়ে গৃহস্থালির পাত্র বানাতো। তারা ধর্মীয় রীতিতে বিশ্বাস করত এবং সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করত। এদের ধাতব অস্ত্র ছিল না, রাজাও ছিল না, কিন্তু ছিল চিন্তা, দর্শন এবং শিল্প।

শিয়া রাজবংশ: কিংবদন্তির ইতিহাস

হুয়াংহে নদীভিত্তিক সভ্যতার ধারাবাহিকতায় চীনের প্রথম কিংবদন্তীতুল্য রাজবংশ ছিল ‘শিয়া’। যদিও এই রাজবংশের কোনো লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তথাপি ‘গ্রেট ইউ’-এর বাঁধ নির্মাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাহিনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে চীনের প্রথম রাজা হিসেবে স্মরণ করা হয়।

এই পর্যায়ে আকাশপূজা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ড্রাগনের ধারণা সমাজে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ড্রাগন এখানে ছিল শক্তি, বৃষ্টি ও রাজত্বের প্রতীক। স্বর্গের অনুমোদন ব্যতীত কেউ রাজা হতে পারবে না—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয় "Mandate of Heaven" ধারণা, যা পরবর্তী চীনা রাজতন্ত্রের মৌলিক নৈতিক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

সাং রাজবংশ: লিখিত ইতিহাসের শুরু

খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১০৪৬ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী সাং বা শ্যাং রাজবংশ ছিল চীনের প্রথম প্রমাণিত শাসনব্যবস্থা। এই রাজবংশের হাতে গড়ে ওঠে সংগঠিত প্রশাসন, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও কর ব্যবস্থা। রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করত এবং পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সম্মান জানাতো।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল অরেকেল বোনস—গরুর হাড় বা কচ্ছপের খোলে খোদাই করা প্রতীক, যা আগুনে গরম করে ফাটলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো। এই প্রতীকগুলোই চীনা ভাষার প্রাচীনতম রূপ জিয়াগুয়ানের সূচনা করেছে। পাশাপাশি সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জ প্রযুক্তি এবং যুদ্ধ সংস্কৃতিতে চীনের ভিত মজবুত করে।

ঝৌ রাজবংশ: চীনা দর্শনের অগ্রযাত্রা

খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ সালে ঝৌদের রাজা উ একটি বিশাল যুদ্ধে সাং রাজবংশকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধ ছিল কেবল সামরিক বিজয় নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিষ্ঠা। “Mandate of Heaven” ধারণার ওপর ভিত্তি করে ঝৌ শাসকরা স্বর্গীয় অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে।

ঝৌ রাজবংশ ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম—প্রায় ৮০০ বছর। এই সময়েই গড়ে ওঠে সমাজ শ্রেণীবিন্যাস (শাসক, কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী), ধর্মীয় রীতিনীতির পরিশীলন, এবং ৫ উপাদান তত্ত্ব—আগুন, জল, মাটি, ধাতু ও কাঠ। পাশাপাশি সমাজে শুরু হয় দার্শনিক আত্মানুসন্ধান।

আত্মার জন্ম: কনফিউশনিজম ও টাওইজমের বীজ

ঝৌ যুগের শেষার্ধে চীন বিভক্ত হতে থাকে ছোট ছোট রাজ্যে। যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা আর কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার মধ্যেও জন্ম নেয় চিন্তা, দর্শন এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজ। এখানেই সূচনা হয় চীনের দুই মহান দার্শনিক ধারা—কনফিউশনিজম এবং টাওইজম—যা আগামী হাজার বছর ধরে চীনের সামাজিক কাঠামো, শাসন ও মূল্যবোধ গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।

সময়ের গভীরে গাঁথা চীনের আত্মপরিচয়

হুয়াংহে নদীর পলিমাটি শুধু চাষযোগ্য জমি তৈরি করেনি, বরং ধারণ করেছে এক জাতির ইতিহাস, দর্শন এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। শিয়া থেকে ঝৌ—প্রতিটি রাজবংশ, প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি বিশ্বাস গড়ে তুলেছে এমন এক চীন, যা সময়ের চেয়ে প্রাচীন, কল্পনার চেয়েও বিস্তৃত।

আজকের আধুনিক চীন যখন অর্থনীতিতে, ভূরাজনীতিতে এবং প্রযুক্তিতে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়, তখন তার শেকড় ফিরে যায় সেই প্রাচীন হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক নিরব, অথচ প্রবল, সভ্যতায়।


১৯৩২ সালে জন্ম, ২০০৬ সালে যুবক: টাইম ট্র্যাভেলার 'সার্গেই' এর রহস্য!

২০২৫ অক্টোবর ২৮ ১৮:৫৯:০৭
১৯৩২ সালে জন্ম, ২০০৬ সালে যুবক: টাইম ট্র্যাভেলার 'সার্গেই' এর রহস্য!
ছবিঃ সংগৃহীত

ভূমিকা: সময় পরিভ্রমণ বা টাইম ট্র্যাভেল – কল্পবিজ্ঞানের এই ধারণা বহু বছর ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু যদি বলি, এমন ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল? ২০০৬ সালে ইউক্রেনের কিয়েভের রাস্তায় আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ১৯৩২ সালে জন্মেছিলেন কিন্তু ২০০৬ সালেও ছিলেন যুবক। তার গল্প এতটাই রহস্যময় যে, তিনি কি সত্যিই সময়কে টপকে ভবিষ্যতে এসেছিলেন, নাকি এটি নিছকই এক মিথ? সেই অবিশ্বস্য ঘটনাটি নিয়ে এই প্রতিবেদন।

২০০৬ সালে 'অতীত' থেকে আগমন: ২০০৬ সালে ইউক্রেনের কিয়েভের রাস্তায় পথচারীরা এক অদ্ভুত লোককে দেখতে পায়। তার পরনে ছিল পুরোনো ফ্যাশনের পোশাক, দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন কাউকে খুঁজছেন, কিন্তু কিছুই চিনতে পারছেন না। এই লোকটির নাম ছিল সার্গেই পনমারেনকো। ভীত সার্গেই পুলিশের কাছে পৌঁছান, কারণ তিনি কোনো রাস্তাঘাট চিনতে পারছিলেন না। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এই যুবকের পরনে ছিল নতুন কিন্তু পুরোনো ধরনের পোশাক এবং গলায় ছিল বহু পুরোনো মডেলের একটি ক্যামেরা।

পরিচয়পত্র ও বিস্ময়কর তথ্য: সার্গেই পুলিশকে জানান যে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং তার জন্ম ১৯৩২ সালে। তার দেখানো পরিচয়পত্রটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের, যা দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ! একটি সময়ে ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হলেও, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে প্রায় দুই দশক আগে। পুলিশ যখন তাকে জিজ্ঞেস করে, সে শেষ কোন দিনের কথা মনে করতে পারছে, সার্গেই জানায় যে তিনি সর্বশেষ ১৯৫৮ সালের ২৩ এপ্রিলের কথা মনে করতে পারছেন। অর্থাৎ, তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০৬ সালে এসেছেন, অথচ তার বয়স একটুও বাড়েনি।

ডাক্তারের কাছে বিস্ময়: সার্গেইকে একটি সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ডাক্তার পাবলো কুট্রিকফ তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কীভাবে ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০৬ সালে চলে এলেন, অথচ একটুও বৃদ্ধ হলেন না। তার সর্বশেষ কি মনে আছে? সার্গেই উত্তর দেন যে সেদিন তিনি দিনের বেলায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন এবং ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাও সাথে নিয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি 'বেল শেপের' একটি উড়ন্ত বস্তু দেখতে পান এবং এরপর তার আর কিছুই মনে নেই। তিনি ডাক্তারকে তার ক্যামেরা বাড়িয়ে দিলেন তার তোলা ছবিগুলো দেখার জন্য।

ক্যামেরার রহস্য ও উধাও হয়ে যাওয়া: ক্যামেরাটি ছিল একটি ইয়াসিমা ফ্লেক্স, যার ফিল্ম ১৯৭০ সালের পর থেকে আর তৈরি হয়নি। ফটোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ ভ্যাডিম পয়জনার জানান, ক্যামেরার ফিল্মটি ১৯৫৬ সালে তৈরি করা হয়েছে। ছবিগুলো উদ্ধারের পর দেখা গেল, ছবির রাস্তাঘাট, বিল্ডিং, স্থাপনা সবই পুরোনো ধাঁচের। ছবিগুলোর অনেক বিল্ডিং এখন আর নেই। সার্গেইয়ের সাথে একজন মেয়ের ছবিও দেখা গেল, জানা যায় মেয়েটি তার গার্লফ্রেন্ড। সবচেয়ে রহস্যময় শেষ ছবিতে সার্গেইয়ের কথা মতো একটি 'বেল শেপের' ইউএফও (UFO) বা স্পেসক্রাফট দেখা যায়। সার্গেই জানান, "যখনই আমি বস্তুটির ছবি এবং ক্যামেরার দিকে তাকাই, জানিনা আমি কিভাবে এই সময় চলে আসলাম।"

ডাক্তার পাবলো কুট্রিকফ আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী 'টাইম ডাইলেশন' ছাড়া এমনটা কিভাবে সম্ভব তা ভাবতে লাগলেন। সেই রাতেই শেষ দেখা যায় সার্গেই পনমারেনকোকে নিজ রুমের দিকে যেতে। এরপর দিনই তিনি যেন পুরোপুরি গায়েব হয়ে যান।

গার্লফ্রেন্ডের চিঠি ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত: এদিকে পুলিশ সার্গেইয়ের তৎকালীন গার্লফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করে। ৭০ বছর বয়সী সেই নারী জানান, সার্গেই নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে একটি ছবি পাঠান, যেখানে মধ্যবয়স্ক সার্গেইয়ের ছবি ছিল এবং তার পেছনে ছিল উঁচু দালান। ছবিতে লেখা ছিল, এটি ২০৫০ সালে তোলা!

উপসংহার: কীভাবে সার্গেই পনমারেনকো ১৯৫৮ সাল থেকে হঠাৎ করে ২০০৬ সালে চলে এলেন, তা আজও এক অমীমাংসিত রহস্য। রাশিয়ান একটি ডকুমেন্টারিতে এই পুরো ঘটনাটি তুলে ধরা হলেও এর কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইন্টারনেটে এই ঘটনার উপর অসংখ্য ভিডিও থাকলেও শত প্রমাণের অভাবে অনেকে এটিকে মিথ বা প্রচলিত ঘটনা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে টাইম ট্র্যাভেলের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি জনপ্রিয় ও চমৎকার ঘটনা, যা আজও মানুষের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে: সার্গেই কি সত্যিই সময়ের বাঁধন পেরিয়ে গিয়েছিলেন?


কে এই 'জাহানামের মা'? কোরআনে বর্ণিত ইতিহাসের সেই অভিশপ্ত নারী

ফিচার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৮ ১৮:২৫:৫১
কে এই 'জাহানামের মা'? কোরআনে বর্ণিত ইতিহাসের সেই অভিশপ্ত নারী
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামী ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র রয়েছেন, যাদের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় এবং সতর্ক করে। আজ আমরা এমনই এক নারীর কথা বলব, যাকে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সবচেয়ে অভিশপ্ত নারী বলা হয় – তিনি উম্মে জামিল। তাকে 'জাহান্নামের মা' হিসেবেও পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। তার শয়তানি ও বিদ্বেষ এতটাই প্রকট ছিল যে, স্বয়ং শয়তানও নাকি তা দেখে লজ্জা পেত। এই প্রতিবেদনে উম্মে জামিলের গল্প, তার কর্মকাণ্ড এবং কেন তিনি কোরআনে একমাত্র নারী হিসেবে তার শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে চিরতরে অভিশপ্ত হয়ে রয়েছেন, তা তুলে ধরা হলো।

কে ছিলেন উম্মে জামিল? উম্মে জামিলের আসল নাম ছিল আরওয়া বিনতে হারব। তিনি ছিলেন মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ বংশের নারী, ইসলামের কট্টর বিরোধী এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা আবু লাহাবের স্ত্রী। সামাজিক মর্যাদা, ধন-সম্পদ এবং সৌন্দর্য – সবকিছুই তার জীবনে ছিল। কিন্তু এই উজ্জ্বল আবরণের নিচে লুকিয়ে ছিল এক অন্ধকার আত্মা। যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর একত্বের বার্তা প্রচার শুরু করলেন, তখন উম্মে জামিল ও তার স্বামী আবু লাহাব প্রথম থেকেই সত্যের শত্রু হয়ে ওঠেন।

নবীর প্রতি বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্র: উম্মে জামিলের অন্তরে নবী (সাঃ)-এর প্রতি এতই ঘৃণা ছিল যে, তা আগুনের মতো জ্বলত। তিনি প্রকাশ্যেই নবীর পথে কাটা ছড়াতেন এবং অপমানজনক কথা বলতেন। তার মুখের কথায় এতটাই বিষ ছিল, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপও হার মেনে যেত। তাফসীর অনুযায়ী, তিনি দিনের বেলা মানুষের মধ্যে গীবত ও অপবাদ ছড়াতেন এবং রাতে কাঁটা সংগ্রহ করে নবীর দরজায় ছুড়ে দিতেন। তার এই আচরণ এতটাই নিকৃষ্ট ছিল যে, পবিত্র কোরআনের সূরা আল-মাসাদে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি তার নাম উল্লেখ করে তার শাস্তির ঘোষণা দেন।

কোরআনে বর্ণিত শাস্তি: সূরা আল-মাসাদে আল্লাহ তায়ালা উম্মে জামিল সম্পর্কে বলেন: "তার স্ত্রীও, যে কাঠ বহন করত, তার গলায় থাকবে পাকানো দড়ি।" এখানে 'কাঠ বহন' বলতে মানুষে মানুষে শত্রুতা ও ফিতনার আগুন ছড়ানোকে বোঝানো হয়েছে, যা তিনি নবীর পথে করতেন। আর 'গলায় দড়ি' মানে সেই অহংকারের ফাঁস, যা শেষ পর্যন্ত তাকেই গ্রাস করবে। ইসলামী ব্যাখ্যায় বলা হয়, তিনি দুনিয়ায় যেমন নবীর পথে আগুন ছড়াতেন, পরকালেও সেই আগুনই হবে তার শাস্তি। তার স্বামী আবু লাহাবেরও ধনসম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারেনি; দুজনেই হয়ে গিয়েছিলেন অহংকার ও অবিশ্বাসের প্রতীক।

এক চিরন্তন শিক্ষা: উম্মে জামিলের গল্প শুধু এক নারীর কাহিনী নয়, এটি এক চিরন্তন শিক্ষা যে, যে আগুন অন্যের জন্য জ্বালানো হয়, একদিন সেই আগুন নিজের গলায় দড়ি হয়ে জড়িয়ে যায়। তিনি ইতিহাসে থেকে গেছেন কোরআনের একমাত্র নারী হিসেবে, যার শাস্তি আল্লাহ নিজ মুখে ঘোষণা করেছেন। অহংকার, হিংসা আর বিদ্বেষে পূর্ণ এক আত্মার নাম উম্মে জামিল, যাকে 'জাহান্নামের মা' হিসেবে স্মরণ করা হয়।


পৃথিবীর কক্ষপথের নতুন রহস্য: পৃথিবীর এখন দুটি চাঁদ

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ১৯:২৫:৩৫
পৃথিবীর কক্ষপথের নতুন রহস্য: পৃথিবীর এখন দুটি চাঁদ
এই দ্বিতীয় চাঁদ থাকবে অন্তত ২০৮৩ সাল পর্যন্ত। ছবি/এআই

৪৫০ কোটি বছর ধরে চাঁদ পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পৃথিবীর এখন একটি নয়, দুটি চাঁদ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন এই মহাজাগতিক বস্তু বা গ্রহাণুটি, যা ‘কোয়াজি মুন’ নামে পরিচিত, তা অন্তত ২০৮৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর কাছাকাছি থাকবে।

‘আধা চাঁদ’ এবং রহস্য

শনাক্তকরণ: হাওয়াইয়ের প্যান স্টারস মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেপ্টেম্বর মাসে নতুন এই ‘কোয়াজি মুন’-এর সন্ধান পান। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘২০২৫ পিএন৭’।

অবস্থান: বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে ৫৯ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এই বস্তুটি পৃথিবীর মতো একই কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা নয়।

আকার: ৬২ ফুট বা ছয়তলা অট্টালিকার সমান এই ‘কোয়াজি মুন’ পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা বাকি ছয়টি কোয়াজি মুনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।

পর্যবেক্ষণ ও উৎপত্তি

এই নতুন প্রতিবেশী বেশি দিনের অতিথি নয় এবং খুব শীঘ্রই মহাবিশ্বের কোথাও হারিয়ে যাবে। এর আগে আবিষ্কৃত আরেক বিখ্যাত কোয়াজি মুন ‘কামোওয়ালেওয়া’ পৃথিবী সম্পর্কিত কক্ষপথে প্রায় ৩৮১ বছর ধরে আছে বলে জানা যায়।

দেখা: আমাদের চাঁদের মতো এটিকে খালি চোখে দেখা যাবে না। প্রয়োজন ভালো মানের টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের প্রথম দেখায় এটিকে দেখলে মনে হবে ‘কোয়াজি মুন’ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে।

উৎপত্তি: মাদ্রিদের কমপ্লুতেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-লেখক কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, এই নতুন কোয়াজি মুনটি ছোট, ম্লান এবং পৃথিবী থেকে দেখার তেমন উপযোগী নয়, তাই এতদিন এটি নজরে আসেনি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এগুলো হয়তো প্রধান গ্রহাণু বলয় থেকে এসেছে, কিংবা চাঁদের ওপর আঘাতের ফলে বা বড় কোনো বস্তুর ভেঙে যাওয়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোয়াজি মুনগুলো ‘আর্জুনা’ বিশেষ শ্রেণির মহাজাগতিক বস্তুর অন্তর্গত।

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল


রূপকথা নয় সত্যি! আমাজনের গভীরে মিললো সেই ফুটন্ত জলের নদী

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১২:১৯:৪৪
রূপকথা নয় সত্যি! আমাজনের গভীরে মিললো সেই ফুটন্ত জলের নদী
ছবিঃ সংগৃহীত

রূপকথার গল্পে কিংবা সিনেমায় আমরা প্রায়ই এমন দৃশ্যের দেখা পাই, যেখানে ফুটন্ত জলে কিছু পড়ে গেলে তা মুহূর্তেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু যদি বলি, এমন একটি নদী বাস্তবেও আছে, যার জল এতটাই উত্তপ্ত যে তাতে ভুলবশত কোনো প্রাণী পড়ে গেলেই তা সেদ্ধ হয়ে যায়? হ্যাঁ, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন মহাবনের গভীরে পেরুর অংশে রয়েছে এমনই এক রহস্যময় নদী, যার পানি সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। এই নদীর ভয়ঙ্কর রহস্য নিয়ে বিস্তারিত জানাবো এই প্রতিবেদনে।

আমাজনের গভীরে ফুটন্ত নদী 'সানায় টিম্পি সখা': দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল আমাজন মহাবনের গভীরে অবস্থিত পেরুর অংশে এক আজব ও ভয়ঙ্কর ফুটন্ত জলের নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইনকা জাতির মানুষ এই নদীকে 'সানায় টিম্পি সখা' নামে ডাকে, যার অর্থ 'সূর্যদেবের জলস্রোত'। প্রাচীন ইনকাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যদেবের তাপেই এই নদীর জল সবসময় ফুটতে থাকে। স্প্যানিশ বাহিনী যখন ইনকা সভ্যতা জয়ের অভিযানে নেমেছিল, তাদের বিবরণেও এই নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

আন্দ্রে রুজোর ১২ বছরের অনুসন্ধান: অনেকের কাছে লোককথা বা রূপকথার গল্প মনে হলেও, পেরুর রাজধানী লিমার বাসিন্দা আন্দ্রে রুজু কিশোর বয়স থেকেই এই নদীর রহস্য উন্মোচনের স্বপ্ন দেখতেন। টানা ১২ বছর ধরে তিনি এই নদীর অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগছিলেন। অবশেষে, পেরুর তাপমাত্রার মানচিত্র বা থার্মাল ম্যাপ তৈরির সময় তিনি জানতে পারেন, ছোটবেলায় শোনা সেই ফুটন্ত নদীর অস্তিত্ব সত্যিই আছে। তবে সেই নদীর জল সূর্যদেবের তাপে নয়, বরং মাটির গভীরের প্রাকৃতিক তাপেই ফুটছে।

রহস্যময় নদীটির বৈশিষ্ট্য ও স্থানীয়দের বিশ্বাস: ২০১১ সালের নভেম্বরে আন্দ্রে রুজু পেরুর মধ্য অংশে অভিযান চালিয়ে সেই রহস্যময় ফুটন্ত জলের জলাশয়টি খুঁজে বের করেন। প্রায় ৬ মাইল লম্বা এই নদীটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ঘন সবুজ গাছের প্রাচীর। নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১৬ ফুট এবং এর পানির উষ্ণতা ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত হতে পারে। ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত জলের স্রোতে প্রায়শই বিভিন্ন প্রাণীর সেদ্ধ হয়ে যাওয়া মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।

নদীর কাছাকাছি অবস্থিত মায়ানটুয়াকু গ্রামের পুরোহিতরা এই নদীকে পবিত্র মনে করেন এবং বহিরাগতদের নদীর কাছে যেতে বাধা দেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই নদীর জল সংগ্রহ করে ঠান্ডা করার পর তা কেবলমাত্র ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আন্দ্রে বহু চেষ্টা ও আলোচনার পর একজন পুরোহিতের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে নদীর কাছে যাওয়ার অনুমতি পান।

ভূ-তাপীয় রহস্য উন্মোচন: আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই নদীর ধারে কাছে কোনো আগ্নেয়গিরি বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। তাহলে এই নদীর জল কীভাবে সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে? আন্দ্রে রুজুর ধারণা, মাটির নিচের তীব্র তাপমাত্রার কারণেই এমনটা ঘটে। তার মতে, পেরুর আমাজন জঙ্গলের গভীরে শিলাময় মাটিতে অসংখ্য ফাটল রয়েছে। বৃষ্টির জল সেই ফাটল দিয়ে মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং ভূগর্ভস্থ তাপের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত হয়। এরপর সেই উত্তপ্ত জল আবার মাটির ফাটল দিয়ে উপরে উঠে আসে, যার ফলে নদীর পানি কয়েকশ গুণ বেশি উষ্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, 'জিওথারমাল' বা 'হাইড্রোথারমাল' চক্রের বিক্রিয়াই এই ফুটন্ত নদীর মূল রহস্য।

আমাজনের গভীরে অবস্থিত এই ফুটন্ত জলের নদী 'সানায় টিম্পি সখা' প্রকৃতির এক অসাধারণ বিস্ময়। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের পৃথিবী এখনও অসংখ্য অজানা রহস্যে ভরা। আন্দ্রে রুজুর মতো গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এইসব রহস্যের জট খুলছে এবং আমাদের সামনে পৃথিবীর নতুন নতুন বিস্ময় উন্মোচিত হচ্ছে।


যে দেশে ঘর জামাই দত্তক নিয়ে বানানো হয় কোম্পানির সিইও

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১২:০২:২৫
যে দেশে ঘর জামাই দত্তক নিয়ে বানানো হয় কোম্পানির সিইও
ছবিঃ সংগৃহীত

'ঘর জামাই' শব্দটি বাংলাদেশে শুনলে অনেকে হাসি-ঠাট্টার বিষয় মনে করলেও, বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে এর রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থ ও মর্যাদা। সেখানে বিলিয়নিয়ার পরিবারগুলো রীতিমতো দত্তক নেয় ঘর জামাই, যারা কেবল পরিবারের সদস্যই নন, হয়ে ওঠেন বিশাল কর্পোরেশনের কর্ণধার। এই প্রথার নাম 'মুকোশি', যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাপানের ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

'মুকোশি' – দত্তক ঘর জামাইয়ের প্রথা: জাপানিজ প্রথা 'মুকোশি' (দত্তক ঘর জামাই) অনুযায়ী, কোনো পরিবারে যদি যোগ্য পুত্রসন্তান না থাকে, তাহলে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন উপযুক্ত পুরুষকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বিয়ের পর এই পুরুষ তার স্ত্রীর পদবী গ্রহণ করেন এবং সরাসরি পরিবারের ব্যবসার সিইও বা চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়। জাপানে এই প্রথাটি এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, গত শতাব্দী ধরে সুজুকি, টয়োটা কিংবা কিমান-এর মতো বড় বড় সাম্রাজ্যগুলোতে একের পর এক দত্তক পুত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সুজুকির টানা চারজন প্রধানই ছিলেন দত্তক জামাই। এমনকি গত বছর মারা যাওয়া সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের প্রধান ওসামু সুজুকি নিজেও ছিলেন একজন দত্তক ঘর জামাই।

করের বোঝা কমানো ও উত্তরাধিকার নির্ধারণ: এই প্রথার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। পালিত সন্তানকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে পরিবারগুলোর উপর করের বোঝা অনেকটাই কমে যায়। তাই জাপানের নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রায়ই এই প্রথার মাধ্যমে তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। শুধু জাপানিজ নয়, ভাগ্যের চাকা অনুকূলে থাকলে, আদালতের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করে বিদেশীরাও এই 'দত্তক ঘর জামাই' হওয়ার সুযোগ পেতে পারে, যদিও সেক্ষেত্রে তারা জাপানের নাগরিকত্ব পান না।

প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক জীবনব্যবস্থা: ১৩০০ শতক থেকে চলে আসা এই প্রাচীন প্রথাটি আজও জাপানে সচল রয়েছে, যা দেশটির উন্নত জীবনব্যবস্থা, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এক অসাধারণ প্যাকেজকে তুলে ধরে। জাপান এমন একটি দেশ, যেখানে 'ঘর জামাই' মানেই কেবল পরিবারের সদস্য নন, বরং অফিসের নতুন সিইও বা একজন সম্মানিত নেতা।

জাপানের 'মুকোশি' প্রথা আমাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রমাণ করে যে, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিন্নতা কীভাবে একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি কেবল একটি বৈবাহিক প্রথা নয়, এটি জাপানের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।


এল ডোরাডো থেকে ট্রয়: ইতিহাসের হারানো ৬ শহর, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১০:৩৯:৪৪
এল ডোরাডো থেকে ট্রয়: ইতিহাসের হারানো ৬ শহর, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত
ছবিঃ সংগৃহীত

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বহু নগর গড়ে উঠেছিল শিল্প, স্থাপত্য আর জ্ঞানের উৎকর্ষে। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই শহরগুলোর কিছু হারিয়ে গেছে, কিছু ভেঙে পড়েছে, আবার কিছু মাটির নিচে চাপা পড়েছে। আজও সেসব শহরের ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো। ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা চেষ্টা করছেন রহস্যের জট খোলার, তবুও অনেক প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত।

চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৬টি হারানো শহরের কথা, যেগুলো আজও রহস্যে ঘেরা:

১. আটলান্টিস (Atlantis)

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম আটলান্টিস নিয়ে লিখেছিলেন। তার মতে, এটি ছিল এক সমৃদ্ধশালী নগররাষ্ট্র, যেখানে প্রযুক্তি ও স্থাপত্য ছিল অতুলনীয়। কিন্তু হঠাৎ কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শহরটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।

রহস্য: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ আটলান্টিসের সন্ধান করছে। এটি কি সত্যিই ছিল, নাকি প্লেটোর কল্পনার অংশ—এই রহস্য আজও অমীমাংসিত।

২. মাচু পিচু (Machu Picchu)

পেরুর আন্দিজ পর্বতের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে ইনকা সাম্রাজ্যের বিস্ময়কর শহর মাচু পিচু। ১৫শ শতকে নির্মিত এই শহরটি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের নজরে আসে ২০শ শতকের শুরুতে। পাহাড়ের চূড়ায় পাথর কেটে এমন নিখুঁত স্থাপত্য নির্মাণই এর প্রথম বিস্ময়।

রহস্য: মাচু পিচুর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে—এটি কি রাজপ্রাসাদ ছিল, নাকি ধর্মীয় কেন্দ্র? এত উচ্চতায় পানি সরবরাহ ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

৩. মোহনজো-দারো (Mohenjo-daro)

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার এক কেন্দ্র। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত নগরায়ণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও স্নানাগার।

রহস্য: হঠাৎ কেন শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়? প্রত্নতত্ত্ববিদরা বন্যা, ভূমিকম্প বা আক্রমণের ধারণা করলেও, শহরজুড়ে পাওয়া মানব কঙ্কালগুলোর হঠাৎ মৃত্যুর কারণ আজও নির্দিষ্ট নয়।

৪. পম্পেই (Pompeii)

খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ সালে ইতালির পম্পেই শহর হঠাৎ করেই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে মুহূর্তের মধ্যে শহরটি ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে। আজও ছাইয়ে ঢাকা মানুষের দেহ ও ঘরবাড়ি প্রায় অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।

রহস্য: মানুষ কেন এতদিন ধরে এই বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বসবাস করছিল, যখন তারা বিপদের আভাস পাচ্ছিল—সেই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।

৫. অ্যাঙ্কর ওয়াট (Angkor Wat)

কম্বোডিয়ার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, বরং খেমার সাম্রাজ্যের এক বিশাল নগরকেন্দ্র। কিন্তু ১৫শ শতকের দিকে হঠাৎ করেই শহরটি পতনের পথে যায়।

রহস্য: জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার কারণে কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, নাকি আক্রমণকারীরা ধ্বংস করেছিল—এর পতনের আসল কারণ আজও রহস্যে ঢাকা।

৬. ট্রয় (Troy)

প্রাচীন গ্রিক মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’-এ হোমার ট্রয় নগর নিয়ে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘকাল এটি কল্পকাহিনি ভাবা হলেও, ১৯শ শতকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিখ শ্লিমান আধুনিক তুরস্কে ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।

রহস্য: ট্রোজান যুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল, নাকি তা কেবল কাহিনি? শহরের ধ্বংসের আসল কারণ কী ছিল—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি।


প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে

২০২৫ অক্টোবর ২১ ২০:৪৬:০১
প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে
ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে এই বিশাল মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণবন্ত সত্তার টিকে থাকার পেছনে রয়েছে এক অপরিহার্য উপাদান – পানি। 'পানির অপর নাম জীবন' – এই প্রবাদ বাক্যটি তাই কেবল কথার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে সুগভীর বৈজ্ঞানিক ও মহাজাগতিক সত্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে পানি আমাদের অস্তিত্বের মূল, সেই পানির জন্ম ঠিক কখন, কীভাবে হয়েছিল এই অনন্ত মহাবিশ্বে? সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের এক চমকপ্রদ উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

বিগ ব্যাং ও পানির প্রথম কণা: আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল ঘটনা 'বিগ ব্যাং' বা মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরেই প্রথম পানির কণা তৈরি হয়েছিল। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে একটি অতি ক্ষুদ্র, উত্তপ্ত এবং ঘন বিন্দু থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়। এরপর এই মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হতে হতে বিভিন্ন কণার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি।

কোরআনের অবাক করা ইঙ্গিত: বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারের বহু শতাব্দী আগেই পবিত্র কোরআনে পানির উৎপত্তির এক ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?"। এই আয়াতে 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল' (অর্থাৎ একীভূত অবস্থা) এবং 'অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম' (অর্থাৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং) – এই দুটি ধাপের পরপরই 'প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম' (অর্থাৎ পানির উৎপত্তি) – এই ধারাবাহিকতা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এটি নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে প্রথম দিকেই পানির অস্তিত্ব ছিল।

সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও পানির জন্ম প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে আরও গভীরের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের মতে, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রগুলো ধ্বংস হওয়ার পর যে 'সুপারনোভা' বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তারই ফলস্বরূপ পানির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন ঠান্ডা হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি তৈরি হয়। আমরা জানি, পানি রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত।

বিগ ব্যাংয়ের শুরুর দিকে যখন মহাবিশ্ব শীতল হতে শুরু করে, তখন হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মতো হালকা উপাদানগুলো তৈরি হয়। প্রায় ১০ কোটি বছর পর এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে একত্রিত হয়ে নক্ষত্রে পরিণত হয়। এই নক্ষত্রগুলো যখন তাদের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে বিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে যায়, তখন তাপমাত্রা প্রায় ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর অণু, অর্থাৎ পানির অণু তৈরি করে।

উপসংহার: পানির এই মহাজাগতিক সৃষ্টি প্রক্রিয়া, যা সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে শুরু হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিলনে শেষ হয়, তা অত্যন্ত দীর্ঘ ও জটিল একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এই বিশাল মহাজাগতিক ঘটনাপ্রবাহ কোনো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার নির্দেশ ছাড়া ঘটা কি সম্ভব? আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্যগুলো উন্মোচন করছে, তখন কোরআনের হাজার বছর আগের আয়াতগুলো যেন সেই রহস্যের চাবি হয়ে ধরা দিচ্ছে।


পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস

২০২৫ অক্টোবর ২১ ২০:৩৫:৫৯
পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস
ছবিঃ সংগৃহীত

নীল নদের দেশ মিশর, যেখানে যুগে যুগে রাজত্ব করেছেন ফারাওরা। তাদের গৌরবময় সাম্রাজ্য, বিশাল পিরামিড আর রহস্যময় মমিগুলো আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের বিস্ময় কেড়ে নেয়। কিন্তু এই ৫০০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে আছে এক অপ্রত্যাশিত সংযোগ, যা ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী আর ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলে। এটি শুধু ফারাওদের উত্থান-পতনের গল্প নয়, এটি এক মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের দম্ভ, পতন এবং মুসলিমদের বিজয়ের এক অসাধারণ আখ্যান।

নীল নদের দান ও ফারাওদের উত্থান: প্রায় ৫০০০ বছর আগে, যখন পৃথিবীতে জলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, তখন নীল নদের অফুরন্ত জলরাশি মিশরকে দিয়েছিল এক অতুলনীয় শক্তি। এই নদের আশীর্বাদে মিশর হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে কিং নরমালের মতো নেতার নেতৃত্বে মিশরে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম সুসংগঠিত রাজতন্ত্র। হাজার বছর ধরে মিশর ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি। এই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে ফারাওরা নিজেদেরকে কেবল রাজা নয়, বরং 'খোদা' হিসেবে দাবি করতে শুরু করে। তারা এমন এক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে প্রজারা বিশ্বাস করত যে ফারাওদের দাসত্ব করলেই কেবল পরকালে মুক্তি মিলবে।

মমি আর পিরামিডের রহস্য: ফারাওদের এই খোদা হওয়ার ধারণার একটি অদ্ভুত পরিণতি ছিল মমি তৈরির প্রচলন। তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও যদি শরীর অক্ষত থাকে, তবে তাদের 'খোদা' সত্তা টিকে থাকবে। তাই ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ থেকে অত্যন্ত নিপুণভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে (কেবল হৃদপিণ্ড বাদে) বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত করা হতো। এরপর সেই মমির ওপর তৈরি হতো বিশাল সব পিরামিড। খুফুর মতো ফারাওদের পিরামিডগুলো এত বিশাল ছিল যে, প্রায় ৩৫০০ বছর ধরে এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম স্থাপনা। কিন্তু এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ মিশরের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়।

হযরত ইউসুফ (আঃ) ও বনি ইসরাইলের আগমন: মিশরের অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে এক দাস হিসেবে আগমন ঘটে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর। তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করে তোলেন। এরপর তার বংশধর, অর্থাৎ বনি ইসরাইলরা মিশরে বসবাস শুরু করে এবং এক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

এক নতুন ফারাওয়ের অত্যাচার ও হযরত মূসা (আঃ)-এর আবির্ভাব: কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! এক নতুন ফারাওয়ের আগমনের সাথে সাথে বনি ইসরাইলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এই ফারাও তাদের দাস বানিয়ে নেয় এবং জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, তার সাম্রাজ্য বিনাশকারী এক বনি ইসরাইলী শিশুর জন্ম ঠেকানোর জন্য সমস্ত নবজাতক পুত্রসন্তানকে হত্যার নির্দেশ দেয়। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেই জন্ম নেন হযরত মূসা (আঃ), যিনি অলৌকিকভাবে ফারাওয়ের ঘরেই পালিত হন।

ফারাও রামসেসের পতন ও মিশরের অন্ধকার যুগ: নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে হযরত মূসা (আঃ) ফারাও রামসেসের কাছে বনি ইসরাইলকে মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফারাও রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বনি ইসরাইলের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় লোহিত সাগরে ফারাও রামসেস ও তার বিশাল বাহিনী ডুবে যায়, যা ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনার পর মিশর আর কখনও তার পুরনো শক্তি ফিরে পায়নি এবং প্রবেশ করে এক দীর্ঘ অন্ধকার যুগে।

রাসূল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও মুসলিমদের বিজয়: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুসলিমরা একদিন মিশর জয় করবে এবং তিনি সেখানকার মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। রোমানদের ৬০০ বছরের শাসনের পর, হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের সময় সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত হয়। মুসলিমরা মিশর জয় করে এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

উপসংহার: ফারাওদের মিশর, তার সমৃদ্ধি, ধর্মীয় উন্মাদনা, এবং পতনের গল্প আজও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মের এই সমন্বিত আখ্যান প্রমাণ করে, মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার পেছনে রয়েছে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যা কখনো কখনো হাজার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।


জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?

২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৯:০২:১৯
জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?
ছবিঃ সংগৃহীত

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। আমাদের জানার বাইরেও রয়েছে এক বিশাল ও অদৃশ্য জগৎ। যুগ যুগ ধরে ধর্মগ্রন্থগুলো, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন, জ্বীন নামক এক অদৃশ্য জাতির কথা বলে আসছে, যারা আগুন থেকে তৈরি এবং যাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনব্যবস্থা। এতদিন এই বিশ্বাসটি মূলত আধ্যাত্মিক জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু যুগান্তকারী তত্ত্ব এই অদৃশ্য জগতের রহস্যের দিকে নতুন করে আঙুল তুলেছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স, প্যারালাল ইউনিভার্স এবং অ্যান্টিম্যাটারের মতো জটিল ধারণাগুলো কি তবে জ্বীনের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হতে চলেছে?

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্বীন হলো এক বিশেষ সৃষ্টি, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের মতোই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" এই অদৃশ্য সৃষ্টিকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মনে অবিশ্বাস থাকলেও বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক কিছু তত্ত্ব নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

অ্যান্টিম্যাটার ও অদৃশ্য জগৎ: পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বে প্রতিটি কণার (Particle) বিপরীতে একটি প্রতিকণা (Anti-particle) রয়েছে। যেমন, ইলেকট্রনের বিপরীতে রয়েছে পজিট্রন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের দৃশ্যমান জগৎ যদি পদার্থ (Matter) দিয়ে তৈরি হয়, তবে এর সমান্তরালে প্রতিপদার্থ (Anti-matter) দিয়ে তৈরি একটি জগৎ থাকাও সম্ভব। এই প্রতিপদার্থের জগৎ আমাদের কাছে অদৃশ্য। পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বিপরীতে যদি সমসংখ্যক 'প্রতি-মানুষ' থাকে, যারা অদৃশ্য, তবে সেই ধারণাকে কি জ্বীনের অস্তিত্বের সাথে তুলনা করা চলে?

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অদ্ভুত জগৎ: কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগৎ আরও রহস্যময়। এর 'সুপারপোজিশন' তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে এবং একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। আবার 'কোয়ান্টাম টানেলিং' তত্ত্ব বলছে, একটি কণা যেকোনো বাধা ভেদ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। এই ধারণাগুলো যদি সত্যি হয়, তবে এমন এক সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব, যারা আমাদের মাত্রার সীমাবদ্ধতা মানে না এবং যেকোনো বাধা অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে। কোরআনে বর্ণিত জ্বীনদের অদৃশ্য থাকার এবং বিভিন্ন রূপ ধারণ করার ক্ষমতার সঙ্গে এই ধারণাগুলোর অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব: আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো 'প্যারালাল ইউনিভার্স' বা সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা। আমাদের মহাবিশ্বের মতোই আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব একইসাথে বিদ্যমান, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। পবিত্র কোরআনে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানের 'মাল্টিভার্স' তত্ত্ব যেন কোরআনের এই ধারণারই প্রতিধ্বনি। যদি সত্যিই সমান্তরাল কোনো জগৎ থেকে থাকে, তবে সেখানে জ্বীনের মতো বুদ্ধিমান مخلوق বসবাস করতেই পারে।

শেষ কথা: যদিও বিজ্ঞানীরা জ্বীনের অস্তিত্ব নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে পদার্থবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী তত্ত্বগুলো আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা এতদিন কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল, তা এখন বিজ্ঞানের আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে। ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই মেলবন্ধন হয়তো একদিন অদৃশ্য জগতের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করবে।

পাঠকের মতামত:

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাকে... বিস্তারিত